Image default
জীবনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী

বাংলা সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন  কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার । তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন ২য় । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যাযয়ের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া । দারিদ্র্যের কারণে তার পিতা মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বলে শরৎচন্দ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় এই শহরে নানা বাড়িতে কেটেছিল । তাঁর বিখ্যাত কিছু উপন্যাস আজও বাঙ্গালী পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে জনপ্রিয়তার জন্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “অপরাজেয় কথাশিল্পী” নামেও বিখ্যাত  ।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী

জন্ম

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন । তার দাদার বাড়ি ছিল কলকাতার উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচড়াপাড়ার  মামুদপুরে ৷ তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই আর বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তার বড় বোনের নাম ছিল অনিলা দেবী । এছাড়াও প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে তার দুই ভাই ও সুশীলা দেবী নামে তার এক বোন ছিল । শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া । দারিদ্র্যের কারণে মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বলে শরৎচন্দ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় এই শহরেই কেটেছিল ।

শিক্ষাজীবন

পাঁচ বছর বয়সে পিতা মতিলাল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন, সেখানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুই থেকে তিন বছর শিক্ষালাভ করেন । এরপর ভাগলপুর শহরে থাকাকালীন তার মামা তাকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন । ১৮৮৭ সালে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ সালে মতিলালের ডিহিরির চাকরি চলে গেলে তিনি তার পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুরে ফিরে গেলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন । এই সময় তিনি হুগলি  স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে তাকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয় । ১৮৯৩ সালে মতিলাল পুনরায় ভাগলপুর ফিরে গেলে প্রতিবেশী তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষালাভের প্রতি শরৎচন্দ্রের আগ্রহ লক্ষ করে তাকে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন । এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন । এই সময় তিনি তার মাতামহের ছোটো ভাই অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে প্রতি রাতে পড়াতেন, তার বিনিময়ে অঘোরনাথ তার কলেজে পড়ার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতেন । তা সত্ত্বেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না-পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি ।
shorot-3.jpg

কর্মজীবন

কলেজ ত্যাগ করার পরে তিনি বনেলী রাজ-এস্টেটে কয়েকদিন চাকরি করেন। কিন্তু বাবার ওপর অভিমান করে তিনি সন্ন্যাসী সেজে ঘর ছেড়ে চলে যান। এই সময় তার পিতার মৃত্যু হলে তিনি ভাগলপুর ফিরে এসে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে কলকাতা যাত্রা করেন, সেখানে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে হিন্দি বইয়ের ইংরেজি তর্জমা করার জন্য মাসে ত্রিশ টাকা বেতনের চাকরি পান । ছয় মাস লালমোহনের বাড়িতে চাকরি করার পর শরৎচন্দ্র ১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে রেঙ্গুনে লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভগ্নিপতি উকিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে যান। অঘোরনাথ তাকে বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে একটি অস্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন । সেখানে শরৎচন্দ্র দুই বছর চাকরি করেন । ১৯০৬ সালের এপ্রিল মাসে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রনাথ মিত্রের সাহায্যে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে এই অফিসে চাকরি পান ও পরবর্তী দশ বছর এই চাকরি করেন । ১৯১২ সালের অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে এলে ‘যমুনা’ নামে পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল তাকে পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন । শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফিরে গিয়ে রামের সুমতি গল্পটি পাঠিয়ে দেন, যা যমুনা পত্রিকায় ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র্য সংখ্যায় প্রকাশিত হয় । এরপর তিনি ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার জন্যেও লেখা পাঠাতে শুরু করেন। ফনীন্দ্রনাথ পাল তার উপন্যাস বড়দিদি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স ও গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স তার উপন্যাসগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন ।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছুটি নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে শরৎচন্দ্র চাকরি ছেড়ে দিয়ে রেঙ্গুন ত্যাগ করে বাংলায় ফিরে আসেন ।

আরো পড়ুন

হুমায়ূন আহমেদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস
  • বড়দিদি, ১৯১৩
  • বিরাজবৌ, ১৯১৪
  • বিন্দুর ছেলে, ১৯১৪
  • পরিণীতা, ১৯১৪
  • পন্ডিতমশাই, ১৯১৪
  • মেজ দিদি, ১৯১৬
  • পল্লী-সমাজ, ১৯১৬
  • চন্দ্রনাথ, ১৯১৬
  • বৈকুন্ঠের উইল, ১৯১৬
  • অরক্ষণীয়া, ১৯১৬
  • শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, ১৯১৭
  • নিষ্কৃতি, ১৯১৭
  • দেবদাস, ১৯১৭
  • চরিত্রহীন, ১৯১৭
  • কাশীনাথ, ১৯১৭
  • দত্তা, ১৯১৮
  • স্বামী , ১৯১৮
  • শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, ১৯১৮
  • ছবি, ১৯২০
  • গৃহদাহ, ১৯২০
  • বামুনের মেয়ে, ১৯২০
  • দেনা পাওনা, ১৯২৩
  • নব-বিধান, ১৯২৪
  • পথের দাবী, ১৯২৬
  • শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, ১৯২৭
  • শেষ প্রশ্ন, ১৯৩১
  • শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, ১৯৩৩
  • বিপ্রদাস, ১৯৩৫
  • শুভদা, ১৯৩৮
  • শেষের পরিচয় ,১৯৩৯
নাটক
  • ষোড়শী, ১৯২৮
  • রমা, ১৯২৮
  • বিরাজ বউ, ১৯৩৪
  • বিজয়া, ১৯৩৫
গল্প

১. রামের সুমতি ১৯১৪    ২.পরিণীতা, ১৯১৪    ৩.বিন্দুর ছেলে, ১৯১৪     ৪.পথ-নির্দেশ, ১৯১৪     ৫. মেজদিদি, ১৯১৫      ৬. আঁধারে আলো, ১৯১৫   ৭.দর্পচূর্ণ ১৯১৫  ৮.বৈকুণ্ঠের উইল, ১৯১৬   ৯. অরক্ষণীয়া, ১৯১৬    ১০.  নিষ্কৃতি, ১৯১৭   ১১.কাশীনাথ, ১৯১৭     ১২. স্বামী, ১৯১৭               ১৩. একাদশী         ১৪. বৈরাগী ছবি, ১৯২০      ১৫.বিলাসী, ১৯২০     ১৬. মামলার ফল, ১৯২০  ১৭. হরিলক্ষ্মী, ১৯২৬    ১৮.মহেশ, ১৯২৬     ১৯. অভাগীর স্বর্গ, ১৯২৬     ২০. অনুরাধা, ১৯৩৪ ২১. সতী, ১৯৩৪      ২২.পরেশ, ১৯৩৪

প্রবন্ধ

১. নারীর মূল্য   ২. তরুণের বিদ্রোহ   ৩. স্বদেশ ও সাহিত্য   ৪. স্বরাজ সাধনায় নারী   ৫. শিক্ষার বিরোধ   ৬. স্মৃতিকথা     ৭. অভিনন্দন    ৮. ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য    ৯. গুরু-শিষ্য সংবাদ  ১০. সাহিত্য ও নীতি     ১১. সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি    ১২. ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত
shorot-2.jpg

মৃত্যু

১৯৩৭ সালে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। এই সময় তার যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধানচন্দ্র রায়, কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ সালের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল দশটায় শরৎচন্দ্র ৬২ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।

আরো পড়ুন

মাইকেল মধুসূদন দত্তের সংক্ষিপ্ত জীবনী

Related posts

মুনীর চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী

jibondharaa

স্যার আইজাক নিউটনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

Leave a Comment