মানবজাতীর বংশধারা অভ্যাহত রাখতে স্বামী – স্ত্রীরির যৌন সম্পার্কই একমাত্র মাধ্যম । কিন্তু স্বামী – স্ত্রীরির পবিত্র এই সম্পার্ক ব্যহত হয় নানা রকম যৌন সমস্যার কারণে । নারী – পুরুষ উভয়েরই সমস্যা হয়ে থাকে । তবে, আজকে আমরা আলোচনা করবো পুরুষের যৌন সমস্যা নিয়ে ।
পুরুষের যৌন সমস্যার কারণ :
পুরুষের যৌন সমস্যা সাধারণতো দুই কারণে হয়ে থাকে । শারীরিক কারণ এবং মানসিক কারণ । উভয় সমস্যা স্বামী – স্ত্রীরির দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । তবে কারণ জানলে সমস্যার সমাধানও সহজ হয়ে যায় । আসুন কারণগুলো জেনে নেই ।
মানসিক কারণ : পরিবার, সমাজ, বা কর্মস্থলে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা । নিজের যৌন সক্ষমতা নিয়ে স্নায়ু চাপ বা অস্থিরতায় ভোগা । স্বামী – স্ত্রীরির সম্পার্কে টানাপোড়েন বা পারস্পারিক বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকা । পুরুষ যদি অতিতের কোন ঘটনার কারণে অপরাধবোধে ভোগেন । পরকিয়া সমস্যায় জড়িয়ে পড়লে । স্ত্রীর প্রতি আকর্ষনবোধ না থাকলে, ইত্যাদি মানসিক কারণে পুরুষের যৌন সমস্যা হয়ে থাকে ।
শারীরিক কারণ : যৌন সমস্যার শারীরিক কারণ অনেক ধরণের হয়ে থাকে । যেমন, হরমোণের ভারসাম্য না থাকা, রক্তনালীতে সমস্যা থাকা । দীর্ঘ মেয়াদি ডায়াবেটিসে ভোগা । হার্টে সমস্যা থাকা । কিডনি, লিভারের সমস্যায় ভোগা । নিয়মিত মাদক গ্রহন বা মদ্যপান করা । অতিরিক্ত ওষধ গ্রহন বা বিভিন্ন ওষধের পার্শ প্রতিক্রিয়ায় যৌন সমস্যা হয়ে থাকে ।
যৌন সমস্যা কত ধরণের হতে পারে ?
পুরুষের যৌন সমস্যা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে । তার মধ্যে বেশি যেটা লক্ষ্য করা যায়, সেটা হলো দ্রুত বীর্যপাত, বিশেষ সময়ে লিঙ্গ শক্ত না হওয়া, যৌন ইচ্ছা না জাগা বা আগ্রহ না জন্মানো ।
বীর্যপাত জটিলতার কয়েকটি ধরণ রয়েছে । যেমন :
দ্রুত বীর্যপাত: সহবাস শুরুর আগেই বীর্যপাত হয়ে যাওয়া বা শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া । এটাকে বলা হয় অকাল বীর্যপাত । বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন ।
বীর্যপাত না হওয়া: দীর্ঘ সময় সহবাস করার পরেও বীর্যপাত না হওয়া বা বীর্যপাতের ইচ্ছা না জাগা । এ ধরণের সমস্যা স্বামী – স্ত্রী উভায়ের জন্যই কষ্ট দায়ক হয়ে থাকে ।
আরো পড়ুন নিয়মিত আপেল খাওয়ার ১০টি উপকারীতা
বিপরীতমুখী বীর্যপাত: অনেকের বীর্যপাতের সময় বীর্য মূত্রনালি দিয়ে বের না হয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করে । শারীরিক জটিলতার কারণে এটা হয়ে থাকে । তবে এই সমস্যা তুলনামুলক কম হয়ে থাকে ।
পুরুষের যৌন সমস্যার মধ্যে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যাই বেশি । এটা সবসময় যে শারীরিক কারণে হয় তাও না, কিছু কিছু সময় মানসিক কারণেও হয়ে থাকে । যেমন, স্ত্রীর প্রতি কম আকর্ষন বা স্ত্রীর কাছে নিজের সক্ষমতা প্রমানের তাগিদ থাকলেও মনের উপর নেতিবাচক চাপ তৈরী হয়েও দ্রুত বীর্যপাত এর মতো সমস্যা হতে পারে ।
পুরুষাঙ্গ শক্ত না হওয়ার কারণ :
পৃথীবিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক পুরুষ জীবনের কোন না কোন সময় এই সমস্যায় পড়ে থাকন । পুরুষাঙ্গ উত্থিত না হওয়ার এই সমস্যাকে যৌন অক্ষমতা বলা হয় । যৌন সঙ্গমের সময় লিঙ্গ শক্ত না হওয়া বা শক্ত হলেও আবার দ্রুত নরম হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে । রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা, স্নায়ুবিক প্রবলেম, মানসিক সমস্যা, ইত্যাদির কারণে হতে পারে । মানসিক সমস্যা বলতে – অবসাদ, স্নায়ু চাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি । এছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি – লিভারের জটিলতা, লিঙ্গে আঘাত সমস্যা ইত্যাদির কারণে পুরুষাঙ্গ উত্থিত না হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে ।
যৌন চাহিদা না জাগার কারণ:
অনেক পুরুষের যৌন আকাঙ্খা থাকেনা । এই যৌন আকাঙ্খা না থাকা বা চাহিদা না জাগা মুলত টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কারণে হয়ে থাকে । টেস্টোস্টেরন হরমোন শরীরে চাহিদার তুলনায় কম থাকলে এ ধরনের সমস্যা হয় । তাছাড়া ওষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে । হতে পারে স্ত্রীরির প্রতি আকর্ষন না থাকা বা উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি থাকলে । মুলত এই সমস্যা গুলোর কারণে অনেক সময় পুরুষের যৌন চাহিদা জাগে না ।
আরো পড়ুন হাইপার-থাইরয়েড : লক্ষণ ও চিকিৎসা
চিকিৎসা :
পুরুষের যৌন সমস্যার চিকিৎসা বিভিন্ন উপায়ে সম্ভব । এটা সমস্যার ধরনের উপর নির্ভর করে । তবে সমস্যা যে ধরনের হউক নিজ স্ত্রীরির সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করলে সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় বের হয়ে আসে ।
লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার জন্য ডাক্তার এমন কিছু ওষধ ব্যাবহার করেন, যেটা পুরুষাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে যৌন সঙ্গমের জন্য লিঙ্গ শক্ত হতে সহযোগিতা করে ।
তাছাড়া দ্রুত বির্যপাত রোধ করার জন্যও ডাক্তার ওষধের দারস্ত হন । খাবার ওষধের পাশাপাশি এখন কিছু স্প্রে পাওয়া যায়, যেটা সঙ্গমের সময় স্প্রে করলে দীর্ঘসময় বির্যধারনে সাহায্য করে ।
যৌন চাহিদা না তৈরী হওয়ার জন্য দায়ি টেস্টোস্টেরন হরমোন । শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্যও হরমোনের ওষধ প্রদান করা হয়ে থাকে ।
মানসিক সমস্যার কারণে যে সব পুরুষ যৌন জীবনে ব্যর্থ, তাদের জন্য মানসিক থেরাপি নেওয়ার সুযোগ আছে । প্রশিক্ষিত কাউন্সিলরের কাছ থেকে এই থেরাপি গ্রহন করতে হয় ।
যে সমস্ত পুরুষ মানসিক সমস্যায় ভোগেন এবং যাদের মৃদু যৌন সমস্যা আছে, চিকিৎসার মাধমে সে সমস্ত পুরুষের স্থায়ীভাবে সুস্থ করা সম্ভাব । আর যাদের জটিলতা রয়েছে তাদরেও চিকিৎসার মাধ্যমে যৌন জীবন কন্টিনিউ করা সম্ভাব । তবে চিকিৎসা নিতে অবশ্যই ডাক্তারের শরানাপন্ন হতে হবে । রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষধ খাওয়া উচিত নয় ।