স্কিন ক্যান্সার হলো স্কিন থেকে সৃষ্ট ক্যান্সার। এটা ঘটে অস্বাভাবিক কোষ বিকাশের কারণে যা শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করার বা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে । বর্তমান বিশ্বে নীরব মহামারীর মতো ছড়াচ্ছে এই ক্যান্সার। আমাদের সারা বছর ত্বকে কম-বেশি র্যাশ , প্রদাহ বা ঘামাচি হয়ে থাকে । এসব বেশিরভাগ সময় এমনিতেই সেরে যায় । কিন্তু ত্বকের বেশ কিছু সমস্যাকে অবহেলা করলে তা কিন্তু মারাত্মক আকার নিতে পারে , যার মধ্যে অন্যতম স্কিন ক্যান্সার । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কিন ক্যানসার হলে আমরা বুঝতে পারি না । আর এর পরিনতি ভয়ানক হয় । চামড়ার ক্যানসার এমন একটা রোগ, যা দ্রুত বিস্তার লাভ করে । আর বুঝতে দেরি হলেই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । আজকের লেখাতে আমরা স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানবো ।
কিভাবে বুঝবেন আপনার স্কিন ক্যান্সার হয়েছে ?
১ । যদি দেখেন আপনার শরীরের কোথাও ত্বকের কোনও একটু জায়গায় গোল দাগ হয়ে গিয়েছে, তাহলে বাড়বাড়ি হওয়ার আগে চিকিৎকের পরামর্শ নিন । এটিই হতে পারে চামড়ার ক্যানসারের লক্ষণ । ত্বকে ক্যান্সার হলে চামড়ার উপরিভাগে কালো, গোলাপি, লাল ও বাদামি ধরনের দাগ দেখা যায় ।
আরো পড়ুন গাউট বা গেঁটে বাতের কারণ , লক্ষণ ও চিকিৎসা
২ । স্কিন ক্যান্সার হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার এরকম দাগে চুলকানি না হয়ে জ্বলুনি দেখা দেয় ।
৩ । শরীরে তিল বা আঁচিল থাকলে তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। খেয়াল রাখুন এগুলোর আকার ও রঙে পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে কিনা । কারণ শরীরে তিল বা আঁচিল হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া ও এর আকার ও রঙ পরিবর্তন স্কিন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ ।
৪ । বয়ঃসন্ধিকাল , ঋতুস্রাব বন্ধ বা অন্য কোনো কারণে প্রায়ই ত্বকে ব্রণ ফুটে ওঠে । ব্রণ , চুল বৃদ্ধি কিংবা চুল পড়া অথবা শুষ্ক ত্বকের লক্ষণও হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে । কিন্তু এবিষয়গুলো যদি অতিরিক্ত মনে হয় তবে তবে তা স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে ।
৫ । স্কিন ক্যান্সারে ফুসকুড়ি, লাল ফোসকা বা ত্বকে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
৬ । পানি আপনার শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে । শরীর পানি শোষণ না করলে এটি ত্বকে প্রদর্শন করবে , ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে । যদি ত্বক পানি শোষণ করে তবে সাধারণত কোনো দাগ থাকবে না । প্রতিদিন চাহিদামাফিক পানি পান করার পরও যদি সমস্যা দেখা যায় তবে তা স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
৭ । নিচের ঠোঁটের চারপাশে কোনো দাগ দৃশ্যমান হচ্ছে কিনা খেয়েল রাখুন , এই স্থানে সাধারণত ব্রণ হয় না । তবে এটা হজম সমস্যা এবং এনজাইম ফাংশনসংক্রান্ত সংকেত হতে পারে । খেয়াল রাখতে হবে এটি কীট ও জীবাণু সংক্রান্ত কোনো সমস্যা কিনা ।
স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় :
আরো পড়ুন শুচিবাই বা ওসিডি কেন হয় ? এর লক্ষণ ও চিকিৎসা
১ । অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন :
সূর্যের আলো আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী । কারন এটি ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস । কিন্তু তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়ালেই সতর্ক হবেন । সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । সকাল ৯ টার পর থেকেই রোদের তেজ মূলত বাড়তে থাকে এবং তা প্রায় বিকেল ৪টার পর পর্যন্ত থাকে। এই সময়টাতে রোদে বাইরে বের হওয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন । অতিরিক্ত রোদের থেকে নিজেকে আড়ালে রাখুন। আর যদি বাইরে বেরতেই হয়, সে ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব নিজেকে কাপড়ে ঢেকে বাইরে যান । দীর্ঘ সময় ধরে কড়া সূর্যালোক সরাসরি ত্বকে লাগলে তা চামড়াকে পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যান্সারও ডেকে আনে ।
২ । অতিরিক্ত মেকআপ থেকে বিরত থাকুন :
স্কিন ক্যান্সারে নারীদের আক্রান্তের অন্যতম কারন অতিরিক্ত কড়া মেকআপ । মেকআপ যত ভালো ব্রান্ডেরই হোক না কেন , এর রাসায়নিক পদার্থ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । দীর্ঘ দিন ত্বকের উপর এসব কেমিক্যালসের আস্তরণ ক্যান্সার ডেকে আনে । তাই কড়া মেকআপ নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন । বাহির থেকে বাসায় ফিরে দ্রুত মেকআপ উঠিয়ে ফেলুন । রাতে কখনো মেকআপ নিয়ে ঘুমাবেন না ।
৩ । ঘন ঘন ব্লিচ করা থেকে দূরে থাকুন :
অনেকেই আছেন ঘন ঘন ব্লিচিং করান । এটি ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে । তাই ঘন ঘন ব্লিচ করার প্রবণতা কমিয়ে ফেলুন । বরং আস্থা রাখুন ঘরোয়া উপায়ে ত্বক চর্চার । একান্তই ব্লিচ করাতে হলে তিন মাস অন্তর করান ।
৪ । ভাল ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন :
যাদের কর্মব্যস্ত জীবনে কাজের প্রয়োজনে রোদে ঘোরাঘুরি করতে হয় ,তারা একটু বেশি খরচ করে হলেও বাজারের সেরা কার্যকরী বেশি এসপিএফ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন । সানস্ক্রিন শুধু মুখে নয় শরীরের অন্যান্য খোলা অংশেও (যেমন, হাত, গলা, ঘাড়) ব্যবহার করবেন । এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচতে পারবেন ।
৫ । নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করুন :
ত্বকের জন্য নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ তো দূরের কথা; খুব বেশি সমস্যায় না পড়লে আমরা কোনোভাবেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই না । কিন্তু এই অবহেলার কারণেই রোগ বড় আকার ধারণ করতে পারে । সব থেকে ভাল হয় যদি বড় কোনও আয়নাতে নিজেই নিজের গোটা শরীরের ত্বকের পরীক্ষা করে নিতে পারেন । ত্বকে কোনও ধরণের অস্বাভাবিকতা , ছোট দাগ বা র্যাশ যা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না , যদি খালি চোখে ধরা পড়ে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন ।
প্রতি মাসে না হলেও দুই মাসে একবার বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিজের ত্বক পরীক্ষা করুন । ছোট কোনো অসুখকে দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে সেটাই পরে বড় আকার ধারণ করে। ত্বকে অস্বাভাবিক কোনো দাগ বা প্রদাহ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান ।