
সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার শুধু একজন লেখকই ছিলেন না ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক । যদিও তিনি সাহিত্যিক হিসাবে প্রচুর সম্মাননা পেয়েছেন তবু তিনি একজন রাজনৈতীক ব্যাক্তিত্বও ছিলেন । শহীদুল্লা কায়সারের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আমাদের এই আয়োজন ।
শহীদুল্লা কায়সারের সংক্ষিপ্ত জীবনী
একনজরে
জন্ম | ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭
|
শিক্ষা | বিএ (অর্থনীতি) |
পেশা | লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক |
দাম্পত্য সঙ্গী | পান্না কায়সার |
পুরস্কার | আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯) একুশে পদক (১৯৮৩) স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮)
|
উল্লেখযোগ্য রচনা | সারেং বউ (১৯৬২), রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২) |
মৃত্যু | ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে তার বাসা থেকে অপহরন করা হয় । তারপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি । |
জন্ম
১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার মাজুপুর গ্রামে শহীদুল্লা কায়সার জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ এবং মাতার নাম ছিল সৈয়দা সুফিয়া খাতুন ৷
শিক্ষাজীবন
শহীদুল্লা কায়সার প্রথমে সরকারি মডেল স্কুল এবং পরে কলকাতা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন । তিনি এখান থেকে ১৯৪২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে ১৯৪৬ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন । পরবর্তীতে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কিন্তু মাস্টার্স শেষ করেননি । ১৯৪৭ সালে শহীদুল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্সে ভর্তি হন । তবে এখানেও তিনি মাস্টার্স কমপ্লিট করেননি ।
কর্মজীবন

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে শহীদুল্লা কায়সার সাংবাদিকতা শুরু করেন । সেটি ছিল ১৯৪৯ সাল । পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে দৈনিক সংবাদ-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন ।
রাজনৈতীক জীবন
১৯৪৭ সালে ২০ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন । ১৯৫১ সালে পার্টির সদস্য হন। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে ১৯৫২ সালের ৩ জুন তিনি গ্রেফতার হন । এ সময় তিনি সাড়ে তিন বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন । ১৯৫৫ সালে শহীদুল্লা কায়সার পুনরায় গ্রেফতার হন । কয়েক বছর পর মুক্তি পান । ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার পর ১৪ অক্টোবর তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় । জননিরাপত্তা আইনে তাকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আটক রাখা হয় ।
আরো পড়তে ক্লিক করুন জহির রায়হানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ব্যক্তিগত জীবন

শহীদুল্লা কায়সার ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পান্না কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সার নামে দুইজন সন্তান রয়েছে। পান্না কায়সার পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং সপ্তম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য (১৯৯৬ – ২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শমী কায়সার একজন বাংলাদেশী টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী। শহীদুল্লা কায়সারের ভাই জহির রায়হান ছিলেন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং বুদ্ধিজীবি ।
সাহিত্যজীবন
শহীদুল্লা কায়সার বেশ কয়েকটি উপন্যাস, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনী রচনা করেন ।
উপন্যাস
| সারেং বৌ (১৯৬২) (চলচ্চিত্র রূপ ১৯৭৮) সংশপ্তক (১৯৬৫) কৃষ্ণচূড়া মেঘ তিমির বলয় দিগন্তে ফুলের আগুন সমুদ্র ও তৃষ্ণা চন্দ্রভানের কন্যা কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত)
|
স্মৃতিকথা
| রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২)
|
ভ্রমণবৃত্তান্ত
| পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬)
|
সমগ্র
| উপন্যাসসমগ্র-১ উপন্যাসসমগ্র-২ গল্পসমগ্র
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
- আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২)
- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯)
- একুশে পদক (১৯৮৩)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮)

মৃত্যু
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে তার বাসা থেকে অপহরন করা হয় । তারপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি ।
আরো পড়তে ক্লিক করুন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী
1 comment
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে তার বাসা থেকে অপহরন করা হয় । তারপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি ।
ধারনা করা হচ্ছে ইলিয়াস আলি, মোকাদ্দাস, ব্রিগেডিয়ার আজমীর মত তিনিও ব্যক্তিগত কারনে আত্মগোপন করেছেন।