Image default
পুষ্টি

গাজরের পুষ্টিগুণ : উপকারিতা ও অপকারিতা

গাজরের পুষ্টিগুণ : উপকারিতা ও অপকারিতা

গাজর একটি শীতকালীন সবজি । তবে রান্না সবজির থেকে এটি কাঁচা অবস্থাতেই অধিক ব্যবহৃত হয় , কারন গাজর সালাদ হিসেবে খেতে সবাই কমবেশি পছন্দ করেন । এছাড়া গাজরের হালুয়ারও বেশ কদর রয়েছে । পৃথিবীর অর্ধেক গাজর চীন দেশে উৎপাদিত হওয়াই , এশিয়ার দেশ গুলোতে গাজর খাওয়ার প্রচলন বেশি ।

গাজরকে বলা হয় সুপারফুড , কেননা এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তার থেকে অধিক পরিমান পুষ্টিগুণে ভরপুর । গাজর বিটাক্যারোটিনের প্রধানতম একটি উৎস যা থেকে  ভিটামিন এ পাওয়া যায় । এছাড়া রয়েছে ভিটামিন সি , ভিটামিন বি , ভিটমিন কে এবং রয়েছে ফাইবার , পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস , ম্যাগনেসিয়াম , লৌহ সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান । এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বক , চোখ , চুলসহ বিভিন্ন অঙ্গের উপকার করে যা আমাদের জানা জরুরি ।

গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা গুলো জেনে নিন :

 

১ । দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে :

চোখের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিটামিন এ । যা দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাতকানা সহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে । গাজরে থাকা বিটাক্যারোটিন লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ তে রুপান্ত্রিত হয় ।  পরে সেটি চোখের রেটিনায় গিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে , এবং রাতের বেলায় অন্ধকারেও চোখে ভাল দেখার জন্য প্রয়োজন এমন এক ধরনের বেগুনি পিগমেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে ভুমিকা রাখে ।

২ । হার্ট সুস্থ রাখে :
gajor15f8e3bc2a2f559eb.jpg
গাজরের ক্ষেত , ছবি-সংগ্রহীত

গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ডায়েটরি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , যা  ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে  । ফলে হার্ট সুস্থ থাকে । কারন শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ও ধমনি চাপমুক্ত থাকলে , শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পর্যাপ্ত ঘুম হয় । ফলশ্রুতিতে , আমাদের হৃদপিন্ড বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে ।

৩ । ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :

গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে । গাজরে থাকা প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , খাবার হজমের পরে শরীরে থাকা খাদ্যের উচ্ছিষ্ট যাকে ফ্রি-র‌্যাডিকেলস বলা হয় এটির বিরুদ্ধে লড়াই করে । ফলে ফুসফুস , ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে ।

৪ । ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে :

ত্বকে ব্রণের দাগ, পোড়া দাগ বা বয়স বৃদ্ধির ফলে হওয়া বিভিন্ন দাগ আমাদের চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায় । ত্বক ভিতর থেকে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে গাজর খেতে পারেন । গাজরে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপদান যেমন- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটশিয়াম । এ খনিজ গুলো ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখে । এছাড়া গাজরে উপস্থিত ভিটামিন এ ত্বকের দাগ দূর করে ।

৫ ।  অ্যান্টি এজিং উপাদান :

গাজর আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত সেল গুলোকে ঠিকঠাক রাখতে সহায়তা করে । অর্থাৎ এটি অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে । গাজরে রয়েছে  বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের শরীরের ভেতরে গিয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ।

৬ । লিভার ভালো রাখে :

প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে লিভারে প্রদাহ, ফোলা ভাব ও সংক্রমণ কমে যায় । গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার যা মলত্যাগের চাপ সৃষ্টি করে লিভার ও কোলনকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে । এছাড়া এটি  লিভারের পিত্ত এবং হিমায়িত ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে । নিয়মিত গাজর খেলে  লিভারের হেপাটাইটিস, সিরোসিস এবং কোলেস্টেসিসের মতো সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।

৭ । ক্ষত সারায় :

গাজর ভালো  অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে ।  গাজরে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি , শরীরে কোলাজেন তৈরী বৃদ্ধি করে ।  ফলে শরীরে কোথাও কেটে বা পুড়ে ক্ষত হলে তা দ্রুত সারাতে ভুমিকা রাখে ।

আরো পড়ুন

কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারীতা ও সতর্কতা
৮ । হজম শক্তি বৃদ্ধি করে :

গাজর খেলে হজম জনিত সমস্যা দূর হয় । ফলে ডায়রিয়া ও বদহজম থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । আর গাজরে থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখে , ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ।

৯ । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে :
gajor2.jpg
বিভিন্ন রঙের গাজর , ছবি-সংগ্রহীত

গাজর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । গাজরে থাকা ফাইবার গ্লুকজ  মেটাবলিজম উন্নত করে । এতে ক্যলরির পরিমান কম থাকাতে শরীরে চর্বি জমতে দেয় না , ফলে ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে । এছাড়া গাজরে থাকা পটাশিয়াম , ভিটামিন ও খনিজ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে ।

১০ । স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় :

শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল ও উচ্চরক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে । গাজরের উপকারি উপাদান কোলেস্ট্রল ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে ।  হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে ছয়টির বেশি গাজর খাচ্ছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি যারা এর থেকে পরিমানে কম খাচ্ছেন তাদের তুলনায় অনেক কম হয় ।

১১ । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :

গাজর শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে রক্ত পরিষ্কার রাখে । এটি শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে । নিয়মিত এক গ্লাস গাজরের জুস খেলে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ রাখে । কারন এতে  ভিটামিন ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি রেয়েছে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেম শক্ত ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।

১২ । দাঁতের সুরক্ষায় :

দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য গাজর ভালো কাজ করে । এটি দাঁত ও মুখের গহ্বর পরিষ্কার রাখে । এবং দাঁতের গোড়ায় পাথর জমতে বাধা প্রদান করে । গাজরের মিনারেল দাঁত মজবুত রাখতে  সাহায্য করে । শিশুদের নতুন দাঁত সুরক্ষায় কাজ করে গাজরের হালুয়া ।

 

সতর্কতা :

গাজর খাওয়ার কিছু সতর্কতা রয়েছে , যেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন ।

  • যাঁরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন , তাঁদের গাজরের রস সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার । কেননা এতে যকৃতে toxic উপাদান তৈরি হতে পারে । খাওয়ার পর এবং ওষুধ সেবনের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর গাজর খাওয়া উচিত ।

 

  • একবারে অতিরিক্ত গাজর খেলে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে ।

 

  • গাজর ডায়াবেটিস রোগির জন্য ভালো , কিন্তু বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত নয় এতে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে

 

  • আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তবে গাজর খেলে সেটি বৃদ্ধি পেতে পারে ।

 

  • গাজর যেমেন হজম সমস্যা দূর করে , পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেললে গ্যাস্টিক , ডায়রিয়া , পাকস্থলির জটিলতা সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

 

  • অতিরিক্ত গাজরের রস মায়েদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন করে দেয় ।

 

 

শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে গাজর অত্যন্ত উপকারি ভুমিকা পালন করে , তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমানে খেতে হবে । গাজর কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে । এছাড়া গর্ভবতী মায়েরা গাজরের রস খেলে শিশুর জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমে । তাই সুস্থ থাকতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন ।
আরো পড়ুন

কাগজি লেবুর পুষ্টিগুণ ও ১০টি উপকারীতা

Related posts

পাঁকা পেঁপে ।। পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

jibondharaa

কাগজি লেবুর পুষ্টিগুণ ও ১০টি উপকারীতা

jibondharaa

করলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

jibondharaa

Leave a Comment