কলা সহজলভ্য , খেতে সুস্বাদু মিষ্টি একটি ফল । অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফলটি খেলে বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষনিত উপকার পাওয়া যায় । পাঁকা কলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালোরি এবং পটাশিয়াম যা প্রত্যেকের শরীরের জন্য খুবই জরুরি । পটশিয়াম শরীরের সোডিয়াম অপসারণ করে রক্তনালি শিথিল রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে । কলা ভিটামিন বি৬–এর অন্যতম উৎস , যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি , স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । এ ছাড়া ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন ও ফ্যাট ।
কলার পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা সমূহ জেনে নেই :
১ । হজমশক্তি বৃদ্ধি করে :
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজমে সহায়তা করে । কলায় থাকা পেকটিন নামক ফাইবার কোষ্টকাঠিন্যের মতো সমস্যার দূরে রাখতে সাহায্য করে ।পাঁকা কলার আঁশ মল বৃদ্ধি করে । ফলে সহজেই পেট পরিষ্কার হয়ে যায় । তবে কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয় । এছাড়া নিয়মিত পাঁকা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য , পাকস্থলীর আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রান মেলে ।
২ । হার্ট ভালো রাখে :
কলাতে থাকা প্রচুর পটাশিয়াম হার্টের পেশিগুলোকে সতেজ রাখে । উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলা অত্যন্ত কার্যকরী ভুমিকা রাখে । ফলে হার্ট এ্যটাকের ঝুঁকি কমে । এছাড়া শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান পটাশিয়াম না থাকার কারনে হার্টের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। আর কলা হলো পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস।
৩ । কিডনি সুস্থ রাখে :
কলার পটাশিয়াম কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে । গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কলা খান তাদের কিডনি সমস্যাতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কম । কলার পুষ্টিগুণ কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে বেঁচে থাকতেও সাহায্য করে ।
৪ । অতিরিক্ত ওজন কমায় :
অনেকের ধারণা , কলা খেলে ওজন বেড়ে যায় । কিন্তু কলাকে ওজন হ্রাসবান্ধব ফল বলা হয়ে থাকে । কলায় থাকা রেজিস্ট্যান্স ও পেকটিন ফাইবার হজম হতে দেরি হয় , এজন্য কলা খেলে ক্ষুধা কম লাগে ও পেট ভরা থাকে দীর্ঘ সময় । তবে ওজন কমানোর জন্য একটু কম পাঁকা কলা খেলে উপকার পাওয়া যায় । কারন কম পাঁকা কলাতে রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ বেশি পরিমানে থাকে ।
৫ । দ্রুত শরীরে শক্তির যোগান দেয় :
দুর্বলতা অনুভব করলে অথবা অবসাদগ্রস্থ লাগলে ২টা পাঁকা কলা খেয়ে নিতে পারেন । এতে দ্রুত শরীরে শক্তির যোগান পাওয়া যায় এবং দীর্ঘসময় পরিশ্রম করা যায় । কলায় থাকা প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ রক্তে মিশে শরীরে শক্তি যোগায় । এছাড়া রয়েছে ডায়াটরি ফাইবার যা দ্রুত হজম হয়ে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে । কলা আমাদের দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
আরো পড়ুন পাঁকা পেঁপে ।। পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
৬ । মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে :
কলাতে থাকা এমাইনো এসিড মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে । সেরাটোনিন নামক উপদান আনন্দদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করে । এমাইনো এসিড রক্তে মিশে সেরাটোনিন তৈরী করে । ফলে বিষন্নতা ও মানসিক চাপ কমে যায় এবং শরীর ও মন চনমনে থাকে ।
৭ । রক্তস্বল্পতা দূর করে :
যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা নিযমিত কলা খেতে পারেন । কারন , কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে । এছাড়া এতে ভিটামিন বি-৬ আছে যা রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধি করে। এজন্য কলা রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী ।
৮ । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
অন্যান্য ফল ও শাকসবজির মতো কলাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট , যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এছাড়াও কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি , ই , এ , বি৬ সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান , যেসব আমাদের দেহকে অনেক জটিল রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে ।
নিয়মিত কলা খেলে মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার শক্তিশালি হয় ফলে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায় । কলা দেহের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এছাড়া কলা পাকস্থলির এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আলসার প্রতিরোধ করে । এটি আমাদের ত্বক ও অন্যান্য কোষকে ফ্রি র্যাডিকেলজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে । ফলে ত্বকে তারুণ্য ভাব বজায় থাকে এবং সহজে বুড়িয়ে যায় না । এজন্য আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুপারফুড খ্যাত এই ফলটি রাখতে পারেন ।
আরো পড়ুন শীতকালীন ফল জলপাই ।। পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা