Image default
স্বাস্থ্য

হবু মায়েদের রোযা রাখার বিধান কি ?

হবু মায়েদের রোযা রাখার বিধান কি ?

গর্ভবতী নারীরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা বা রোজা না রাখলে তার বিধান কি ? এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে ? এটা নিয়ে আমাদের মাঝে প্রশ্ন থাকে । এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং ইসলামী স্কলারদের মতামত তুলে ধরা হবে আজকের লেখায় । যদিও ইসলামে পূর্ণবয়স্ক নারীদের উপর রমজানের রোজা ফরজ । গর্ভবতী এবং দুধপান করানো মায়েদের জন্য বিধানটা সে্ই মায়ের অবস্থার উপর নির্ভর করে । আসুনে জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখা না রাখার বিধানটি ।

গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোন জটিলতা না থাকে তবে তার রোজা রাখাই উত্তম । এক্ষেত্রে তার রোজা রাখতে কোন অসুবিধা নেই । তবে রোজা রাখা না রাখার বিষয়টা রোগির অবস্থার উপর নির্ভর করে । প্রয়োজনে এ বিষয়ে রোজার আগে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এমন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে । তিনি আপনার অবস্থা দেখে পরামর্শ দিতে পারবেন, রোজা আপনার জন্য ঝুকিপূর্ণ কিনা ।

গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার রাখার অবস্থা

চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা গর্ভবতী মায়ের রোজা কখন রাখা যাবে, আর কখন যাবেনা সেটা বিবেচনায় রেখে গর্ভকালীন সময়কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন । সেটা আলোচনা করা যাক ।

১. গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস

প্রথম তিন মাস গর্ভের সন্তান একটি রক্তপিন্ড থেকে ধীরে ধীরে গঠন হতে থাকে । এই সময় বাচ্চার প্রতিটি অঙ্গ – প্রতঙ্গ গঠন হতে থাকে । এই কারণে, এই সময়টাতে মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন, আইরন, পুষ্টির সরবরাহ প্রয়োজন । আর এ সময়ে বাচ্চা যেহেতু মায়ের গর্ভ থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে, সেহেতু এই সময়ে মায়ের শরীরে কোন ঘাটতি না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে । কারণ, এ সময়ে মায়ের শরীরে কোন ঘাটতি পড়লে সেটা গর্ভের বাচ্চার উপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা থাকে । তাছাড়া গর্ভের প্রথম প্রথম মায়ের খাবারে অরুচি থাকে । বার বার বমি হয় ।  মাথা ঘুরায়, ওজন কমে যায় ইত্যাদি সমস্যা থাকে । তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা এই সময়টাতে রোজা না রাখার পক্ষে মত দেন । তবে , মায়ের যদি উল্লেখিত সমস্যা না থাকে । তিনি যদি ঠিক মতো খেতে পারেন, শরীরে যদি পুষ্টির ঘাটতি না থাকে, মাথা ঘুরানো বা বমি না হয়, তবে তিনি রোজা রাখতে পারেন । তবে ইফতারে বা সেহরিতে পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে । সেই সাথে পানিও খেতে হবে প্রচুর ।

আরো পড়ুন

শীতের শাক – সবজি : পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
২. মাঝের তিন মাস

এই সময়ে বাচ্চার গঠন মোটামোটি হয়ে যায় । যে কারণে মা এই সময়টাতে কিছুটা ভালো অনুভব করেন । তাই মায়ের যদি জটিল কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে তিনি এই সময়টাতে রোজা রাখতেই পারেন । তবে সবকিছু করতে হবে ডাক্তারের পরামর্শে । আর যদি মায়ের ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে রোজা না রাখা সবদিক দিয়ে উত্তম ।

৩. শেষের তিন মাস

শেষের তিন মাসে যেহেতু গর্ভের সন্তান দ্রুত বাড়ে । সেহেতু এই সময়টাতে মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টি দরকার হয় । তাই এই সময়টাতে মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া খুবই জরুরি । সেই সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হয় । তাই ডাক্তাররা এই সময়ে রোজা না রাখার জন্য বলেন । তবে, মা যদি পরিপূর্ণ সুস্থ্য থাকেন, তবে শরীরে পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগান দিয়ে রোজা রাখতে কোন বাধা নেয় । ইফতার ও সেহরিতে দুধ, কলা, খেজুর, বিভিন্ন ধরনের ফল – মুল, আমিষ ও প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং পানি পর্যাপ্ত খেতে হবে ।

রোজায় গর্ভবতী মায়ের খাবার

গর্ভবতী মা ইফতার বা সেহরিতে সুষম খাবার খেতে হবে । পানি খেতে হবে প্রচুর তবে, একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খেতে হবে । সেই সাথে ফলের জুস, শরবত খাওয়া যেতে পারে । ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে । দুধ, কলা, খেজুর, সব ধরণের সবজ্বি, মাছ, মুরগির মাংস, সব ধরণের ডাল, গমের রুটি ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে ।

যেসব খাবারে বুক জ্বালা পোড়া করে, বা গ্যাসের সমস্যা তৈরী করে সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে । সব ধরণের গুরুপাক, ভাজাপোড়া, বেশি তেলযুক্ত খাবার সম্পুর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে ।

আরো পড়ুন

কাগজি লেবুর পুষ্টিগুণ ও ১০টি উপকারীতা
গর্ভবতী মায়ের রোজার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন – “ তোমাদের ভেতর যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা ( রোজা ) পূর্ণ করবে “ ।

এ ব্যাপারে কিছূ আলেমের মতে, যদি নারীর রোজ ভঙ্গের কারণ হয় ’সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা’ তাহলে তাদের রোজাগুলো কাযা আদায়ের পাশাপাশি প্রতি রোজার বদলে একজন মিসকিনকে একবেলা করে পেট পুরে খাওয়াতে হবে ।

আর ইমাম আবু হানিফা এবং তার মাযহাবের অনসারি আলেমদের মতে, ‘ কোন অবস্থাতেই গর্ভবতী মাকে কাযা আদায় ছাড়া অন্যকিছু করতে হবেনা । কারণ, কুরআন বা হাদীসে খাদ্য প্রদানের কোন দলিল নেই’ । আর এটাই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত ।

সবশেষে যেটা বলা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, যদি গর্ভবতী মা রোজা রাখেনই, সুষম খাবারের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে । শরীরে যেন পুষ্টির ঘাটতি না পড়ে সেটা দেখতে হবে ।

Related posts

ক্যান্সার প্রতিরোধে যে সকল খাবার পরিহার করা জরুরী

jibondharaa

কোন কোন খাবারে আয়রন পাওয়া যায় : শরীরে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা

jibondharaa

ক্যান্সারের ১০ টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

jibondharaa

Leave a Comment