Image default
স্বাস্থ্য

গর্ভপাতের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় ।

গর্ভপাতের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় ।

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি । নবাগত সন্তানকে নিয়ে মায়ের থাকে আকাশ ছোয়া স্বপ্ন । কিন্তু মায়ের সেই স্বপ্ন কি সবসময় বাস্তব হয়ে ধরা দেয় ? না দেয়না । একটি গর্ভপাত নিমিষেই সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিতে পারে । কিন্তু অকাল গর্ভপাত কেন হয় ? গর্ভপাত বিভিন্ন কারণে হতে পারে । আজ আমরা কারণগুলো জানবো । কারণ জানা থাকলে বিপদ এড়ানো সহজ হয় ।

গর্ভপাতের কারণ

গবেষণায় দেখা যায় গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত বেশি হয় । পরবর্তি মাসগুলোতেও গর্ভপাতের ঝুকি থাকে । তবে প্রথম তিন মাসে ঝুকিটা সবচেয়ে বেশি । অনেকগুলো কারণে গর্ভপাত হতে পারে । যেমন-

১. জরায়ুর মুখ যদি ভ্রুণকে জরায়ুর ভেতর ঠিকঠাক ধরে রাখতে না পারে ।

২. শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর গঠনগত কোন ত্রুটি থাকলে গর্ভপাত হতে পারে ।

৩. গর্ভবতী মায়ের যদি থাইরয়েড এর সমস্যা থাকে তবে বাচ্চার বিকাশে  ব্যাঘাত ঘটে । এই সমস্যা থেকেও গর্ভপাত হতে পারে ।

৪. গর্ভবতী মায়ের যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে সেটি অবশ্যই নিয়ন্ত্রন করা উচিত । কারণ, মাত্রারিক্ত রক্তচাপের কারণে গর্ভপাত হতে পারে ।

৫. যদি গর্ভধারণের আগে থেকেই মায়ের ডায়াবেটিস থাকে এবং সেটি যদি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে তবে অনেক সময় গর্ভপাত হতে পারে ।

৬. গর্ভবতী মা যদি মানসিক দুশ্চিন্তা করেন বা কোন কারণে মনের উপর প্রেসার পড়ে , তবে গর্ভপাত হতে পারে ।

৭. পড়ে গিয়ে বা কোন ভাবে পেটে আঘাত পেলে গর্ভপাত হতে পারে ।

৮. হরমোন এর ভারসাম্য না থাকলে গর্ভপাত এর ঝুকি থাকে ।

আরো পড়ুন

হাইপো – থাইরয়েড কি : লক্ষণ ও চিকিৎসা ।
গর্ভপাতের লক্ষণ

গর্ভধারণের দ্বিতীয় সপ্তাহে ( ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে) ইমপ্লান্টেনস এর কারণে সামান্য রক্তপাত হতে পারে, এটা স্বাভাবিক । এই রক্তপাত নরমাল মাসিকের রক্তপাতের চেয়ে কম হয় । কিন্তু অতিরিক্ত রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত । গর্ভকালিন সময়ে অস্বাভাবিক রক্তস্রাব গর্ভপাতের অন্যতম লক্ষণ । গর্ভকালিন সময়ে যদি রক্তপাত হয় এবং সেটা যদি সাধারণ পিরিয়ডে যে রক্তপাত হয়ে থাকে তার চেয়ে বেশি হয় । তবে কাল বিলম্ব না করে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে । এটা গর্ভপাতের লক্ষণ ।

যাদের গর্ভপাতের ঝুকি বেশি

প্রত্যেক গর্ভবতী নারীই আসলে গর্ভপাতের ঝুকিতে থাকেন । তবে যাদের ঝুকি বেশি, আসুন তাদের প্রতি দৃষ্টি দেয় ।

১. যেসব গর্ভবতী মায়েদের বয়স ৩৫ বা তার বেশি । মহিলাদের বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে গর্ভপাতের ঝুকিও বৃদ্ধি পায় ।

২. যাদের পূর্বে একাধিক বার গর্ভপাত হয়েছে, তাদের আবারও গর্ভপাতের ঝুকি থাকে ।

৩. গর্ভবতী মা যদি নেশায় আসক্ত থাকেন, যদি তিনি নিয়মিত সিগারেট বা যেকোন মাদক গ্রহন করেন, তবে গর্ভপাত ঘটতে পারে ।

৪. গর্ভবতী মায়ের শরীরে যদি অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে তাহলেও গর্ভপাতের ঝুকি থাকে ।

৫. যেসব মায়েদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকে তাদেরও গর্ভপাতের ঝুকি বেশি থাকে ।

৬. অতিরিক্ত ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, যেমন তেতুল । অতিরিক্ত খেলে গর্ভপাতের ঝুকি থাকে ।

গর্ভপাত প্রতিরোধ করার উপায়

গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রথম তিন মাস খুবই ঝুকিপূর্ণ । এ সময় গর্ভবতী মাকে একটু সাবধানে থাকতে হয় । এ সময় ভারী কোন কাজ করা যাবেনা । সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।

তাছাড়া , গর্ভধারণের পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে । পূর্বে গর্ভপাত হয়ে থাকলে পুনরায় গর্ভধারণের আগে কিছু চেকআপ করিয়ে নেওয়া উচিত । আগের বারের গর্ভপাতের কারণ খুজে বের করা এবং সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া । যেন পুনরায় আবার একই কারণে গর্ভপাত না হয় । প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমন না করা ।

আরো পড়ুন

ডাবের পানির উপকারীতা : ডাবের পানি খাওয়া কেন প্রয়োজন
গর্ভপাত এড়াতে কেমন খাবার খেতে হবে

গর্ভপাতের ঝুঁকি এড়াতে ডাক্তার অনেক সময় প্রজেস্টোরেন হরমোন সমৃদ্ধ ওষধ দিয়ে থাকেন । তাছাড়া বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি এড়াতে ফলিক এসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ওষধ দিয়ে থাকেন । ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষধগুলো খেতে হবে ।

এর বাইরে, ধুমপান, মাদকগ্রহন, চা, কফি বা চকলেট যেগুলো রক্তচাপ বাড়ায় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে । ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষধ সেবন না করা । ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষধ সেবন করলে গর্ভের বাচ্চা ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে ।

সর্বশেষ কথা হলো, গর্ভবতী মায়ের জন্য পরিবারিক এবং পারিপার্শিক সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন । এ সময় হরমোনজনিত কারণে মা বিষণ্ণ বোধ করতে পারেন । অনাগত সন্তানের সুরক্ষা ও ক্ষতির আশঙ্কা তাকে বিষণ্ণ করে রাখে । তাই, পরিবারের সদস্যদের উচিত গর্ভবতী মাকে সবসময় সাহস দেওয়া এবং তার শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা । সেই সাথে তার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পরিপূর্ণ বিশ্রামের ব্যবস্থা করা ।

Related posts

এইস আই ভি (HIV) কি ? কেন হয়, প্রতিরোধের উপায় ।

jibondharaa

থাইরয়েড ক্যান্সার কত প্রকার । এর লক্ষণ ও চিকিৎসা ।

jibondharaa

এন্ডোস্কোপি কি ? এন্ডোস্কোপির নিয়ম

jibondharaa

Leave a Comment