Image default
দেশ বিদেশ

রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলবে  

রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলবে  

বৃহস্পতিবার ভোরবেলা  থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করেছে । ধারণা করা হচ্ছে, এই আক্রমণ ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার সূচনা মাত্র । ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে  সংবাদ মাধ্যমগুলো ।

পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেয়ার পর খেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা  বৃদ্ধি পাচ্ছিল ।

বাড়বে তেলের দাম

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলবে, আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতি কেমন যাবে, সেটা নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা মত দিচ্ছেন । ইতিমধ্যে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে । রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে । কয়েকদিন আগে মি. পুতিন শান্তি চুক্তি বাতিল করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী-অধ্যুষিত এলাকায় সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়ার পর তেলের দাম ৯৮ ডলার হয়েছিল । এই সংঘাতের খবরে সমস্ত শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে । ইউরোপের সব বড় বড় স্টক মার্কেটে দিনের শুরুতেই দাম আড়াই থেকে চার শতাংশ পড়ে যায় । অন্যদিকে মার্কিন ডলার, সুইস ফ্রাঁ এবং সোনার দাম বেড়ে গেছে । রাশিয়া অপরিশোধিত তেলের অন্যতম বড় উৎপাদনকারী দেশ । ফলে তেলের দাম স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে গেছে । ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল ।

বাড়বে খাদ্য পন্যের দাম

করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বাজারের অবস্থা নাজুক। এর উপর আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ । বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের পরিস্থিতির জন্য কৃষ্ণ সাগর থেকে যদি শস্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে খাদ্যশস্যের দাম মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে । খাদ্যশস্যের অন্যতম চার রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন, রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং রোমানিয়া । এই দেশগুলোর পণ্য রপ্তানি হয় কৃষ্ণ সাগরের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে । গম রপ্তানিকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া । ইউক্রেন আছে চতুর্থ স্থানে । ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা রপ্তানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে ইউক্রেন । বিশ্বে গমের রপ্তানির ক্ষেত্রে চার ভাগের এক ভাগ গম রপ্তানি হয় এই দুই দেশ থেকে । কৃষ্ণ সাগরের সরবরাহ পথ বন্ধ হয়ে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে খাদ্য শস্যের দাম মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে ।

বাড়বে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম

ইউরোপের ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পুরণ হয় রাশিয়া থেকে । রাশিয়া থেকে বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় । নর্ড স্ট্রিম ১-এর মাধ্যমে সরাসরি রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস যায় । অন্যদিকে ইউক্রেনের ভেতর দিয়েও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে মস্কো । এদিকে নর্ড স্ট্রিম ১-এর পর এবার নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন নির্মাণের পথে হাঁটছে রাশিয়া ও জার্মানি । নতুন এই প্রকল্প চালু হলে ইউরোপে যেমন রাশিয়ার গ্যাসের আমদানি বাড়বে, তেমনি জ্বালানির ক্ষেত্রে মস্কোর ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এ অঞ্চল । তবে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এই প্রকল্প আর সামনের দিকে এগোবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বার্লিন ।

Untitled-1.jpg

সংকটে পড়বে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো

যুদ্ধের কারণে  সংকটে পড়বে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো । রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান রসনেফটে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান বিপির । প্রতিষ্ঠানটির মোট উত্পাদনের তিন ভাগের এক ভাগ আসে রসনেফট থেকে । এ ছাড়া যৌথভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যবসা রয়েছে । রাশিয়ার প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্ল্যান্ট ‘সাখালিন-২-এর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে যুক্তরাজ্যের আরেক বহুজাতিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান শেলের হাতে । রাশিয়া যে এলএনজি রপ্তানি করে, তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে সাখালিন-২ থেকে । রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গেও ব্যবসা রয়েছে শেলের । যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি প্রতিষ্ঠান এক্সনেরও ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে রাশিয়ায় । সাখালিন-১ তেল ও গ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমে সেখানে ব্যবসা করছে মার্কিন এই কোম্পানি । রাশিয়ার এই প্রকল্পে ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করপোরেশনেরও অংশীদারত্ব রয়েছে । নরওয়ের প্রতিষ্ঠান ইকুইনর এই মুহূর্তে দেশটিতে সক্রিয়ভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ।

প্রভাব পড়বে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও

ইউক্রেনে হামলার প্রভাব পড়বে আর্থিক খাতেও । বেশি সমস্যায় পড়তে পারে ইউরোপের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ।  অস্ট্রিয়ার রাইফেইসেন ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল, হাঙ্গেরির ওটিপি ও ইউনিক্রেডিট ব্যাংক, ফ্রান্সের সোসায়েটে জেনারেল ব্যাংক, নেদারল্যান্ডসের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজির ব্যবসা রয়েছে রাশিয়ায় । এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার একটি অংশ আসে রাশিয়া থেকে । পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রাশিয়ার ঋণ নেওয়ার পরিমাণও কম নয় । ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার ব্যাংকগুলো থেকে দেশটিতে যথাক্রমে ২৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে । এরপরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬ বিলিয়ন, জাপান থেকে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ও জার্মানির ব্যাংগুলো থেকে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে রাশিয়া । আর্থিক ও জ্বালানি খাতের বাইরেও নানা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে । এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের রেনল্ট, জার্মানির মেট্রো এজি ও ডেনমার্কের কার্লসবার্গের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এসব ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়বে ।

ধাতুর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা

প্যালাডিয়ামের দাম বাড়তে পারে । রাশিয়া বিশ্বের মধ্যে সবেচেয়ে বড় প্যালাডিয়াম রপ্তানিকারক । অটোমোটিভ এক্সহস্ট সিস্টেম এবং মোবাইল ফোনে এই ধাতু ব্যবহার করা হয় । রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনার মধ্যেই সম্প্রতি এই ধাতুর দাম বেড়েছে ।

তবে পরিসংখ্যান যাই বলুক, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধে বিশ্বে ঠিক কতটা প্রভাব পড়বে তা আগমী দিনগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে । তবে ভালো কিছুর সম্ভাবনা খুবই কম ।

Related posts

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের যত অপরাধ ।

jibondharaa

জাতিসঙ্ঘের খাদ্য গুদাম লুট : সুদানের প্রতি তিনজনের একজন দুর্ভিক্ষের কবলে

jibondharaa

জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় জামায়াত

jibondharaa

Leave a Comment