Image default
স্বাস্থ্য

গর্ভাবস্থায় কি খাবেন ।। কি খাবেন না

গর্ভাবস্থায় কি খাবেন ।।  কি খাবেন না

হবু মায়েদের গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া দরকার এবং কোন কোন খাবার খাওয়া ক্ষতিকর সে সম্পর্কে জানার আগ্রহ কাজ করে । এসময় সুস্থ থাকার জন্য ও গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি  নিশ্চিত করতে হবু মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে । আবার এমন কিছু  খাবার আছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ নয় । সেগুলো অব্শ্যই এড়িয়ে চলতে হবে । আজ আমরা গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার খাওয়া যাবেনা সে বিষয়ে আলোচনা করবো ।

কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে

১. দুগ্ধজাত খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতেই হবে । কারণ, সন্তান সম্ভবা মা যেন  যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম প্রতিদিন পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

২. গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডাল, সোয়াবিন, বাদাম জাতীয় খাদ্যদ্রব্য থাকাও জরুরি। কারণ ,এই জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ফোলেট ও ক্যালসিয়াম থাকে । যা শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ।

৩. মিষ্টি আলু বা লাল আলু শুধু খেতেই যে সুস্বাদু তা নয়, এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে । এটি উদ্ভিদে পাওয়া এক ধরণের যৌগ যা মানব শরীরে ভিটামিন এ-তে রুপান্তরিত হয় । মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও পাওয়া যায়।

৪. সামুদ্রিক মাছ । সামুদ্রিক মাছ  সন্তান সম্ভবা মাহলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্যামন মাছ । এই মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা বাচ্চার মস্তিষ্ক ও চোখের পুষ্টি জোগায়।

৫. খাদ্যতালিকায় ডিম থাকা আবশ্যক । ডিমে  প্রয়োজনীয় সব রকমের পুষ্টিই মজুত থাকে।  বড় সাইজের একটা  ডিমে ৮০ ক্যালরি, প্রচুর প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে । ডাক্তাররা প্রতিদিন ২টি করে ডিম খেতে বলেন ।

-----eb8f57c1a1408247.jpg

৬. সবুজ শাকসব্জি  অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে । এটি যে কোনও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকার অন্যতম প্রধান উপাদান । সবুজ শাকসব্জিতে ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম থাকে ।

আরো পড়ুন
শীতের শাক – সবজি : পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

৭. সবধরনের মাংস খাবার তালিকায় রাখতে হবে । মুরগীর চর্বিহীন মাংস শরীরে উচ্চমানের প্রোটিন জোগায় । সব ধরনের রেড মিটে প্রচুর পরিমানে আয়রন  থাকে যা রক্ত গাঢ় করতে সাহায্য করে ।

৮. ছোলা, সিমের বিচি, মটরশুটি, মশুর ডাল অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত । ডাল জাতিয় খাবার থেকে ফাইবার, ভিটামিন, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় ।

৯. ড্রাই ফ্রুটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, বিভিন্ন রকমের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে । বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে এক টুকরো ড্রাই ফ্রুটে একটা তাজা ফলের সমান পুষ্টি থাকে ।

১০. সর্বোপরি যা প্রয়োজন তা হল বেশি বেশি পানি পান করা। শরীরকে যথাসম্ভব হাইড্রেটেড রাখা একান্ত প্রয়োজন । গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকা খুবই জরুরী।

আরো পড়ুন
জরায়ু মুখের ক্যান্সার কেন হয় ? এর লক্ষণ , প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা ।
কোন কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন

গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় । না হলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে । গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সে বিষয়ে এখানে আলোচনা থাকছে ।

১. আনারস :

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের খাদ্য তালিকায় আনারস না রাখা উচিত । কারণ,  আনারস খাওয়ার ফলে জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে, যার ফলে  গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আনারসে প্রচুর ব্রোমেলাইন থাকে, এটি একটি এনজাইম যা প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। এটি জরায়ু নরম করে এবং অকাল প্রসবের  কারণ হয়ে থাকে। এজন্য  গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আনারস খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুন

আনারসের পুষ্টিগুণ : উপকারীতা ও অপকারীতা
২. আঙুর :

গর্ভাবস্থায় আঙুর এড়িয়ে চলতে হবে । এটি সবুজ ও কালো উভয় আঙুরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গর্ভাবস্থায় কালো আঙুরের খোসা হজম করতে অসুবিধা হতে পারে কারণ এই সময় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকে । এছাড়া আঙুর ডায়রিয়ার কারণও হতে পারে । যদিও গর্ভাবস্থায় আঙুর খাওয়ার ব্যাপারে মিশ্র মতামত রয়েছে, তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে আঙুরের মধ্যে থাকা যৌগিক রেজভেরট্রোল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।

আরো পড়ুন 
নিয়মিত আঙুর খাওয়ার উপকারীতা : আঙুরের পুষ্টিগুণ
৩. তেঁতুল :

গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খাবারের প্রতি ঝোক বাড়ে । এবং এই তালিকায় তেঁলুলের নাম সবার উপরেই থাকবে। তবে গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া ভাল নয়। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস । কারণ,  তেঁতুল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ । যেহেতু তেঁতুলে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, সেহেতু   এটি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি শরীরে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এবং প্রজেস্টেরন কমে যাওয়ার ফলে গর্ভপাত হতে পারে বা অকাল প্রসব হতে পারে ।

-----62d1b241cfad2ed5.jpg

৪. পেঁপে :

যদিও পেঁপে প্রচুর  পুষ্টি এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ তবুও, পেঁপে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত নয়। পেঁপে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে যা   গর্ভবতী নারীর জন্য ভাল না। এছাড়াও পেঁপে  ল্যাটেক্স সমৃদ্ধ যার কারনে জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এবং এমনকি গর্ভপাত ঘটতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায়  পাকা, কাঁচা উভায় পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত ।

৫. হিমায়িত এবং প্রসেস ফুড :

গর্ভবতী মহিলাদের হিমায়িত  এবং প্রসেস ফুড সম্পুর্নভাবে এড়িয়ে চলা উচিত । এই খাবার গুলিতে মূল স্বাদ ও পুষ্টি নষ্ট হয় । এবং এই ধরনের খাবার দীর্ঘ সময় ধরে হিমায়িত ও সংরক্ষিত থাকার ফলে হজম প্রক্রিয়ার জন্যও সমস্যার কারণ হতে পারে । বিষেজ্ঞরা এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে সর্বদা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

Related posts

শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন

jibondharaa

থাইরয়েড ক্যান্সার কত প্রকার । এর লক্ষণ ও চিকিৎসা ।

jibondharaa

গনোরিয়া কি ? গনোরিয়া থেকে বাঁচার উপায় ।

jibondharaa

Leave a Comment