পাঁকা পেঁপে খুবই জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল । সুস্বাদু ও অনেক বেশি পুষ্টিগুণের জন্যই সকলের কাছে এর এতো কদর। পাঁকা পেঁপেতে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিন। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ফাইবারও রয়েছে। আর পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। সেই সাথে স্বাদেও মিষ্টি, যে কারণে সুগার রোগীদের প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে দেওয়া হয়।
পেঁপের উপকারীতাসমূহ জেনে নেই :
১ । হার্ট ভালো থাকে :
নিয়মিত পাঁকা পেঁপে খেলে হার্টের বিভিন্ন জটিল রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। পেঁপের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও ভিটামিন এ, সি, ই ইত্যাদি, যা কোলেস্টেরল কমায় । যার ফলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে । এছাড়াও পাঁকা পেঁপে ফাইবার এর একটি ভাল উৎস, যা উচ্চ কলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
২ । দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে :
পাঁকা পেঁপেতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, ও ই যা আমাদের চোখের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করে । ভিটামিন এ রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে ।অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনবার পেঁপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
৩ । হজমশক্তি বৃদ্ধি করে :
বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সকলের জন্য খুবই অস্বস্থিকর এবং কষ্টদায়ক একটি সমস্যা । পেঁপে এই দুটি সমস্যারই প্রতিকার করে এবং হজমশকক্তি বাড়াতে সহায়তা করে ।পাঁকা পেপে খেলে মুখে রুচি বাড়ে, সাথে সাথে খিদেও বাড়ে তাছাড়া পাঁকা পেপে কোষ্ট পরিস্কার করে এবং বায়ু নাস করে। এ ছাড়াও পেঁপে অর্শ রোগের জন্য অনেক উপকারি।
৪ । কোলেস্টেরল হ্রাস করে :
পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে। পেঁপে খেলে মেদ কমে, এতে কোনো খারাপ কোলস্টেরল, চর্বি বা ফ্যাট নেই । তাই যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই অন্যান্য রোগের সম্ভাবনাও কমে যায়।
৫ । ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় :
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন রয়েছে । ক্যারোটিন ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় । এছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী ।
৬ । ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে :
পাঁকা পেঁপেতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে । এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে । পাঁকা পেঁপে কালো দাগ দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এক টুকরা পাঁকা পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ঘষে দিন। আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন । সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে করতে থাকেন । পেঁপেতে থাকা প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে ।
৭ । চুলের যত্নে :
চুল সুন্দর ও সুস্থ রাখতে পেঁপে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টক দইয়ের সাথে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল ঝলমলে হয়। চুল শ্যাম্পু করার আগে চুলে পেঁপে বাটা বা পেপের রস লাগালে খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এছাড়াও মাথায় উঁকুনের সমস্যা হলে পেঁপে ভালো কাজ করে । ১ চামচ পেপের আঠা ৭/৮ চামচ পানি দিয়ে ফেটে চুলের গোড়ায় কিছুক্ষন রেখে ধুয়ে ফেললে উকুন মরে যায় ।
৮ । অর্শ ও কৃমিনাশক :
যেকোন কৃমি সমস্যায় পেঁপে ভালো ভূমিকা রাখে । কাঁচা পেঁপের আঠা চিনি বা বাতাসার সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শ ও জন্ডিস সহ লিবারের বিভিন্ন রোগ ভালো হয়। কৃমির সমস্যা হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে । এরপর আধা ঘন্টা পরে উষ্ণ পানি আধা কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয় । এভাবে ২ দিন খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যায় । পেঁপের আঠা প্রতিদিন সকালে ৫- ৭ ফোটা আঠা বাতাসার সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয় ।
চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে ব্যথা হ্রাস করে। এজন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকাতে পাঁকা পেঁপে রাখা প্রয়োজন ।
আরো পড়ুন ডাবের পানির উপকারীতা : ডাবের পানি খাওয়া কেন প্রয়োজন ঔষধী ফল আমলকী : কেন খাবেন