মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে । আর এই বিধিমালা নিয়ে তৈরী হয়েছে বিতর্ক । সমালোচকরা বলছেন, “এই বিধিমালার মাধ্যমে মদপান সহজ লভ্য করা হয়েছে“ । বিতর্কের কয়েকটি কারণও আছে । যেমন, বিধিমালায় বলা হয়েছে “২১ বছরের নিম্নের কোনো ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না”। এই একটি পয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষ পড়েছেন ধোয়াশার ভিতর । সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ২১ বছরের বেশি বয়স হলেই মদপান করা যাবে ।
আরও একটি পয়েন্ট নিয়ে বিতর্ক চলছে । সেটি হলো, ”কোনো এলকায় ১০০ জন পারমিটধারী মদপানকারী থাকলে ওই এলাকায় মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়া হবে” ।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডঃ দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলছেন, বিধিমালা না থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে । পারফিউম স্যানিটাইজার তৈরিতে কিংবা শিল্পে ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা অন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে । “এবারই প্রথম বিধিমালা করা হলো । এর আগে এ সংক্রান্ত কোন বিধিমালা ছিলো না । শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি অ্যালকোহলের নামে খারাপ কিছু যেন বিক্রি না হয় আর সরকার যাতে রাজস্ব পায়- এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই বিধিমালা করা হয়েছে,” ।
কি আছে বিধিমালায় ? আসুন জেনে নেই ।
২১ বছরের নীচে কোন ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোন ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে ।
হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন ।
কোন এলাকায় একশ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেয়া যাবে। অর্থাৎ কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশ জন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে ।
অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদপ্তর থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যে কোনো পথেই অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে ।
অ্যালকোহলে কোন ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে না ।
পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন ।
কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুশো জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে ।
ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে ।
বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেয়া যাবে । যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেয়া যাবে ।
আরো পড়ুন রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলবে
বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ।
বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতিমদ উৎপাদন করা যাবে ।
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না ।
সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোন বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না ।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান করতে পারবেন ।
বিদেশী মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে ।
বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে ।
যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হবে সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে ।
তবে পর্যটন কর্পোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আমদানি করতে পারবে না ।
যে সব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদার ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে ।
বিতর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুস সবুর মন্ডল জানান,”মুসলামান ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীরা মদ পান করতে পারবেন কিন্তু পারমিট নিতে হবে । আইনে এটা আগে থেকেই আছে । কিন্তু এখন বিধিমালায় সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর করা হয়েছে । এর কম বয়স হলে পারমিট পাবেন না । মুসলিম হলে তাকে সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র লাগবে স্বাস্থ্যগত কারণে পারমিট নিতে । তাদেরও বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে । আইনে এই বয়সের শর্তটি ছিল না ।”