Image default
পুষ্টি

কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারীতা ও সতর্কতা

কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারীতা ও সতর্কতা

কামরাঙ্গা হলো দেশীয় মৌসুমী ফল , তবে কিছু কিছু গাছে এটি সারা বছর পাওয়া যায় । কামরাঙ্গা কাঁচা অবস্থায় কস জাতীয় টক এবং পেঁকে গেলে টক-মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে । প্রায় প্রত্যেকেরই পছন্দের এ ফলের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য-উপকারীতা । কামরাঙ্গা ভিটামিন এ ও সি এর খুব ভালো উৎস , যা চোখের জন্য উপকারী ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এছাড়াও ফলটিতে রয়েছে আয়রন , ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন প্রকারের খনিজ যা আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করে । তবে কামরাঙ্গার অল্প কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে , এ লেখার মধ্যে ক্ষতিকর দিকটির আলোচনাও করা হবে ।

 

কামরাঙ্গার উপকারীতা সমূহ জেনে নেই :

১ । ঠান্ডা-জ্বর ভালো করে :
kamranga6.jpg
কামরাঙ্গা গাছ , ছবি-সংগ্রহীত

কামরাঙ্গাতে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । ফলে ঠান্ডা-জ্বর ও সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে ।  কামরাঙ্গা দীর্ঘদিনের জমাট বাধা কফ বের করে দিয়ে কাশি উপশম করে এবং কামরাঙ্গা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা দ্রুত ভালো হয় । এছাড়া ফলটি মুখে রুচি ফিরিয়ে আনে, একই সাথে মুখের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধেও কাজ করে ।

২ । ত্বক সুস্থ রাখে :

ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কামরাঙ্গা কার্যকরী ভুমিকা রাখে । মূলত এর জীবাণুনাশক ও ত্বিকের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার গুণের কারনে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা  যেমন- ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমাধানে সহায়তা করে । অনেকেই ব্রণের সমস্যাতে ভুগেন , তাঁদের জন্য কামরাঙ্গা ঔষধের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে ।

৩ । হজমশক্তি বৃদ্ধি করে :

যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কামরাঙ্গা খুবই উপকারী । কেননা এটি বদহজম দূর করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে । কামরাঙ্গাতে রয়েছে প্রচুর আঁশ , ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে । এছাড়া কামরাঙ্গা মুখের রুচী ফেরাতে ও পেটের ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকরী ।

৪ । রক্ত পরিশোধন করে :
kamranga_flower_88.jpg
কামরাঙ্গা ফুল, ছবি-সংগ্রহীত

কামরাঙ্গা রক্ত পরিশোধন করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এবং কামরাঙ্গার পাতা ও কচি ফলের রসে আছে ট্যানিন, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে ।

৫ । উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে :

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কামরাঙ্গা খুবই উপকারী । এতে রয়েছে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । তাই যারা দীর্ঘদিন যাবত উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত এক ফালি কামরাঙ্গা খেতে পারেন । এছাড়া কামরাঙ্গার প্রাকৃতিক উপাদান গুলো হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে ভুমিকা রাখে

আরো পড়ুন

গাজরের পুষ্টিগুণ : উপকারিতা ও অপকারিতা
৬ । জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় করে :
kamranga2.jpg
টসটসে কামরাঙ্গা , ছবি-সংগ্রহীত

বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের ও মাঝে মাঝে কৃমির সমস্যাতে নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায় । কৃমির সমস্যা সমাধানে কামরাঙ্গা বেশ উপকারী । তবে কামরাঙ্গার পাতা ও ডগার গুঁড়া খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয় । এছাড়া  কামরাঙ্গার রসের সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খেলেও কৃমি দূর হয় ।

৭ । ব্যথা উপশমে কার্যকরী :

বাতের ব্যথা সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যথা উপশমে কামরাঙ্গার জুড়ি নেই । মাথাব্যথা কিংবা হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা এবং পেটের ব্যথা দূর করতেও এটি কাজ করে । নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে তাই সহজেই এসব ব্যথা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় ।

৮ । কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে :

একটি গবেষণায় দেখা গেছে , কামরাঙ্গা শরীরের জন্য ভালো কোলেস্ট্রল এইচডিএলের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক , এবং ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল এলডিএলের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে ।

 

কামরাঙ্গা খাওয়ার সতর্কতা

কিডনির জন্য ক্ষতিকর :
kamranga3.jpg
কাঁচা-পাঁকা কামরাঙ্গা , ছবি-সংগ্রহীত

কিডনি রোগির জন্য কামরাঙ্গা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।  যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা ক্রনিক কিডনি ফেইলিউর রয়েছে, তারা কামরাঙ্গা খেলে অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে । এই অবস্থায়  মৃত্যুর হার বেশি হয় । কামরাঙ্গায় রয়েছে ক্যারাম্বক্সিন নামক উপাদান যার কারনে এমনটা হয়ে থাকে ।

তবে সুস্থ মানুষ প্রতিদিন অল্প পরিমাণে কামরাঙ্গা খেতে পারেন কারন এর রয়েছে প্রচুর ঔষধী গুণ । কিন্তু একবারে অধিক পরিমানে কামরাঙ্গার জুস খেলে সুস্থ ব্যক্তির কিডনিও বিকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এছাড়া খালি পেটে কামরাঙ্গা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারন , এর ফলে পেটে গ্যাস , ব্যথা ও বমি হতে পারে ।

 

নিয়মিত অল্প পরিমান কামরাঙ্গার রস খেলে ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায় । এছাড়া  শুকনো কামরাঙ্গার গুঁড়া পানির সঙ্গে রোজ একবার করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায় । কিডনির জন্য ক্ষতিকর দিক ছাড়া কামরাঙ্গার রয়েছে প্রচুর ঔষধী গুণ । তাই দেশীয় এই ফলটি আপনি নিয়মিত খেতে পারেন ।

আরো পড়ুন

পাঁকা কলার উপকারীতা ।। প্রতিদিন কেন কলা খাবেন

Related posts

ডাবের পানির উপকারীতা : ডাবের পানি খাওয়া কেন প্রয়োজন

jibondharaa

পাঁকা পেঁপে ।। পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

jibondharaa

ড্রাগন ফলের উপকারীতা : ড্রাগন ফল কেন খাবেন

jibondharaa

Leave a Comment