চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন । এন্ডোস্কোপি তেমনই একটি পদ্ধতি । যেটা দিয়ে পেটের অভ্যন্তরের ভিডিও দৃশ্য নেওয়া হয় । আজ আমরা এন্ডোস্কোপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ।
এন্ডোস্কোপি কি ?
খাদ্যনালীসহ হজম প্রক্রিয়ার সবধরনের সমস্যা সুক্ষ্যভাবে নিরিক্ষণ করার আধুনিক মাধ্যমকে এন্ডোস্কোপি বলে । এন্ডোস্কোপিতে আলো এবং ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত একটি নমনিয় নল কন্ঠনালি দিয়ে পেটের ভিতর প্রবেশ করানো হয় । এরপর একটি কম্পিউটার মনিটরে পেটের ভিতরের ছবি এক এক করে দেখা হয় ।
এন্ডোস্কোপি কেন প্রয়োজন হয় ?
যে যে কারনে এন্ডোস্কোপি করা হয়
- পেটের যন্ত্রণা ।
- আলসারের সম্ভাবনা দেখা দিলে ।
- গ্যাসট্রিক বা অন্যান্য কঠিন পেটের সমস্যা দেখা দিলে ।
- হজম প্রণালীতে রক্তক্ষরণ ঘটলে ।
- বদহজম হলে ।
- গিলে খেতে অসুবিধা হলে ।
- দীর্ঘ্যস্থায়ী কোঠ্যকাঠিন্য হলে ।
এছাড়াও ডাক্তার বায়োপসি নিতে এন্ডোস্কোপি করতে পারেন । বায়োপসি বা টিস্যু নেওয়া হয় বিশেষ কোন রোগের সন্দেহ হলে, টিস্যু ল্যাব টেস্ট করার জন্য ।
আরো পড়ুন ইকোকার্ডিওগ্রাফি কি : কেন করা হয়
এন্ডোস্কোপির জন্য কিভাবে তৈরী হতে হয় ?
প্রস্তুতী : এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার জন্য রোগীকে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা খালিপেটে থাকতে হয় । সেই সাথে লক্ষ্য রাখতে হয় পেট যেন একেবারেই পরিষ্কার থাকে । যেহেতু পরিক্ষাটি পেটের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য করা হয় সেহেতু পরিক্ষার সময় পেট পুরোপুরি খালি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । পেট সম্পূর্ণ খালি না থাকলে সমস্যা নিরুপন করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
সতর্কতা : এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার সময় লক্ষ্য রাখা হয় যাতে রোগীর কোনরকম সমস্যা না দেখা দেয় । পরীক্ষা চলাকালীন রোগীর যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকেও নজর রাখা হয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভেইন বা শিরায় ইনজেকশন ( অ্যানাস্থেশিয়া ) দিয়ে রোগীকে হাল্কা অবচেতন করা হয় ।
এন্ডোস্কোপি কীভাবে করা হয়?
হাসপাতালে বা ডায়াগন্টিক সেন্টারে এন্ডোস্কপি করা হয় । এই প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে, চিকিৎসক সেই অংশটি পরীক্ষা করে যেখানে এন্ডোস্কোপিড করতে হবে । এই প্রক্রিয়াটি এক ঘন্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে, তাই কাউকে সারাদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় না ।
এন্ডোস্কোপি পদ্ধতিটি বেদনাদায়ক নয়, তবে কিছু লোক প্রক্রিয়া চলাকালীন সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করার জন্য লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করে নেয়া হয় । যাতে রোগীর কোনও কিছুর অনুভূতি না হয় । এগুলি ছাড়াও রোগীকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার জন্য সিডেটিভ দেওয়া হয়ে থাকে ।
এন্ডোস্কপির ঝুঁকি আছে কী ?
এন্ডোস্কপি পদ্ধতি থেকে কোনও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই । তবে মারাত্মক পরিস্থিতিতে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে । আসুন আমরা আরও ব্যাখ্যা করি।
কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাস্থেসিয়ার কারণে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে ।
রক্তপাত হতে পারে ।
পরীক্ষার পরে পেট ফুলে যেতে পারে ।
যে জায়গায় এন্ডোস্কোপি করা হয় সেখানে সংক্রমণ হতে পারে ।
এন্ডোস্কোপি করার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতে ব্যাথা অনুভব হতে পারে ।
যদি কোনও ব্যক্তির কিছু লক্ষণ থাকে যেমন – শ্বাসকষ্ট হওয়া, কালো মল, বমির সাথে রক্ত, বুকের ব্যথা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি, তাহলে কোনও চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন ।
এন্ডোস্কোপি করে যে উপকার পাওয়া যায় ।
এন্ডোস্কোপি করার মাধ্যমে পেটের অভ্যন্তরে আলসার বা অন্যকোন সমস্যা থাকলে তা নির্নয় করা যায় । রোগ নির্নয় করার পর ডাক্তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যাবস্থা নিতে পারেন ।
আরো পড়ুন কোলোনোস্কোপি কি , কোলোনোস্কোপি সম্পর্কে জানুন ।