উচ্চতা নিয়ে আমাদের সমাজের অনেকেই হিনমন্যতায় ভোগেন । আমরা সাধারণভাবে মনে করি লম্বা হওয়া প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বংশগত একটি বিষয় । এ কারণে কেউ চাইলেও কোনো ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করে লম্বা হতে পারবে না । তবে ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয় । পিতা – মাতা কতৃক প্রদত্ত ডিএনএ আমাদের উচ্চতার ৬০% থেকে ৮০% নির্ধারণ করে দেয় । অন্যদিকে বাকি ২০% থেকে ৪০% নিজের জীবন যাপনের অভ্যাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা যায় । সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায় । সঠিক জীবন যাপন বলতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পরিমাণে ঘুম, শারীরীক ব্যায়াম ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে । আজকের টপিকস এ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে লম্বা হওয়া যায় ।
লম্বা হওয়ার বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়
একবছর বয়স থেকে যৌবন আসার আগ পর্যন্ত মানুষ প্রতি বছর ২ ইঞ্চি করে লম্বা হয় । আর যৌবন আসার পরে ২ ইঞ্চি করে বাড়ে । বৃদ্ধির এই ধারা ছেলেদের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে । তবে এটা সাধারণ হিসাব । সবার ক্ষেত্রে এই হিসাব প্রযোজ্য হয়না । আসুন জেনে নেওয়া যাক লম্বা হওয়ার সঠিক উপায় ।
সুষম খাবার গ্রহন করা
শরীরের বিকাশের জন্য সষম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরী । নিয়মিত বাদাম, দুধ, মুরগীর মাংস ও শাকসবজি খেতে হবে । এছাড়া প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবার খেতে হবে প্রচুর । এর ফলে শরীরের উচ্চতা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে । পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় তাজা ফল, সবুজ শাকসবজী এবং পরিমান মতো প্রোটিন খাবার নিয়মিত রাখতে হবে । অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে ।
আরো পড়ুন গর্ভপাতের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় ।
পর্যপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহন
হাড়ের বিকাশের জন্য শরীরে পর্যপ্ত ভিটামিন ডি থাকা খুবই জরুরী । আর রোদ ভিটামিন ডির সবচেয়ে বড় উৎস । রোদে হাঁটলে বা অবস্থান করলে শরীরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় । তবে শরীরের রঙ ভেদে রোদে অবস্থান করতে হবে । ফর্সা ত্বকের মানুষ সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে থাকলেই যথেষ্ট । কিন্তু কালো ত্বকের লোকদের ভিটামিন ডি পেতে হলে ঘন্টখানেক রোদে থাকতে হবে । শরীরে রোদ লাগানোর এই ব্যাপারটা নিয়মিত হতে হবে ।
নিয়মিত শীরীর চর্চা করা
শরীর ভালো রাখতে এবং শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীরের উচ্চাতা এমনিতেই বাড়তে থাকবে । নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলেও শরীরের মাসল, বডি এবং এলাইনমেন্ট ঠিক থাকে । যোগ ব্যায়াম শারীরীক ও মানুসিক প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে ।
আরো পড়ুন হার্ট অ্যাটকের লক্ষণ এবং যাদরে ঝুঁকি বেশি
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধির সহায়ক
দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খুবই সহায়ক । উচ্চতা বাড়াতে চাইলে, বয়স ভেদে প্রতিরাতে নিয়ম করে ঘুমাতে হবে ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন –
১. সদ্যজাত শিশু থেকে ৩ মাস বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ১৪ তেকে ১৫ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
২. ৩ থেকে ১১ মাস বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ১২ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
৩. ১ বছর বয়স থেকে ২ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
৪. ৩ বছর বয়স থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
৫. ৬ বছর বয়স থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ৯ থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
৬. ১৪ বছর বয়স থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
৭. ১৮ বছর বয়স থেকে ৬৪ বছর বয়সি শিশুদের প্রতিদিন ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।
এভাবে নিয়ম মেনে ঘুমাতে পারলে শরীরের বৃদ্ধির জন্য খুবই সহায়ক হয় ।
স্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য জরুরী
সোজা হয়ে সঠিকভাবে বসা শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক । চলাফেরার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য । দীর্ঘদিন কুঁজো বা বাকা হয়ে চলাচল করলে তাকে স্থায়ী ভাবে খাটো করে দিবে । তাই কুঁজো না হয়ে মেরুদণ্ড শোজা করে হাটচলা করা এবং বসার অভ্যাস করতে হবে ।
আরো পড়ুন হবু মায়েদের রোযা রাখার বিধান কি ?
অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা
জীবন থেকে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো বাদ দিলে শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধির সহায়ক হবে । সময় মতো খাওয়া, সময় মতো ঘুমানো, ব্যায়াম করা, ইত্যাদির প্রতি নজর রাখতে হবে । জীবন থেকে অলসতা দুর করতে হবে ।
আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী
সব সময় হাসি-খুশি থাকা মন সতেজ রাখার সহায়ক । এজন্য নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা জরুরী । কারণ, আত্মবিশ্বাস শরীর ও মনের উপর ইতিবাচক ভূমিকা রাখে । এর ফলে কিছু না কিছু উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ।
একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ছেলেদের সাধারণতো ২০ বছর বয়স ও মেয়েদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হাড় বৃদ্ধি পায় । উচ্চা বৃদ্ধির জন্য এই সময়টিতেই চেষ্টা করতে হবে । এই সময় পার হলে যে উচ্চতা বৃদ্ধি পাবেনা তা নয়, কিন্তু এই বয়সটাই বেস্ট ।