
ভাষা সৈনিক, কবি, বুদ্ধিজীবি, সমাজনেত্রী বেগম সুফিয়া কামাল একাধারে অনেক গুনের অধিকারি ছিলেন । বাংলা সাহিত্য-সাংস্কিৃতিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা । বেগম সুফিায়া কামালের জন্ম, শিক্ষা, সাহিত্যকর্ম এবং অর্জন নিয়ে আলোচনা থাকছে আজকের লেখায় ।
বেগম সুফিয়া কামালের সংক্ষিপ্ত জীবনী
একনজরে
জন্ম | ২০ জুন ১৯১১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | কবি, লেখিকা |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) একুশে পদক (১৯৭৬) স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭)
|
মৃত্যু | নভেম্বর ২০, ১৯৯৯ (বয়স ৮৮) |
জন্ম
বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । তার পিতার নাম ছিল সৈয়দ আবদুল বারি । মাতার নাম ছিল সৈয়দা সাবেরা খাতুন । বেগম সুফিায়া কামালের পিতা পেশায় আইন ব্যাবসায়ী ছিলেন ।

শিক্ষা
বেগম সুফিয়া কামালের পড়ালেখার সুচনা হয় তার মামার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে । পারিবারিক এবং সামাজিক প্রতিকুলতা থাকলেও মায়ের উৎসাহে তিনি ব্যক্তিগতভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যান। সে সময় মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন সুযোগ ছিলনা এবং সুফিয়া কামালের পরিবারে উর্দুভাষার চল ছিল । ঠিক এমন একটি পরিবেশে তার স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা এবং লেখক- বুদ্ধিজীবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ ছিল এক অসাধারণ ব্যাপার । যা হোক বেগম সুফিয়া কামাল কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না পেলেও সম্পুর্ণ নিজের চেষ্টায় স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন ।
বেগম রোকেয়ার সাথে সাক্ষাৎ
বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১৮ সালে মায়ের সাথে কলকাতায় যান । সেখানে তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল বেগম রোকেয়ার সাথে । বেগম রোকেয়ার সাক্ষাৎ ও আলাপ বেগম সুফিয়া কামালের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে । এক কথায় বেগম রোকেয়ার কাছ থেকে তিনি সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ পান ।
পরবর্তীতে সুফিয়া কামাল তাঁর স্বামীর সাথে কলকাতায় গেলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ হয় । কাজী নজরুল ইসলাম সুফিয়ার কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং কবিতাগুলি পত্রিকায় প্রকাশের জন্য উদবুদ্ধ করেন । সুফিয়া কামালের জন্য এটা ছিল অনেক বড় ব্যাপার ।
সুফিয়া কামালের বিয়ে

মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে ১৯২৩ সালে বিয়ে হয় । এ সময় তিনি ‘সুফিয়া এন হোসেন’ নামে পরিচিত হন । সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজ সেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন । এ সময় তিনি সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সাথে সুফিয়ার যোগাযোগ করিয়ে দেন । ১৯৩২ সালে সৈয়দ নেহাল হোসেন মারা যান ।
কয়েক বছর পর আপনজন ও শুভানুধ্যায়ীদের ইচ্ছায় তিনি চট্রগ্রামের লেখক ও অনুবাদক কামাল উদ্দিনের সাথে পুনরায় বিবাহসুত্রে আবদ্ধ হন । সেই থেকে তিনি ‘সুফিয়া কামাল’ নামে পরিচিত হন ।
আরো পড়ুন বেগম রোকেয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহিত্য কর্ম
ছোট বেলা থেকেই সুফিয়া কামাল সাহিত্যচর্চা শুরু করেন । ১৯২৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ সেসময়ের প্রভাবশালী সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয় । ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয় । সাঁঝের মায়ার মুখবন্ধ লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম । এখন আমরা সুফিয়া কামালের কাব্য, গল্পসহ রচনাবলীর তালিকা তুলে ধরছি ।
কাব্যগ্রন্থ
- সাঁঝের মায়া (১৯৩৮)
- মায়া কাজল (১৯৫১)
- মন ও জীবন (১৯৫৭)
- প্রশস্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮)
- উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪)
- দিওয়ান (১৯৬৬)
- অভিযাত্রিক (১৯৬৯)
- মৃত্তিকার ঘ্রাণ (১৯৭০)
- মোর জাদুদের সমাধি পরে (১৯৭২)
গল্প
- কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭)
ভ্রমনকহিনী
- সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮)
স্মৃতিকথা
- একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)
আত্মজীবনীমূলক রচনা
- একালে আমাদের কাল (১৯৮৮)
শিশুতোষ
- ইতল বিতল (১৯৬৫)
- নওল কিশোরের দরবারে (১৯৮১)
অনুবাদ
- সাঁঝের মায়া – বলশেভনী সুমের্কী (রুশ) (১৯৮৪)
পুরস্কার
বেগম সুফিয়া কামাল অর্ধশতাধিক পুরস্কার অর্জন করেন । এর মাঝে কয়েকটি তুলে ধরা হলো :
- পাকিস্থান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬১)
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২)
- সোভিয়েত লেলিন পদক (১৯৭০)
- একুশে পদক (১৯৭৬)
- নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
- জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
- বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬)
- দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭)
মৃত্যু
বেগম সুফিয়া কামাল ৮৮ বছর বয়সে, ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন ।
আরো পড়ুন শহীদুল্লা কায়সারের সংক্ষিপ্ত জীবনী