জহির রায়হানের পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার । শুধু তাই নয়, তিনি একজন ভাষা সৈনিক । তিনি ১৯৬৯ সালের গন অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি স্বাধীনতার পক্ষে লেখনি ও তথ্যচিত্র নির্মানের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারাভিযানে অংশ নেন । এখন আমরা জহির রায়হানের কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ।
জহির রায়হানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
একনজরে
জন্ম | ১৯ আগস্ট ১৯৩৫ সাল
|
জাতীয়তা | বাংলাদেশি
|
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার
|
দাম্পত্য সঙ্গী | সুমিতা দেবী, সুচন্দা
|
প্রথম উপন্যাস | শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০)
|
প্রথম চলচ্চিত্র | কখনো আসেনি (১৯৬১)
|
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ (নিখোঁজ)
|
জন্ম
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ । যিনি প্রথমে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক এবং পরবর্তীতে ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন । তার মায়ের নাম ছিল সৈয়দা সুফিয়া খাতুন ।
শিক্ষাজীবন
জহির রায়হান প্রথমে কলকাতার মিত্র ইনিস্টিউটে এবং পরবর্তীতে আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কলকাতা থেকে নিজ গ্রামে চলে আসেন । জহির রায়হান ১৯৫০ সালে আমিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হন । তিনি আই.এসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ।
আরো পড়ুন শহীদুল্লা কায়সারের সংক্ষিপ্ত জীবনী
কর্মজীবন
জহির রায়হান ১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন । পরবর্তী সময়ে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন । জহির রায়হান ১৯৫৬ সালে সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন । চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে । তিনি ১৯৬১ সালে রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ”কখনো আসেনি” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে । ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ”সঙ্গম “ নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি পায় ।
সাহিত্যকর্ম
জহির রায়হান বেশ কয়েকটি গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধ রচনা করেন । তবে তিনি চলচিত্র পরিচালক হিসাবে বেশি পরিচিত ।
উপন্যাস | ১. শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০) প্রথম উপন্যাস। ২. হাজার বছর ধরে (১৯৬৪) ( চলচ্চিত্ররূপ ২০০৫) ৩. আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯) ৪. বরফ গলা নদী (১৯৬৯) ৫. আর কতদিন (১৯৭০) ৬. কয়েকটি মৃত্যু (১৯৭০) ৭. তৃষ্ণা (১৯৬২) |
গল্পসমগ্র | ১. সূর্যগ্রহণ (প্রথম গল্পগ্রন্থ ) ২. সোনার হরিণ ৩. সময়ের প্রয়োজনে ৪. একটি জিজ্ঞাসা ৫. হারানো বলয় ৬. বাঁধ ৭. নয়াপত্তন ৮. মহামৃত্যু ৯. ভাঙাচোরা ১০. অপরাধ ১১. স্বীকৃতি ১২. অতি পরিচিত ১৩. ইচ্ছা অনিচ্ছা ১৪. জন্মান্তর ১৫. পোস্টার ১৬. ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি ১৭. কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদ ১৮. কয়েকটি সংলাপ ১৯. দেমাক ২০. ম্যাসাকার ২১. একুশের গল্প |
চলচ্চিত্র( সহকারী পরিচালক হিসেবে ) | জাগো হুয়া সাভেরা (১৯৫৯) এদেশ তোমার আমার (১৯৫৯) নবারুণ (১৯৬০) যে নদী মরুপথে (১৯৬১)
|
চলচ্চিত্র( পরিচালক হিসেবে ) | ১. কখনো আসেনি (১৯৬১ )(পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত ) ২. সোনার কাজল (১৯৬২ ) ৩. কাচের দেয়াল ( ১৯৬৩ ) ৪. সঙ্গম (১৯৬৪) ৫. বাহানা ( ১৯৬৫ ) ৬. একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৬৫ ) ৭. বেহুলা ( ১৯৬৬ ) ৮. আনোয়ারা (১৯৬৭ ) ৯. দুই ভাই (১৯৬৮ ) ১০. কুচবরণ কন্যা(১৯৬৮ ) ১১. জুলেখা (১৯৬৮ ) ১২. সুয়োরাণী-দুয়োরাণী ( ১৯৬৮ ) ১৩. সংসার (১৯৬৮ ) ১৪. মনের মত বউ (১৯৬৯ ) ১৫. শেষ পর্যন্ত (১৯৬৯ ) ১৬. জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০ ) ১৭. টাকা আনা পাই (১৯৭০ ) ১৮. লেট দেয়ার বি লাইট (১৯৭০ ) ১৯. জলতে সুরজ কে নিচে (১৯৭১ ) ২০. স্টপ জেনোসাইড (১৯৭১ ) ২১. বার্থ অব আ নেশন / এ স্টেট ইজ বর্ন (১৯৭১) ২২. চিলড্রেন অব বাংলাদেশ (১৯৭১ ) ২৩. সারেন্ডার (১৯৭১ ) ২৪. প্রতিশোধ (১৯৭২) ২৫. ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩) ২৬. হাজার বছর ধরে (২০০৫ ) ২৭. পোস্টার (২০১৪ ) |
অন্যান্য রচনা | পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ (প্রবন্ধ), অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র (প্রবন্ধ) ওদের জানিয়ে দাও (কবিতা) জহির রায়হান রচনাবলি ১ম খণ্ড জহির রায়হান রচনাবলি ২য় খণ্ড |
পত্রিকা সম্পাদনা | এক্সপ্রেস (ইংরেজি সাপ্তাহিক) প্রবাহ (বাংলা মাসিক)
|
পুরস্কার
১. হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ( ১৯৬৪ )
২. কাচের দেয়াল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে নিগার পুরস্কার ( ১৯৬৫ )
৩. গল্প সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭১) (মরণোত্তর) ( ১৯৭২ )
৪. শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (মরণোত্তর) ( ১৯৭৭ )
৫. সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) ( ১৯৯২ )
৬. হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মরণোত্তর) ( ২০০৫ )
মৃত্যু
জহির রায়হান সংবাদ পান তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও অনেককে বিহারিরা মিরপুর ১২ নম্বরে আটকে রেখেছে । ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের সকালে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশের বহরের সঙ্গে ভাইকে উদ্ধারের জন্য যান । অভিযান শুরু হলে বিহারিরা কালাপানি পানির ট্যাংকের সামনে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের দিকে গুলিবর্ষণ করে । এতে তিনি নিহত হন । পরদিন ৩১ জানুয়ারি মিরপুর বিহারিদের দখলমুক্ত হলেও তার লাশ পাওয়া যায় নি ।
আরো পড়ুন মুনীর চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী
4 comments
জহির রায়হান কিভাবে গুম হোন সে বিষয় এ জানালে উপকৃত হতাম,,আর কেনোই বা উনি নিখোজ হলেন,,দয়া করে এই সম্পর্কে জানাবেন,,
ফররুখ আহমদ এবং কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে জানতে চাই
https://jibondharaa.com/ফররুখ-আহমদের-জীবনী/
জ্বী,,,,, ইনশাআল্লাহ