Image default
স্বাস্থ্য

শুচিবাই বা ওসিডি কেন হয় ? এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

শুচিবাই বা ওসিডি কেন হয় ? এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

শুচিবাই (OCD) একটি মানসিক ব্যাধি । মনোরোগবিদ্যা অনুসারে এর নাম “অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার” । এর দুটি অংশ একটি অবসেশন অপরটি কম্পালেশন । অবসেশন বলতে বুঝায়  কাজের মাঝে যখন মনের মধ্যে একই চিন্তা , অনুভুতি , ধারনা বারবার আসে । অপরদিকে কম্পালেশন বলতে বুঝায় যখন কেউ একই আচরণ বারবার করে । এই আচরণগুলো রোগি ইচ্ছা করে প্রতিরোধ করতে পারেন না , যদিও তিনি অনুভব করেন যে , এগুলো হচ্ছে মনের মধ্যে অস্থিরতা ও উদ্বেগের ফল । রোগী প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাতে এটি আরো বৃদ্ধি পায় ।

বিশ্বে শুচিবাই(OCD) রোগের হার শতকরা দুই থেকে তিন জন । বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে এ রোগের হার সমান , কিন্তু কিশোর কিশোরীদের ক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অধিক মাত্রায় আক্রান্ত হয় । ছেলেরা গড়ে ১৯ বছর বয়সে ও মেয়েরা গড়ে ২২ বছর বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয় । এটি শিশুদের ক্ষেত্রেও হতে পারে । যারা একাকি জীবনযাপন করেন , বিবাহিতদের চেয়ে তাদের কে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায় । তবে এমনটাও হতে পারে একাকিত্বের কারণে নয় বরং তারা শুচিবাই(OCD) এ আক্রান্ত থাকার কারণে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছেন না ।

শুচিবাই(OCD) রোগের লক্ষণাবলী :

অবসেশন লক্ষণসমূহ-

  • চিন্তার অস্বাভাবিকতা
  • মনের মধ্যে অন্তঃদ্বন্দ্ব
  • মনের মধ্যে তাড়না
  • একই মানসিক কাজ বারবার করা
  • রোগ সংক্রমনের আতঙ্ক
  • কাজ নিখুঁত করার তাড়না
  • অস্বাভাবিক সন্দেহবাতিকতা
  • বারবার যৌন চিন্তা
  • আক্রমণাত্বক মনোভাব
  • অন্যান্য একই ধরনের মানসিক অবস্থা ।

ocd2.jpg

কম্পালশন লক্ষণসমূহ-
  • বার বার হাত ধোয়া
  • বার বার চেক করা
  • বার বার গণনা করা
  • বার বার প্রশ্ন করা
  • বার বার নিজের দোষ স্বীকার করা
  • কাজ যথার্থভাবে করার জন্য উৃগ্রীব হওয়া ।
  • সামর্থের অতিরিক্ত কাজকর্ম ও বিষয়বস্তুতে জড়িয়ে পড়া ও সেগুলো হ্রাস করতে অক্ষম হওয়া ।
  • অন্যদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অমূলক তুলনা করা ।
আরো পড়ুন
অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রাকৃতিক চিকিৎসা এর লক্ষণ ও প্রকারভেদ

উপরের লক্ষণাবলী কারো সবসময় থাকে , কারো মাঝে মাঝে হয় । কারো এ অভ্যাস খারাপের দিকে যায় , কেউ নিরাময় লাভ করে , কারো শুধু অবসেশন হয় , কারো কম্পালশন হয় , অথবা দুটোই সমান হয় । সবার ক্ষেত্রে সব লক্ষণ থাকে না । রোগী রোগ সংক্রমণের ভয়ে বার বার হাত ধোয়া , কিংবা অন্য লোকদের এড়িয়ে চলে । সন্দেহবাতিকতার কারণে বার বার চেক করে , আগুন লাগার ভয়ে বার বার চুলা নিভালো কিনা দেখে । ছোর আসার ভয়ে ঘরে তালা লাগালো কিনা বার বার পরীক্ষা করে । কোন কোন অবসেশন যেমন অতিমাত্রায় যৌন চিন্তা বা আগ্রহী মনোভাব ইত্যাদির বাহ্যিক কোন কম্পালশন বা বাধ্যতাধর্মী আচরণ নাও থাকতে পারে । কাজ নিখুঁত করতে যেয়ে তার কাজ খুবই বিলম্বিত হতে পারে ।

অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে হতে পারে – সে নিজের চুল টেনে উপড়াতে পারে , বার বার নখ কামড়াতে পারে । বিবাহিত জীবনে অশান্তি , ক্ষোভ থাকতে পারে ।

শুচিবাই(OCD) এর কারণ :
    • বংশগত কারণ- শুচিবাই রোগটিতে আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ জিনগত । সাধারণত বাবা-মার এ রোগটি থাকলে সন্তানেরও এ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে । বংশে কারো শুচিবাই(OCD) থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও রোগ ছড়াতে পারে ।
    • মস্তিষ্কে কোনো অসুবিধা- মস্তিষ্কের অনেক অসুখ যেমন এনকেফেলাইটিস , টরেটস সিনড্রোম ইত্যাদিতে শুচিবাই(OCD) থাকতে পারে ।
    • নিউরোট্রান্সমিটার বা স্নায়ুকোষের সমস্যা- সেরোটনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যক্রম অস্বাভাবিকতার ফলে শুচিবাই(OCD) হতে পারে ।
    • শিক্ষা সমস্যা- যাদের মধ্যে এড়িয়ে চলার প্রবণতা আছে তাদের শুচিবাই(OCD) হতে পারে । তবে শিক্ষা সমস্যা যে পূর্ণভাবে এই রোগের জন্য দায়ী তার যথেষ্ঠ প্রমাণ নেই ।
    • বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়ন্ত্রণহীনতা- কেউ কেউ নিজেকে অতিরিক্ত দায়িত্বশীল মনে করে ফলে তার মধ্যে অতিতৎপরতার সৃষ্টি হয়ে সে শুচিবাই(OCD)  রোগে আক্রান্ত হয় ।

ocd1.jpg

রোগের পরিণতি :

শুচিবাই(OCD) রোগে আক্রান্তরা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ একবছরের মাথায় কিছুটা উন্নতি বোধ করেন । যেসব ক্ষেত্রে একবছর ছাড়িয়ে যায় , সেসব ক্ষেত্রে অসুখ কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে , অবশেষে কঠিন আকার ধারন করে । রোগ গুরুতর হলে দীর্ঘদিন এমনকি ৫০ বছরও থাকতে পারে ।

শুচিবাই(OCD) রোগের চিকিৎসা :

যথাযথ সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে OCD রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । রোগমুক্তির পর আক্রান্তরা সুষ্ঠভাবে সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন । চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায় । শুচিবাই(OCD) এর চিকিৎসাসমূহ –

আরো পড়ুন
শীতে পা ফাটা রোধের প্রাকৃতিক উপায়
১ । ঔষধের দ্বারা :

শুচিবাই(OCD) আক্রান্তকে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে । তিনি যে ঔষধ দিবেন তা নিয়মমতো সেবন করতে হবে । এ রোগের ঔষধের মধ্যে ক্লোমিপ্রামিন , এসএসআরআই উল্লেখযোগ্য ।

২ । মনোচিকিৎসা :

OCD বা শুচিবাই মূলত এক ধরনের মানসিক ও স্নায়ুবিক রোগ তাই এর থেকে রক্ষায় বিভিন্ন কাউন্সেলিং বা মানসিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেয়াই শ্রেয় । মনোচিকিৎসার মধ্যে চিন্তা ও আচরণমূলক চিকিৎসা , ডাইনামিক সাইকোথেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে ।

শুচিবাই বা OCD (অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার) একটি মানসিক ব্যাধি । রোগী বা তার পরিবারের মনে করা যাবে না যে , রোগী পাগল হয়ে যাচ্ছে ; বরং যথাযথ চিকিৎসা ও রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার । রোগী ও তার পরিবার প্রয়োজনে কিছু প্রশিক্ষণ নিতে পারেন । তারা এ রোগ সম্পর্কে পুস্তিকা বা ইন্টারনেট ওয়েবসাইট থেকেও জেনে নিতে পারেন ।

Related posts

মোটা হওয়ার সঠিক উপায় । কি উপায়ে স্বাস্থ্য ভালো করা যায় ।

jibondharaa

এন্ডোস্কোপি কি ? এন্ডোস্কোপির নিয়ম

jibondharaa

থাইরয়েড ক্যান্সার কত প্রকার । এর লক্ষণ ও চিকিৎসা ।

jibondharaa

Leave a Comment