জীবনধারা হেলথ : মানুষের শরীরে কিডনির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ? এককথায় অপরিহার্য । বেঁচে থাকার জন্য কিডনি সুস্থ রাখার বিকল্প নেই। কিডনি মানুষের শরীর থেকে দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ ছেকে বের করে দেয়। শরীরে রক্তের পরিশোধন ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে কিডনি কাজ করে।
কিডনি সুস্থ না থাকলে শরীরে নানা বিপত্তি ঘটে। আর কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। তাই অসুস্থ হবার পূ্র্বেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।
কিডনি ভালো রাখার প্রয়োজনীয় উপায় জেনে নিন
১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা :
উচ্চ রক্তচাপ কিডনিকে ঝুকিতে ফেলে । তাই কিডনি ভালো রাখার জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা ও লবন কম খেতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা জানার জন্য নিয়মিত বিরতিতে প্রেসার মাপা উচিত । রক্তচাপ ১৩০/৮০ বা এর কম রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা :
শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি থাকলে কিডনি, লিভার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী । কেউ ডায়াবেটিসে আক্রন্ত হয়ে থাকলে ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলুন । মিষ্টি ও শর্করা জাতীয় খাবার কম খান ।
৩। পরিমাণ মতো পানি পান করা :
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন । আর বেশি পরিশ্রম করলে বা অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে পানি পানের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করতে হবে । এতে করে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকবে ।
৪। ওষধ খেতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে :
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষধ খাওয়া ঠিক নয় । ফার্মেসি বা গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষধ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে । কারন, সবধরনের ওষধই কম বেশী কিডনির জন্য ক্ষতিকর । বিশেষ করে ব্যাথার ওষধ । তাই কিডনি সুরক্ষায় ওষধ খেতে হবে নিয়ম জেনে আর ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ।
৫ । প্রোটিন জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করা :
লাল মাংস যেমন – গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া এসব প্রাণীর মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে । এ জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিডনির উপর চাপ ফেলে । তাই প্রানিজ প্রোটিন কম গ্রহন করতে হবে । ফাস্টফুড ও বিটলবণ জাতীয় খাবার কিডনির উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে । বাইরের প্যাকেটজাত প্রায় সব খাবারেই বিটলবণ ব্যবহার করা হয় । এজন্য কিডনি সুস্থ রাখতে এসব প্যাকেটজাত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত ।
আরো পড়ুন কিডনি রুগি কি খাবেন ।। কি খাবেন না
৬ । মাদকাসক্তি ত্যাগ করতে হবে :
সকল প্রকার মাদকদ্রব্য কিডনির উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে । ধুমপান ও মদপানের মতো মাদকদ্রব্য গ্রহনের মাধ্যমে কিডনির রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে । যার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে । এজন্য কিডনি ভালো রাখতে মাদকাসক্তি ত্যাগ করতে হবে ।
৭। প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি গ্রহন না করা :
মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় । দৈনিক এর বেশি ভিটামিন সি গ্রহন করলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভবনা থাকে। এজন্য কিডনি ভালো রাখতে প্রতিদিন ৫০০মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি গ্রহন না করা উচিত ।
৮ । কোমল পানীয় পরিহার করা :
বর্তমান সময়ে কোমল পানীয় এবং বিভিন্ন প্রকার এনার্জি ড্রিঙ্কস অত্যান্ত জনপ্রিয় । কিন্তু এসব কোমল পানীয় এবং এনার্জি ড্রিঙ্কস কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । তাই কিডনি সুস্থ রাখতে এগুলো পরিহার করে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত ।
৯ । লবন কম খেতে হবে :
প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবন কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর । আর মানুষের শরীরের জন্য প্রতিদিন এক চামচ লবন প্রয়োজন হয় । এজন্য কিডনি ভালো রাখতে লবন কম খাওয়া জরুরি ।
১০ । নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে :
যেহেতু কিডনির সমস্যার তেমন কোনো পূর্ব লক্ষণ বোঝা যায় না তাই প্রতি ছয় মাস পরপর কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত । এছাড়াও যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা আছে তাদের কিডনি রোগের ঝুকি থাকে , তাদের নিয়মিত বিরতিতে কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত ।
এছাড়া, শিশুদের গলাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে । এসব রোগ থেকেও কিডনির প্রদাহ হতে পারে । ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়, বমি, প্রসবে সংক্রমন এবং পানি শুন্যতায় আক্রান্ত হলে অবহেলা করা চলবেনা । কারণ, এসব রোগ থেকেও কিডনি বিকল হতে পারে ।।
আরো পড়ুন ঔষধী ফল বেলের স্বাস্থউপকারীতা ও পুষ্টিগুণ