Image default
জীবনী

বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর জীবনী

বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর জীবনী

স্টিফেন হকিং আধুনিক বিশ্বের মহাজাগতিক এবং পদার্থবিদদের মধ্যে একজন । ব্লাকহোল, মহাজাগতিক নানা তত্ত্ব, বহির্বিশ্বের প্রাণ সহ নানা ক্ষেত্রকে নিজের বিজ্ঞান বোধ দিয়ে আলোকিত করেছেন পদার্থবিদ্যায় এযুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং । তিনি জীবনের তিন চতুর্থাংশ সময় অসুস্থতা নিয়ে কাটিয়েছেন । তা সত্ত্বেও তাঁর বিজ্ঞান চেতনা সারা বিশ্বকে আলোকিত  করতে সক্ষম হয়েছে । স্টিফেন হকিং যিনি নির্বাক ছিলেন, তা সত্বেও পদার্থবিদ্যার নানা জটিল বিষয় সফলভাবে সাধারণ মানুষকে বলার চেষ্টা করেছেন । তাঁর তত্ত্বগুলি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান এবং আপেক্ষিকতার মধ্যে সংযোগের গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে । আজকে আমরা তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে সংক্ষেপে জেনে নেব ।

একনজরে
জন্ম৮ জানুয়ারী, ১৯৪২
জন্মস্থানঅক্সফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড
পড়ালেখাবিএ, ইউনিভার্সিটি কলেজ, অক্সফোর্ড, ১৯৬২

পিএইচডি, ট্রিনিটি হল, কেমব্রিজ,১৯৬৬

বিবাহজেন ওয়াইল্ড, ১৯৬৫ থেকে ১৯৯১

এলেন মেসন, ১৯৯৫ থেকে ২০০৬

সন্তানরবার্ট, জন্ম ১৯৬৭

লুসি, ১৯৬৯

টিমোথি, ১৯৭৯

 

মৃত্যুইংল্যান্ডের কেমব্রিজে, ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু হয় ।
স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ডে জন্ম স্টিফেন হকিংয়ের । হকিংয়ের পিতার নাম ছিল ফ্রাঙ্ক হকিং । তিনিও গবেষক ছিলেন । মায়ের নাম ছিল ইসাবেল হকিং, যিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ।  তারা উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন ।

স্টিফেন হকিংয়ের বাল্যকাল

প্রথম জীবনে হকিং সেন্ট অ্যালবার স্কুলে পড়াশুনা করেন । সে সময় থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি হকিংয়ের দারুণ আগ্রহ ছিল । তার পিতা ফ্রাঙ্ক হকিং চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক । তবে বাবার কথা না শুনে তিনি গণিত পড়তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান । তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসময় আলাদা করে গণিতের কোর্স না থাকায় তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ।

আরো পড়ুন

আলফ্রেড নোবেল এর জীবনী
স্টিফেন হকিংয়ের শিক্ষাজীবন

স্টিফেন হকিংয়ের বাবা-মা অক্সফোর্ডে পড়েছিলেন । তার বাবা – মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলেও অক্সফোর্ডে ডাক্তারি পড়বে । কিন্তু স্টিফেন হকিংয়ের ইচ্ছা ছিল গণিতে পড়ার । যেহেতু সে সময় অক্সফোর্ডে গণিত ছিলনা সেহেতু তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন । তিনি অক্সফোর্ড থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করেন । এরপর পিএইচডি করার জন্য কেমব্রিজে চলে যান । পিএইচডি করার সময় তার সুপারভাইজার ছিলেন আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বের জনকদের একজন । নাম ডেনিস সিয়ামা ।

অসুখে আক্রান্ত

পিএইচডি করার সময় হকিং নিজের অসুখের কথা জানতে পারেন। কেমব্রিজে সেই সময় পড়ছিলেন তিনি। এর আগে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন তিনি । অনেক ধরনের পরীক্ষার পর জানা গেল তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । স্নায়ুর এই রোগ মানুষের শরীর ধীরে ধীরে অবশ করে ফেলে । সেইসময় ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই রোগ হলে রোগী খুব বেশি হলে ২-৩ বছর বা সর্বাধিক পাঁচ বছর বাঁচে । অথচ সেই ধাক্কা সামলে তার পরের পাঁচ দশক হকিং জীবন পেয়েছিলেন ।

মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা

তিনি যখন আবার গবেষণায় ফিরেছিলেন তখন তিনি ঠিকমত কলমটাও ধরতে পারতেন না । এমনকি তখনো তার ডক্টরাল থিসিসের বিষয় ঠিক হয়নি । তখন ঠিক করা হয় তিনি মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কাজ করবেন ।  তিনি তার থিসিস লেখা শুরু করলেন । ১৯৬৫ সালে লিখলেন Properties of extending universe অথবা “প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্যগুলো”। ১৯৬৬ সালে সেটাকে অনমোদন দেওয়া হলো ।

আরো পড়ুন

স্যার আইজাক নিউটনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা

স্টিফেন হকিং পিএইচডি শেষে কেম্ব্রিজে পেনরোজের সাথে কাজ শুরু করলেন। ১৯৭০ সালে পেনরোজ এবং তিনি মিলে প্রমাণ দেখালেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কোনো এক অনন্যতা থেকেই শুরু হয়েছে । একই বছরে হকিং কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে আরো বিস্তৃত কাজ শুরু করলেন । তিনি প্রস্তাব করলেন যে, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন  সময়ের সাথে ছোটো হয় না । অন্যান্য গবেষক যারা ছিলেন, তাদের সাথে মিলে কৃষ্ণগহ্বরের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে চারটা নীতি উত্থাপন করলেন ১৯৭০ সালে । ঘটনা দিগন্ত ছোটো না হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা রাখলেন দ্বিতীয়তে । হকিং ১৯৭৩ সালে জর্জ এলিসের সাথে যুগ্মলেখক হিসেবে প্রথম বই প্রকাশ করলেন । বইটির নাম – The Large Scale Structure of Space-Time.

একই বছরে তিনি খেয়াল করলেন যে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তার দেয়া দ্বিতীয় নীতিটা ভুল । কারণ কিছু রাশিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছিলো যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে ঘূর্ণনরত কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণা নির্গত হয় । হকিং গবেষণা করে দেখলেন কাহিনী সত্য। ১৯৭৪ সালে তিনি  বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে উবে না যায় ।” এই বিকিরণকে এখন হকিং বিকিরণ বা Hawking Radiation বলা হয় ।

১৯৮১ সালে তিনি দাবি করেন বিকিরণ করতে করতে যখন কৃষ্ণগহ্বর উবে যায়, তখন এর ভেতরের তথ্যগুলোও হারিয়ে যায় । কিন্তু তথ্য তো কখনো হারিয়ে যায় না । তাই, এটা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান জগতে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে যায় । তথ্যসংক্রান্ত এই বৈপরীত্যের নাম Blackhole Information Paradox.

বাকশক্তি হারিয়ে ফেলা

১৯৮৫ সাল। হকিং তখন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন । ভয়াবহ শারীরিক অবস্থায় তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো । এক পর্যায়ে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয় । পরিচ্ছিতি এতটায় খারাপ হয় যে তিনি কোমায় চলে যান । এক পর্যায়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না । তাই, হকিং এর শ্বাসনালী কেটে টিউব বসানো হয় । ALS এর জন্য এমনিতেই তার কথা জড়িয়ে যেতো, এবার তিনি সম্পূর্ণরুপে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন ।

আরো পড়ুন

জরায়ু মুখের ক্যান্সার কেন হয় ? এর লক্ষণ , প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা ।
পারিবারিক জীবন

স্টিফেন হকিং ১৯৬৫ সালে জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । যদিও তিনি জেন ওয়াইল্ডকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তবুও দাম্পত্য জীবনে বেশ অসুখী ছিলেন তিনি । তাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিলো ঠিকই, কিন্তু একসাথে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল । ১৯৯০ সাল থেকে হকিং তার এক নার্সের সাথে থাকা শুরু করেন । এ কারণে ১৯৯৫ সালে জেইনের সাথে তার ডিভোর্স হয়ে যায় । এরপর সেই নার্সকে বিয়ে করেন হকিং । ২০০৬ সালে সেই সম্পর্কেরও ইতি টানেন তিনি । হকিং জেইনের সাথে পুনরায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন ।

স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু

স্টিফেন হকিং ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ মাসে ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে মৃত্যুবরণ করেন।

Related posts

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

দার্শনিক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনার জীবনী

jibondharaa

শহীদুল্লা কায়সারের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

Leave a Comment