Image default
পুষ্টি

আনারসের পুষ্টিগুণ : উপকারীতা ও অপকারীতা

আনারসের পুষ্টিগুণ : উপকারীতা ও অপকারীতা

আনারস অত্যন্ত সুস্বাদু , মিষ্টি ও রসালো একটি ফল । পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণে ভরপুর এই ফলটি খুবই সহজলভ্য । দেহের পুষ্টিসাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য এটি একটি অতুলনীয় এবং কার্যকর ফল।ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ক্যালোরি রয়েছে । এটি কোলস্টেরল ও চর্বিমুক্ত । তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ফলের কদর বেশি ।

আনারসের পুষ্টিগুণ ও উপকারীতাসমূহ জেনে নেই :

১ । পুষ্টির অভাব পূরণ :

আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

২ । বাড়তি ওজন কমাতে :

বাড়তি ওজন নিয়ে অনেকেই খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন । আনারস ওজন নিয়ন্ত্রনে বা মেদ কমাতে সহায়তা করে । কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে।সকালের যে সময়ে ফলমূল খাওয়া হয় সে সময় আনারস এবং সালাদে আনারস ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তাই ওজন কমাতে চাইলে আনারস খান।

৩ । ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে :
anaros-1.jpg
ছবি : রসালো আনারস- সংগ্রহীত

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে আনারস খুবই উপকারী। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস কাজ করে।

৪ । চোখের সুরক্ষায় :

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। নিয়মিত  আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে ।

৫ । হাড় ভালো রাখতে :

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করে গড়ে তোলে । নিয়মিত খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৬ ।দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় :

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম । ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ভালো থাকে।

৭ । হজমশক্তি বৃদ্ধি করে :

আনারস আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত আনারস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন ।

৮ । ক্যান্সার প্রতিরোধে :
anarosh.jpg
ছবি : আনারস বাগান- সংগ্রহীত

ফ্রি-রেডিকেল  মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে । আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি  যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে রক্ষা করে । ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে বাধাগ্রস্থ হয় ।

 

আনারস খাওয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহ :

অত্যন্ত উপকারী ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই ফলটি কিছু মানুষের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায় । অর্থাৎ আনারসের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে , যেগুলো আমাদের জানা খুবই জরুরী ।

১ । অ্যালার্জি বৃদ্ধি :

আনারস খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে বিশেষ করে যাদের শরীরে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যাটি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে । তাই যারা অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগছেন তারা আনারস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আনারস কেটে ভালো করে লবণ দিয়ে ধুয়ে নিবেন এতে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় ।

২ । গর্ভপাতের ঝুঁকি :

গর্ভাবস্থায় নারীদের আনারস খেতে বারণ করা হয় । আনারস খাওয়ার ফলে  গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে । গর্ভাবস্থার পরে চাইলে আনারস খেতে পারেন কিন্তু শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

৩ । রক্তে সুগার বৃদ্ধি :

আনারসে প্রাকৃতিক চিনির পরিমান বেশি থাকে ।  আনারসের রয়েছে  ২ টি চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর ।  আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দেহের ক্ষতি, এটি খাওয়ার উপর নির্ভর করে । তাই আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন ।

৪ । দাঁতের জন্য ক্ষতিকর :

আনারস খেলে সবসময় উপকারই হয়না কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় । যাদের দাঁতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো ।

৫ । কাঁচা আনারস :

অনেকেই কাঁচা আনারস ব্যবহার করে থাকেন জুস বানানোর জন্য কিন্তু এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত। মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস খাওয়ার কারণে বমির প্রবণতা দেখা দেয় । এছাড়া কাঁচা আনারসে রয়েছে অনেক বেশি পরিমানে এসিডিটি যা আমদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে ।

আনারস অত্যন্ত উপকারী একটি ফল । এর ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে সাবধানতা অবলম্বন করে যদি  আমরা খেতে পারি তবে নিসন্দেহে এটি স্বাস্থউপকারী হবে ।
আরো পড়ুন

পাঁকা পেঁপে ।। পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

নিয়মিত আঙুর খাওয়ার উপকারীতা : আঙুরের পুষ্টিগুণ

Related posts

কমলা লেবুর পুষ্টিগুন ।। নিয়মিত কমলা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়

jibondharaa

কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারীতা ও সতর্কতা

jibondharaa

ড্রাগন ফলের উপকারীতা : ড্রাগন ফল কেন খাবেন

jibondharaa

Leave a Comment