Image default
স্বাস্থ্য

ক্যান্সার প্রতিরোধে যে সকল খাবার পরিহার করা জরুরী

ক্যান্সার প্রতিরোধে যে সকল খাবার পরিহার করা জরুরী

বিশ্বে প্রতিদিনই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । আধুনিক জীবনযাত্রার নানা ধরনের ক্ষতিকর অভ্যাস আর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এই রোগের জন্য অনেকটাই দায়ী । মানবদেহে ১০০ ধরণের বেশি ক্যান্সার হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন । এসব ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা । ঠিক কি কারনে ক্যান্সার হয় তা এখনও নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সাধারণ কিছু কারণ খুজে পেয়েছে গবেষকরা । এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা ।

ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে যে সকল খাবার পরিহার করা জরুরী :
১ । রেডিমেড খাবার :

বাস্তবিক অর্থে বেশির ভাগ টিনজাত খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকি হতে পারে । এসব খাদ্য বিশপেনল-এ বা বিপিএ দিয়ে প্রস্তত করা হয় । ২০১৩ সালে জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর এক গবেষণায় দেখা যায় । বিপিএ শরীরে ব্যপক ক্ষতিসাধন করে ,যার প্রভাব ব্রেনেও পড়ে ।

chancer2.jpg
প্রক্রিয়াজাত মাংশ

 

২ । প্রক্রিয়াজাত গোশত :

দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়ে থাকে গোশতে । এর মধ্যে হট ডগ ,বেকন-সহ বিভিন্ন ধরনের লাঞ্চের গোসতে রয়েছে  কেমিক্যাল । এসব খাদ্য ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে ।

৩ । চাষ করা স্যালমন :

মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ।কিন্তু যতটা সম্ভব স্যালমন মাছটি ত্যাগ করা উচিত । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে ,যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ ভাগেরও বেশি চাষের স্যালমনের ভোক্তা রয়েছে । চাষের এই মাছকে কৃত্রিম খাদ্য ও রাসায়নিক , কীটনাশক এবং অন্যান্য খাদ্য দেওয়া হয় , যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী । যদিও এই মাছ স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারি ওমগো থ্রি রয়েছে । তবু চাষের ক্ষেত্রে তা পরিপূর্ণ থাকে না ।

৪ । পটেটো চিপস :

হ্যা ,পটেটো চিপস খুবই মুখরোচক খাদ্য । মজাদার , সস্তা ,জলখাবার হিসেবে এর কোন জুড়ি নেই । তবে স্বাস্থ্যের পক্ষে এই জলখাবার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । পটেটো  চিপসে থাকা উচ্চ ক্যালারী শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে । নিউ ইংল্যান্ডের চিকিৎসা জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় ,ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আলুর চিপস যথেষ্ট । এছাড়া রক্তচাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এটা দায়ী । এমনকি দায়ী ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও ।

৫ । হাইড্রোজেনেটেড অয়েল :

প্রথমে উদ্ভিজ্জ তেল দিয়েই শুরু করা যাক । উদ্ভিজ্জ তেল তার উৎসের কেমিক্যাল বাদ দিতে পারে না ,যা স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখে । অন্যদিকে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় । এই তেল শরীরের সেল গঠনে প্রভাব ফেলে ,যা ক্যান্সারের  সঙ্গে সম্পৃক্ত ।

৬ । খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ ও স্মোকিং ফুড :

খাদ্য সংরক্ষণে নাইট্রেড বা নাইট্রেস ব্যবহার করা হয় । এছাড়া মাংশের রঙের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয় । তবে এটা ক্যান্সারের কারণ হয় না । ধূমপান ও নন –নাইট্রেস সমৃদ্ধ খাবারের কেমিক্যাল ক্যান্সারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে । পুড়িয়ে অথবা ভেজে তৈরী করা খাবার কিংবা স্মোকীং ফুড হিসেবে পরিচিত মাংশের তৈরী অনেক খাবারে প্রচুর চর্বি ও লবণ থাকে । আচারেও থাকে অধিক পরিমাণে লবণ । এসব খাবার কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ায় ।

৭ । প্রক্রিয়াজাত সাদা আটা :

আটা শর্করা জাতীয় খাবার , যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী । কিন্তু প্রক্রিয়াজাত সাদা আটা খুবই অপকারী ।রিফাইনের ফলে এই আটা তার সাধারণ পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে । আটার মিল্গুলো তা সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে ক্লোরাইন গ্যাস নামে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করছে , যা খুবই ক্ষতিকর ।

