শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি যেমন সৌন্দর্য ম্লান করে তেমনি বিভিন্ন শারিরীক জটিলতার কারন হয়ে দাড়ায় । জীবনের একটা সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় সবার জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে । এজন্য ওজন কমাতে ডায়েট প্ল্যান নিতে হয় । কেউ আবার স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন । সহজে ওজন কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে আজকে ।
১ । গরম পানি পান করুন :
ওজন কমাতে লেবু-মধু-গরম পানির উপকারিতার কথা অনেকেই জানেন । কিন্তু শুধু গরম পানি পান করেও ওজন কমানো সম্ভব সে কথা অনেকেরই অজানা । গরম পানি শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে । এছাড়াও এটি আপনার অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের ফলে শরীরে যে বাড়তি মেদ জমে তা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে ।
২ । কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবার পরিহার করুন :
ওজন কমাতে বেশি ক্যালোরির কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । অর্থাৎ সাদা আটা থেকে উৎপাদিত খাবার খাওয়া কমাতে হবে । এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে । এটি আপনার ক্ষুধার মাত্রা কমাবে । লাল আটা থেকে উৎপাদিত খাবার আপনার শরীরে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়াবে । এবং খাবার ধীরে ধীরে হজমে সহায়তা করবে । ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং ওজন কমতে থাকবে ।
৩ । পর্যাপ্ত ঘুম :
ওজন কমানোর আরেকটি ফলপ্রসু উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম । গবেষণা দেখা গেছে, ঘুমের অভাব মানুষের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় । ফলে ওজনও বেড়ে যায় । এজন্য প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন । আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমও আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে । তাই আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্তি করুন ।
৪ । বেশি বেশি শাকসবজি খান :
সবুজ শাকসবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হয় । ফলে এটি আপনার ওজন কমাতে ও শরীরের সতেজতা ধরে রাখতে সহায়তা করে । কম ক্যালোরি ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজির মাঝে অন্যতম হচ্ছে ব্রোকলি, ফুলকপি, শাক, টমেটো, কেল, ব্রাসেলস স্প্রাউটস, বাঁধাকপি, সুইস চারড, লেটুস ও শসা । তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খান ।
আরো পড়ুন শীতের শাক – সবজি : পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
৫ । নিয়মিত ফল খান :
ওজন কমাতে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ফল রাখুন । বিশেষ করে মৌসুমী ফল বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন । ফল আপনার ক্ষিদে মেটানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন পেট ভরিয়ে রাখবে । ফলে বার বার খেয়ে ওজন বাড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন খুব সহজেই । এছাড়া শাকসবজির পাশাপাশি বাদাম, কুমড়ার বীজ, মৌসুমী ফল খেতে পারেন ।
৬ । নিয়মিত ব্যয়াম করুন :
স্বাস্থ্যকর ডায়েটের পাশাপাশি ব্যায়াম আপনার ওজন দ্রুত হ্রাস করতে সহায়তা করবে । অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার ফলে সেটি আপনার বিপাক ক্রিয়া বজায় রাখতে সহায়তা করবে , যা ওজন হ্রাস করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে । ভারোত্তোলন ব্যায়াম ওজন হ্রাস এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী । এর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম শরীরচর্চা আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করবে ।
৭ । গ্রিন-টি :
যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত গ্রিন-টি পান করতে পারেন । কারন গ্রিন টি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আমাদের দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে । গবেষণায় দেখা গেছে , প্রতিদিন চার কাপ গ্রিন টি পান করলে প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ৪০০ গ্রাম ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় করা সম্ভব হয় ।
৮ । খাওয়ার পরে হাঁটুন :
যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করার সময় পান না , তারা খাবার খাওয়ার পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটুন । এটি আপনার শরীরের মেটাবোলিজম বাড়াতে সহায়তা করবে । এবং খাবারের ফলে বাড়তি মেদ শরীরে জমতে দিবে না । ফলে ওজন কমতে শুরু করবে ।
৯ । চিনি থেকে দূরে থাকুন :
যারা ওজন কমাতে চান , চিনি খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিন । এক চা চামচ চিনিতে মোট ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে । তাই চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন ।
আরো পড়ুন ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ, ঝুঁকি বেশি যাদের
১০ । রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খান :
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন । কারণ, রাতে খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে । রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না , তবে রাতের বেলা ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন ।
১১ । স্বাস্থকর ফ্যাট :
সব ফ্যাট খারাপ হয় না । আপনার দেহের মসৃণভাবে কাজ করতে চর্বিযুক্ত খাবারেরও প্রয়োজন । এজন্য আপনার ডায়েটে স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করতে অলিভ অয়েল এবং অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করতে পারেন । তবে নারিকেল তেল ও মাখনের মতো চর্বিগুলোতে পর্যাপ্ত ফ্যাট থাকে । তাই এগুলো পরিমিত ব্যবহার করা উচিত ।
ওজন কমাতে ও শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন । এটি আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিবে । এ ছাড়া জাঙ্ক ফুড একেবারেই খাবেন না । খাবার যথাসম্ভব ধীরে ধীরে খান । যদি খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে খান, তাহলে প্রয়োজন থেকে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন । এটি আপনার হজমেও বিরুপ প্রভাব ফেলবে ।