Image default
জীবনী

স্বামী বিবেকানন্দ এর জীবনী

স্বামী বিবেকানন্দ এর জীবনী

স্বামী বিবেকানন্দ সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ছিলেন কেবল এটুকু বললেই তাঁর ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না । স্বামী বিবেকানন্দ তার কাজের জন্য ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন । তিনি ভারতবর্ষের বেদ- বেদান্ত, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ভারতবর্ষের গৌরবময় ইতিহাসকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গৌরবের সাথে প্রচার করেন । আজ আমরা স্বামী বিবেকানন্দ এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো ।

স্বামী বিবেকানন্দ কে ছিলেন ?

স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য । তার পিতার দেওয়া নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

এক নজরে
নামনরেন্দ্রনাথ দত্ত বা স্বামী বিবেকানন্দ
জন্ম১২ জানুয়ারি ১৮৬৩
জন্মস্থানকলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
পিতামাতা বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবী
জাতীয়তা ভারতীয়
প্রতিষ্ঠাতারামকৃষ্ণ মিশন, রামকৃষ্ণ মঠ
গুরুশ্রী রামকৃষ্ণ
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত, রাজযোগ
সাহিত্য কর্মরাজযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ, মদীয় আচার্যদেব, ভারতে বিবেকানন্দ
বিশিষ্ট শিষ্য অশোকানন্দ, বিরজানন্দ, পরমানন্দ, আলাসিঙ্গা পেরুমল, অভয়ানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, সদানন্দ
বানিওঠো, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না
মৃত্যু৪ জুলাই ১৯০২
স্বামী বিবেকানন্দ এর জন্ম :

১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি উত্তর কলকাতার সিমুলিয়া পল্লীতে স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম গ্রহন করেন ।

স্বামী বিবেকানন্দ এর পিতামাতা :

স্বামী বিবেকানন্দ এর পিতার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত । তিনি হাইকোর্টের বিখ্যাত অ্যাটর্নি ছিলেন । স্বামী বিবেকানন্দ এর মায়ের নাম ছিল ভূবনেশ্বরী দেবী । স্বামী বিবেকানন্দের মায়ের দেওয়া নাম ছিল বীরেশ্বর, আর ডাক নাম ছিল বিলে

আরো পড়ুন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
স্বামী বিবেকানন্দ এর শৈশবকাল :

স্বামী বিবেকানন্দ এর স্কুলে নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ । তিনি মেট্রোপলিটন স্কুল হতে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন । স্বামী বিবেকানন্দ সেখান থেকে স্কটিশ চার্চ কলেজে যান । এখান থেকে তিনি  এফ এ পাশ করে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে বি এ তে ভর্তি হন । এই কলেজ থেতেই দর্শনশাস্ত্র নিয়ে তিনি স্নাতক পাশ করেন ৷

স্বামী বিবেকানন্দ এর শিক্ষাজীবন :

স্বামী বিবেকানন্দ কলেজে পড়ার সময় পাশ্চাত্য দর্শনের সংস্পর্শে এসে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহবাদী হয়ে ওঠেন । ব্রাহ্ম ধর্মের সংস্পর্শে এসেও তিনি প্রভাবিত হন । ঠিক এ সময় প্রতিবেশী সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণর সাথে স্বামী বিবেকানন্দ  এর যোগাযোগ হয় । বিবেকানন্দ তাঁকে দেখে অভিভূত হন ।

স্বামী বিবেকানন্দ এর রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করা :

১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণের পরে বরানগরে যে রামকৃষ্ণ মঠ স্থাপিত হয় স্বামী বিবেকানন্দ সেই মঠের সন্ন্যাসী সংঘের প্রথম পরিচালক হন । এই দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই স্বামী বিবেকানন্দ  ও তাঁর সহকর্মীরা সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । আর এই সময় থেকেই তার নাম রাখা হয় বিবেকানন্দ । মঠের দায়িত্ব গ্রহনের পর তিনি ভারত ভ্রমণে বের হলেন । ভ্রমণ করলেন হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা । তার সংস্পর্শে সুপ্ত ভারত জেগে উঠলো ৷ তার প্রভাবে ভারত জুড়ে নবজাগরণের সৃষ্টি হল ।

