আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক সংঘাত নতুন কিছু নয় । কিন্তু বড় এই দুটি দলের সংঘাতে বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ । দেশ বা দেশের মানুষের স্বার্থে তাদের রাজনীতি, কিন্তু দল দুটির সংঘাতময় অবস্থানের কারণে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশী । এই অবস্থার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিভিন্ন দলের সাথে সংলাপ শুরু করেছেন । নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন তিনি ।
রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে বিএনপি এখনও আমন্ত্রন পায়নি । আমন্ত্রন পাবে কিনা, কিংবা আমন্ত্রণ পেলেও বিএনপি সংলাপে যাবে কিনা সেটা নিয়ে ধুয়াশা রয়েছে । কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে তা আশাব্যঞ্জক নয় ।
২৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ সংলাপ খেলা শুরু হয়ে গেছে । রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে ডেকে সংলাপ করছেন । কিসের সংলাপ? নির্বাচন কমিশন গঠন করে কী হবে? যে সরকার আছে, সে সরকারই তো নির্বাচনকে ধ্বংস করে দিয়েছে । তারা নির্বাচনব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে । আওয়ামী লীগ যত দিন সরকারে থাকবে, তত দিন নির্বাচন কমিশন করে কোনো লাভ হবে না। সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না । পুরোনো জিনিস আবার নতুন বোতলে দেখিয়ে কোনো কাজ হবে না ।২৩ নভেম্বর বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলে জেলা সদর মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন । সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে সে নির্বাচন কোনো দিন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা ১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন ।
“ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে সে নির্বাচন কোনো দিন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা ১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন ।”
এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে বিএনপির অবস্থানের কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে । তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সংলাপের বিষয়ে বিএনপি এখনো কোনো চিঠি পায়নি। চিঠি পেলে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ।
এটা তো জানা গেল বিএনপির অবস্থান । কিন্তু কি ভাবছে আওয়ামী লীগ ?
৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন বড় গলায় কথা বলছেন। এই নির্বাচনে অংশ নেব না, সংলাপেও যাব না । আপনাদের কে ডেকেছে সংলাপে ? শেখ হাসিনা গতবার সংলাপ ডেকেছিলেন, সেটার আপনারা কী জবাবটা দিয়েছেন? সেই সংলাপের পর আপনাদের ভূমিকা কী ছিল ? আপনাদের কেউ সংলাপে ডাকছে না । নিজেরাই আগ বাড়িয়ে সংলাপের কথা বলবেন না । ২৩ নভেম্বর বুধবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
“৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন বড় গলায় কথা বলছেন। এই নির্বাচনে অংশ নেব না, সংলাপেও যাব না । আপনাদের কে ডেকেছে সংলাপে ? শেখ হাসিনা গতবার সংলাপ ডেকেছিলেন, সেটার আপনারা কী জবাবটা দিয়েছেন? সেই সংলাপের পর আপনাদের ভূমিকা কী ছিল ? আপনাদের কেউ সংলাপে ডাকছে না ।”
যদিও গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবিষয়ে তেমন কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি । যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোন কথা নেয়, সেহেতু সামনের দিনগুলোতে কি ঘটতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেয় । তবে দেশের মানুষের কল্যাণের দিকটা মাথায় রেখে তারা সিদ্ধন্ত নেবেন বলে মানুষ আশা করে ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন । এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী ।