![টেলিভিশন কে আবিষ্কার করেন : টেলিভিশন আবিষ্কারের ইতিহাস টেলিভিশন কে আবিষ্কার করেন : টেলিভিশন আবিষ্কারের ইতিহাস](https://i0.wp.com/cdn.photolim.com/images/2022/04/26/---888b4a8d2b9d538e.md.jpg?resize=500%2C281&ssl=1)
আজকের আধুনিক টেলিভিশন আবিষ্কার করেন কে বলতে আমরা জন লোগি বেয়ার্ড এর নাম জানি । এটা তিনি আবিষ্কার করেন ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডে । তবে টেলিভিশন আবিষ্কার একদিনে হয়নি অনেকগুলো ধাপ পার হয়েই আজকের রঙ্গিন, ঝকঝকে টেলিভিশন আমাদের হাতে এসেছে ।
মুলতঃ গ্রিক শব্দ ‘Tele’ অর্থ দূরত্ব, আর ল্যাটিন শব্দ ‘Vision’ অর্থ দেখা, এই দুই ভাষার দুটি শব্দ মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছে ‘ Television‘ শব্দটি । যা বর্তমান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম প্রকাশ ও প্রচার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত । এটি এখন অন্যতম বিনোদন মাধ্যমও বটে । আজ আমরা টেলিভিশন এবং টেলিভিশন কে আবিষ্কার করেন সম্পর্কে জানব ।
টেলিভিশন কে আবিষ্কার করেন
আসলে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে টেলিভিশন আবিষ্কার হয় । সর্বপ্রথম ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয় । এরপর ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ বৈদ্যতিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠনোর পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হন । পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লোগি বেয়ার্ড ১৯২৭ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং সাদা কালো ছবি স্বল্প দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন । এরপর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করা সম্ভব হয় । আর এটা সম্প্রচার করে বিবিসি । এরপর Television বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে এবং ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে । গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে টেলিভিশন গণমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে ।
জন লোগি বেয়ার্ড নামে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব অথচ মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন । তিনি টেলিভিশন আবিষ্কার নিয়ে মাথা ঘামাতে লাগলেন । জন লোগি বেয়ার্ড স্কটল্যান্ডে ১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই সংগাম করে তিনি অনেক দুঃখ- কষ্ট ও শ্রমের মাধ্যমে লেখাপড়া শিখে গবেষণার কাজে ব্রতী হন । পুষ্টির অভাবে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও প্রচন্ড উৎসাহের সাথে বেতারে ছবি ধরার কাজটা নিয়ে তিনি উঠেপড়ে লাগলেন । একটা ঘরে তাঁর গবেষণার যন্ত্রপাতি এবং পাশের ঘরে একটা পর্দা টাঙানো ছিল । একদিন তিনি সেই পর্দায় একটা যন্ত্রের ছবি উঠেছে দেখে চমকে উঠলেন । ছবিটি যে পাশের ঘরে রাখা যন্ত্রের, সে বিষয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না । তরুণ বিজ্ঞানী জন লোগি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন । তিনি অনুভব করলেন আর একটু চেষ্টা করলেই তিনি সফল হবেন । লন্ডনে এসে এই গবেষণার জন্য তিনি বহু লোকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন । কিন্তু তিনি কোন সাহায্য পেলেন না । সকলেই তাঁকে পাগল বলে আখ্যায়িত করলো । কিন্তু জন লোগি বেয়ার্ড দমে যাওয়া পাত্র ছিলেন না । তিনি একা একাই ছেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন । একটা গোলাকার স্ক্যানিং ডিস্ক, নিয়নবাতি আর একটা ফটো ইলেকট্রিক সেল- এ নিয়েই তিনি সফলতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে লাগলেন । ঘুর্ণায়মান স্ক্যানিং ডিস্কের অসংখ্য ছিদ্রপথে এসে যে আলোকরশ্মি কোন বস্তুর ওপর পড়ছে তাকে ফটো ইলেকট্রিক সেলের মাধ্যমে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর করে সেই তড়িৎ শক্তিকে পুনরায় আলোক ফলিত করে তোলা সম্ভব হলো । এর মাধ্যমে সফল হলো বেতারে ছবি পাঠানোর কৌশল । সফল হলো টেলিভিশন আবিষ্কারের চেষ্টা ।
আরো পড়ুন হিট স্ট্রোক কি ? হিট স্ট্রোকের কারণ ও প্রতিকার
বেয়ার্ড প্রথম যে পরীক্ষাটি দেখিয়েছিলেন তখন দূরত্বটা ছিল কয়েকশ গজ মাত্র । তাঁর পরীক্ষার জায়গা থেকে কিছু দূরে তিনি একটি ঘরের মধ্যে দর্শকদের বসিয়েছিলেন । দর্শকদের সামনে রাখা ছিল একটা যন্ত্র এবং একটা পর্দা । তারপর বেয়ার্ড পরীক্ষাগারে চলে যান। এক সময় দর্শকরা দেখতে পায় সিনেমার পর্দার মত সচল মানুষের মূর্তি । সেদিন সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলেন দর্শকরা এবং সেইসাথে Television আবিষ্কারের গৌরব লাভ করেছিলেন বেয়ার্ড ।
পরবর্তীতে বেয়ার্ডই গবেষণার মাধ্যমে টেলিভিশনের আরও উন্নতি করেন । ফলে দূরত্বকে আরও কিছুটা বাড়াতে সক্ষম হন তিনি । অতঃপর মার্কিন বিজ্ঞানী জোরকিন বেয়ার্ডের পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন করেন । আর জোরকিনের পদ্ধতি অবলম্বন করেই তৎকালিন আমেরিকান রেডিও কর্পোরেশন প্রথম টেলিভিশন প্রদর্শনের সূচনা করে । আমরা আজকে যে টেলিভিশন দেখি সেটা ঐ পদ্ধতিরই উন্নত রূপ ।
যদিও বিশেষজ্ঞদের আলাপ-আলোচনায় কে টিভি আবিষ্কার করেছেন, সেটা নিয়ে কিছুটা বিতর্কের আভাস পাওয়া যায় । আসলে টেলিভিশন আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয়েছিল ১৮৮৪ সালে । পল নিপকো নামের এক বিজ্ঞানী স্ক্যানিং ডিস্ক আবিষ্কার করেন । আর এই স্ক্যানিং ডিস্কের উপর ভিত্তি করে তিনি টিভি বানানোরও চিন্তা করেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর নকশা অনুযায়ী যন্ত্রটা আর বানাতে সক্ষম হন নি ।
১৯১০ সালে লি লিফরেস্ট ও আর্থার কর্ন নামে দুজন বিজ্ঞানি আরেকটা নকশা তৈরি করেন এবং সে অনুযায়ী একটি যন্ত্রও বানান । সেই যন্ত্রে পাঠানো ছবিকে রিসিভ করার পর অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে আবার বড়ো করারও ব্যবস্থা রাখেন । কিন্তু তাদের যন্ত্রে চলমান ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন নি ।
আরো পড়ুন ইকোকার্ডিওগ্রাফি কি : কেন করা হয়
একই সমস্যা ছিল ভল্যাদিমির জোয়ার্কিন ও তার শিক্ষক বোরিস রোজিংয়ের টেলিভিশনেও । অবশ্য তারা আরও উন্নত স্ক্যানার ব্যবহার করেন, তৈরি করেন ব্রাউন টিউব । তাদের স্ক্যানার আগের টিভিগুলোর চেয়ে উন্নত হলেও তা চলমান ছবি দেখানোর মতো উপযুক্ত ছিল না । এবার দৃশ্যপটে হাজির হলেন জন লোগি বেয়ার্ড । ১৯২৫ সালে ২৫ মার্চ তিনি নতুন একটি টিভির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন । এটার স্ক্যানার প্রতি সেকেন্ডে ৫টা করে ছবি দেখাতে সক্ষম ছিলো । কিন্তু সত্যি বলতে, এটাও চলমান ছবি দেখাতে পারেনি । কারণ, ছবিকে চলমান মনে হওয়ার জন্য প্রতি সেকেন্ডে অন্তত ১২টা ছবি পরিবর্তিত হতে হয় । আসলে ভিডিও অনেকগুলো স্থির ছবির সমষ্টি । আমরা অনেকগুলো স্থির ছবি যখন একসঙ্গে খুব দ্রুত দেখি, তখন আমাদের চোখ আর আলাদা করে স্থির ছবিগুলোকে দেখতে পারেনা । একসঙ্গে চলমান ছবি গুলোকেই ভিডিও বলা হয় ।
২ অক্টোবর বেয়ার্ড ইতিহাসের প্রথম টিভি নিয়ে হাজির হলেন সবার সামনে। এটাতে প্রতি সেকেন্ডে ১২.৫টা করে ছবি দেখা যেতো । অর্থাৎ এটার মাধ্যমে প্রথম বারের মতো টিভির মাধ্যমে চলমান প্রোগ্রাম দেখানো সম্ভব হলো । তখন থেকে পৃথিবীতে শুরু হলো টেলিভিশন অধ্যায় । এখন আমরা জানতে পারলাম, কে টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং কবে আবিষ্কার করেন ? হ্যা, জন লোগি বেয়ার্ড, ১৯২৫ সালে টিভি আবিষ্কার করেন ।