আরো পড়ুন

মাইকেল মধুসূদন দত্তের সংক্ষিপ্ত জীবনী
স্বামী বিবেকানন্দ এর আমেরিকায় ভ্রমণ :

১৮৯৩ সালে আমেরিকার চিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বমহাধর্ম সম্মেলনে বিবেকানন্দ গেলেন ভারতের বেদান্তধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে । যদিও তিনি সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন না । স্বামী বিবেকানন্দ জনৈক আমেরিকাবাসীর সহায়তায় মাত্র ৫ মিনিট বক্তৃতা দেবার সুযোগ পান । তখন স্বামী বিবেকানন্দ এর পরিধানে ছিল গৈরিক বস্ত্র ও গৈরিক পাগড়ি । স্বামী বিবেকানন্দ প্রত্যেককে ‘ আমেরিকাবাসী ভাই বোন ‘ বলে সম্বোধন করলেন । আর তাই উদ্বেলিত করতালিতে অভিনন্দিত হলেন প্রাচ্যের এই সন্ন্যাসী ।

স্বামী বিবেকানন্দ এর রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা :

স্বামী বিবেকানন্দ ক্লান্তিহীন কর্মী ছিলেন । ১৮৯৭ সালে তিনি মানবসেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন ৷ ১৮৯৯ সালে গঙ্গার পশ্চিম তীরে প্রতিষ্ঠা করা হয় পীঠস্থান বেলুড় মঠ ।

মাসিক পত্রিকা প্রকাশ :

এরপর শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষা ও বেদাত্ত প্রচারের উদ্দেশ্যে, স্বামী বিবেকানন্দ বাংলায় ‘উদ্বোধন’ এবং ইংরাজিতে ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ নামে দুটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ।

স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিতীয়বার আমেরিকা যান , ১৮৯৯ সালে । সেখানে বেদাত্ত শিক্ষার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে ফিরেন । দেশে ফিরে তিনি রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম , ব্রহ্মচর্যাশ্রম , রামকৃষ্ণ হোম ও রামকৃষ্ণ পাঠশালা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন ।

আরো পড়ুন

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
স্বামী বিবেকানন্দ এর সাহিত্যে অবদান

স্বামী বিবেকানন্দ গৈরিক বসনধারী সন্ন্যাসী হলেও তিনি বাস্তবধর্মী প্রেমিক পুরুষ ছিলেন । তিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রবাদী বলে দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করতেন । সাহিত্যেও তাঁর অসাধারণ দখল ছিল । মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করাকে স্বামী বিবেকানন্দ অধিক গুরুত্ব দিতেন । স্বামী বিবেকানন্দ এর উল্লেখযোগ্য রচন হলো – পরিব্রাজক , ভাববার কথা , প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্য , বর্তমান ভারত প্রভৃতি, এই রচনা গুলোর মাধ্যমে তিনি উজ্জ্বল দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখে গেছেন । ইংরাজিতে তিনি লিখেছেন , কর্মযোগ , রাজযোগ , ভক্তিযোগ ও জ্ঞান যোগ ইত্যাদি । হিন্দু ধর্মের পুনরুদ্ধার , পুনরুজ্জীবন , সমাজ সংস্কার এবং মানব সেবার জন্য তিনি ভারতবাসীর কাছে চির অমর হয়ে থাকবেন ।

স্বামী বিবেকানন্দ এর মৃত্যু :

স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগদান করে বিশ্ববাসীকে বৈপ্লবিক চিন্তা ভাবনায় মুগ্ধ করেন । তিনি ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েই দেশে ফেরেন । ১৯০২ সালের ৪ ঠা জুলাই রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় স্বামী বিবেকানন্দ মুত্যু বরণ করেন ।

Related posts

পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবনী

jibondharaa

ফররুখ আহমদের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

Leave a Comment