Image default
স্বাস্থ্য

গাউট বা গেঁটে বাতের কারণ , লক্ষণ ও চিকিৎসা

গাউট বা গেঁটে বাতের কারণ , লক্ষণ ও চিকিৎসা

বাত রোগের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ধরনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গাউট বা গেঁটে বাত । রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হতে পারে গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস , যাকে বলে গেঁটে বাত । কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় । তা এতটাই বেশি যে , কিডনি সেটা শরীর থেকে বের করতে পারে না এবং ক্রমেই রক্তে তার পরিমাণ বাড়তে থাকে । ফলে বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে তা ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা হয় ।

মূত্রের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায় । কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে শরীরে অধিক পরিমাণে ইউরিক এসিড তৈরি হয় বা কিডনির মাধ্যমে তা নির্গত হতে পারে না । ফলে , রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় । একটু সচেতন হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ইউরিক এসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ।

গেঁটে বাত হওয়ার কারণ বা কারা আক্রান্ত হয় :
  • বংশগত :

যাদের বংশে বাতের সমস্যা আছে , তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।

  • অধিক পরিমাণে প্রটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ :

যারা প্রটিনজাতীয় খাবার চাহিদার তুলনায় বেশি খান এবং শাক-সবজি কম খান তাদের গেঁটে বাতের ঝুকি বেশি । দৈনন্দিন খাবার তালিকাতে লালজাতীয় মাংস যেমন- গরু , খাসি , মহিষের মাংস , মগজ , শুকনো শিম জাতীয় দানা , মটরশুঁটি , মাশরুম , মাছের ডিম , কলিজা , কচু , লালশাক , পুঁইশাক এসবের পরিমাণ বেশি থাকলে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

  • কিছু ঔষধ :

কিছু কিছু ঔষধ রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয় । যেমন – অ্যাসপিরিন , বিভিন্ন থায়জাইড ডাই-ইউরেটিকস , পাইরাজিনামাইড , লিভোডোপা , সাইক্লোস্পোরিন ইত্যাদি ।

  • কিছু অসুখ :

উচ্চরক্তচাপ , ডায়াবেটিস , কিডনির সমস্যা , হাইপারথাইরয়েডিজম , সোরিয়োসিস ইত্যাদি রোগ থাকলে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি আশঙ্কা থাকে ।

  • কিছু কিছু টিউমার , ব্লাড ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের কেমোথেরাপিজাতীয় ঔষধ সেবনে ইউরিক এসিড বাড়তে পারে
  • পানি কম পান করা , অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান , শারীরিক স্থুলতা
gete-bat1.jpg
গেঁটে বাতের অন্যতম লক্ষণ অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া ।
আরো পড়ুন

মারাত্মক সংক্রামক রোগ হেপাটাইটিস বি, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা
গেঁটে বাতের লক্ষণ :

সাধারণত মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক পুরুষদের এ রোগ বেশি হয় , মহিলা ও তরুণদের কম হয় । রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি ফেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগি বুঝতে পারেন না বা তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না । তবে সময়ের সাথে সাথে যখন সেটি গেঁটে বাত রূপ নেয় তখন লক্ষণও প্রকাশ পায় ।

  • অস্থিসন্ধি ফুলে যায় ।
  • অস্থিসন্ধি লাল হয়ে যায় ।
  • প্রদাহ এবং প্রচন্ড ব্যথা হয় ।
  • লক্ষণ গুলো রাতের দিকে বা সকালে বেশি প্রকাশ পায় ।
  • ব্যথার সাথে জ্বরও হতে পারে ।
  • অনেক সময় জয়েন্ট ও এর আশেপাশের টিস্যুতে ইউরিক এসিড ক্রিস্টল জমা হয়ে সাদা চাকার মতো হতে পারে , চকের মতো পুঁজ বের হতে পারে ।
  • দীর্ঘদিন রক্তে ইউরিক এসিড লেভেল বেশি থাকলে কিডনিতে পাথর এমনকি ইউরেট নেফ্রোপ্যাথি হতে পারে এবং দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে যেতে পারে ।

 

যেসব খাবার পরিমিত করা উচিত :
  • বেশি চর্বিযুক্ত মাংস , যেমন- গরু , খাসি , ভেড়া ও মহিষের মাংস ।
  • কলিজা , মগজ , জিহ্বা , মাছের ডিম , ডিমের কুসুম ।
  • খোসাযুক্ত প্রাণী , যেমন- চিংড়ি , কাঁকড়া , শামুক । এছাড়া সামুদ্রিক মাছ যেমন- টুনা , স্যামন , সার্ডিন এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে বা কম খেতে হবে ।
  • সব রকমের ডাল , বাদাম , মটরশুঁটি , শিমের বিচি , কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে ।
  • কিছু কিছু শাকসবজি যেমন- পালংশাক , পাঁইশাক , ফুলকপি , বাঁধাকপি , গাজর , মিষ্টিকুমড়া , ঢেড়স , পাঁকা টমেটো ।
  • অ্যালকোহল , ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় , কোমল পানীয় , চা , কফি পরিহার করতে হবে ।
  • ঈস্ট দেওয়া খাবার যেমন – পাউরুটি , নান , কেক ইত্যাদি কম খেতে হবে ।

 

যেসব খাবার খেতে বাধা নেই :
  • চর্বিহীন মাংস যেমন – ছোট মুরগির মাংস , মাছ , ডিম পরিমাণমত খাওয়া যাবে ।
  • বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন- শাক , সবজি । এই আঁশ স্ফাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে মল আকারে বের হয়ে যায় ।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার যেমন- লেবু চা , ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন – পেয়ারা , আমলকি , মাল্টা , কমলা , গ্রিণ-টি ।
  • বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে । প্রতিদিন আড়াই- তিন লিটার পানি পান করতে হবে ।
আরো পড়ুন

প্রতিদিন পুদিনা পাতার চা পান করুন , দূর হবে ৮টি মারাত্মক সমস্যা
চিকিৎসা :
  • ব্যথা নিরাময়ের জন্য পূর্ণ বিশ্রাম এবং আক্রান্ত জয়েন্টে বরফ লাগাতে হবে ।
  • ব্যথার ঔষধ যেমন – নেপ্রোক্সেন , ডাইক্লেফেনাক , ইনড্রোমেথাসিন ব্যাবহার করা যায় । তবে মনে রাখতে হবে , এ ধরনের ঔষধে পেটে এসিডিটির সমস্যা হতে পারে , তাই ভরা পেটে খেতে হবে এবং সাথে রেনিডিন বা ওমিপ্রাজন জাতীয় ঔষধ খেতে হবে ।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কলচিসিন দেয়া যেতে পারে ।

রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী ।

 

Related posts

শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন

jibondharaa

হার্ট অ্যাটকের লক্ষণ এবং যাদরে ঝুঁকি বেশি

jibondharaa

কোন কোন খাবারে আয়রন পাওয়া যায় : শরীরে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা

jibondharaa

Leave a Comment