৮ । পরিশোধিত চিনি :

পরিশোধিত চিনির ঝুকি বিস্তর । এই চিনি স্থুলতার জন্য দায়ী । যুক্তরাষ্ট্র ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ স্থুলতা  বা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছে । পরিশোধিত চিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছাড়াও ক্যান্সার সেলের জন্ম দিচ্ছে ।

৯ । কৃত্রিম চিনি :

অনেক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার্স বা কৃত্রিম চিনি খান । কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় , এই কৃত্রিম চিনি তৈরীতে ব্যবহৃত হয় সোডা ও কফি সুইটেনার্স  । যার মাত্রাছাড়া ব্যবহারে ক্যান্সার হতে পারে ।

১০ । অ্যালকোহল :

ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা জানান , মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করলে এমন ধরনের প্রবণতা সৃষ্টি হয় , যা মানবদেহ সূর্যের সংস্পর্শে এলে ত্বকের ওপর অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাব কয়েকগুণ বেড়ে যায় । তারা বলেন , ইথানল মানবদেহে প্রবেশ করে এক ধরনের তেজস্ত্রিয়তা বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে , যা ত্বককে  অতিবেগুনী রশ্মির প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে । আর এই সময় মদ্যাপায়ীরা সূর্যের আলোর কাছাকাছি গেলে এবং সানস্ত্রিনের মতো দেহকে সূর্য থেকে রক্ষার কোনও ব্যবস্থা না নিলে কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতির শিকার হয় । অ্যালকোহলের মাত্রা বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ে ।

আরো পড়ুন:

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
১১ । রেড মিট :

মাংশ অনেকেরই প্রিয় । কিন্তু লাল মাংশ স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর । হতে পারে প্রাণঘাতি ক্যান্সারও । তাই বিজ্ঞানীরা বলেছেনে , অধিক পরিমানে লাল মাংশ ভোজন ত্যাগ করতে হবে । লাল মাংশে এন-নিট্রোসোডিয়েথিলামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে । যার সামান্য মাত্রাই শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম । এছাড়া লাল মাংশে থাকা উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল শুধু অন্ত্র ও পাকস্থালীর ক্যান্সার সৃষ্টিতেই কাজ করে না , এটা ভয়ংকরভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়ে দেয় । তাই এই মাংশ ভক্ষণে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা ।

১২ । মাইক্রোওয়েভ পপকর্ণ :

ভুট্টার খই বা পপকর্ণ যে কখনও মারণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে তা কোনওদিন হয়তো কল্পনাই করেননি কেউ । কিন্তু সত্য হল , পপকর্ণ  স্বাস্থ্যের জন্য বেশ বিপদজনক হতে পারে । প্রথমে বলা যেতে পারে ,পপকর্ণ  রাখা প্যাকেট ব্যাগের কথা । এই ব্যাগে বিষাক্ত পারক্লোরা অক্টায়নিক  এসিড মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে । যেকোনো প্রোটিন গরম খেলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ।

১৩ । নন-অর্গানিক ফল :

বিভিন্ন ধরনের নন-অর্গানিক ফল -ফলাদিতে বিশেষ করে  আ্যর্টাজিন ,থায়োডিকার্ব এবং অর্গানাপসফেটসে উচ্চ নাইট্রোজেন থাকে । কীটনাশক বা রাসায়নিক সার হিসেবে ব্যবহার হওয়া ইউরিয়াও খাদ্যে প্রয়োগ করা করা হয় , যেগুলো ক্যান্সারের মতো রোগের কারন হতে পারে । এছাড়া নিরব ঘাতক নন-অর্গ্যানিক বা অজৈব ফল প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে দেয় ।

আরো পড়ুন:
অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রাকৃতিক চিকিৎসা এর লক্ষণ ও প্রকারভেদ

Related posts

কোলোনোস্কোপি কি , কোলোনোস্কোপি সম্পর্কে জানুন ।

jibondharaa

প্রতিদিন পুদিনা পাতার চা পান করুন , দূর হবে ৮টি মারাত্মক সমস্যা

jibondharaa

চিরতার ঔষধী গুণ ।। চিরতা কেন খাবেন

jibondharaa

Leave a Comment