
থাইরয়েড মানুষের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হরমোন উৎপাদন করে থাকে । থাইরয়েড যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমন উৎপাদন করে বা পর্যাপ্ত হরমন উৎপাদনে অক্ষম হয় তাকে হাইপো–থাইরয়েড বা হাইপোথাইরয়ডিজম ( Hypothyroidism) বলে । অনেক সময় এই সমস্যা সঠিক সময়ে সনাক্ত করা সম্ভব হয়না । এমন কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে আপনি ধারনা করতে পারবেন যে আপনি হাইপোথাইরয়ডিজম এ ভুগছেন এবং ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে পারবেন ।
হাইপোথাইরয়ডিজম এর ক্ষেত্রে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় :
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ।
- শরীরে শীত শীত অনুভব হওয়া ।
- অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভোগা ।
- বারবার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ।
- বিষণ্ণতায় ভোগা ।
- শরীরের পেশী ও জয়েন্ট গুলোতে দূর্বলতা ।
- বিপাকীয় ক্রিয়া বা হজমে সমস্যা হওয়া ।
- উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ।
- ওজন বেড়ে যাওয়া ।
চিকিৎসা
হাইপো–থাইরয়েড সনাক্ত হওয়ার পর নিয়মিত ডাক্তারের ফলো আপে থাকতে হয় । ডাক্তার TSH (Thyroid stimulating hormone) এর রিপোর্ট দেখে ওষধের মাত্রা ঠিক করে দেন । হাইপো-থাইরয়েড চিকিৎসায় ডাক্তার মূলতঃ থাইরক্সিন জাতীয় ওষধ ব্যাবহার করেন ।
এছাড়া কিছু খাবার খাওয়া বাড়িয়ে দিলে এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চললে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় । নিচে সংক্ষেপে কোন খাবার গ্রহন করবেন আর কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো ।
আরো পড়ুন হাইপার-থাইরয়েড : লক্ষণ ও চিকিৎসা
কোন কোন খাবারে উপকার পাওয়া যায়
১ । আয়োডিনযুক্ত খাবার :
হাইপো-থাইরয়েড রুগিরা শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিতে ভোগেন । তাই আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহনে তারা ভালো উপকার পেতে পারেন । সামুদ্রিক মাছ যেমন – লইট্রা , কোরাল , টুনা প্রভৃতি । এছাড়া চিংড়ি মাছেও মাছেও প্রচুর আয়োডিন থাকে । বর্তমানে সামুদ্রিক শৈবাল খাবার হিসাবে জনপ্রিয় হচ্ছে । সামুদ্রিক শৈবালেও প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে ।
২ । আমিষযুক্ত খাবার :
থাইরয়েড হরমোন তৈরীতে টাইরোসিন প্রোটিনের দরকার হয় । আর টাইরেসিন প্রোটিন পাওয়া যায় গরুর মাংস , মুরগির মাংস , মাছ , ডিম , কলা , মিষ্টি কুমড়ার বিচি ইত্যাদিতে ।
এছাড়াও যেসব খাবারে জিংক রয়েছে , যেমন – সামুদ্রিক খাবার , কেশুনাট , ওটমিল , এবং ডেইরি পণ্য ।
সেই সাথে বিশুদ্ধ পানি , ফলমূল ও শাকসবজি নিয়মিত খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায় ।
কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
১ । কফি :
কফিতে থাকা ক্যাফেইন থাইরয়েড হরমোনকে ব্লক করে । তাই আপনি যদি হাইপো-থাইরয়েডের রুগি হন , তবে কফি পান করার অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করা জরুরী ।
২ । গয়ট্রোজেনাস জাতীয় খাবার :
ব্রকলি , ফুলকপি , বাধাঁকপি , শিম , পালংশাক , সয়াসস , চিনাবাদাম প্রভৃতি গয়ট্রোজেনাস জাতীয় খাবার । থাইরয়েড সমস্যা থাকলে এগুলো না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে । খেলেও অনেক তাপে রান্না করে খেতে হবে ।
৩ । চিনিযুক্ত খাবার :
থাইরয়েড সমস্যা থাকলে চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভাল । কারণ , শরীরে হরমোনের যে সামাঞ্জস্য দরকার চিনি তাতে বাধা সৃষ্টি করে । তাছাড়া চিনি ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ি ।
এছাড়াও টিউবওয়েলের পানি ফুটিয়ে পান করা উচিত । কারণ , পানিতে থাকা ফ্লোরিন ও ক্লোরিন শরীরে আয়োডিন পরিশোষণে বাধা সৃষ্টি করে ।
তাছাড়া পাস্তুরিত দুধ ও পনির এবং দই এড়িয়ে যেতে হবে । ফলের মধ্যে , পীচ ও স্ট্রবেরি না খাওয়া উচিত ।
হাইপো-থাইরয়েড রুগি উপরের বিষয়গুলো মেনে চললে এবং নিয়মিত ডাক্তারের ফলোআপে থাকলে সম্পূর্ণ সুস্থ্য জীবন যাপন করতে পারবেন ।
আরো পড়ুন থাইরয়েড কি ? থাইরয়েড সমস্যা কত প্রকার ও কি কি ।