গত ৪ মাসে নির্বাচনী সংঘাতে সারা দেশে ৬৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে । মারা যাওয়া এ সমস্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ছিলেন । ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরাই এসব সংঘাতে বেশি জড়াচ্ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ‘বিদ্রোহী’ দের মধ্যে সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে । এসব সংঘর্ষে দেশি অস্ত্র থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে । নিহতের পাশাপাশি এসব ঘটনায় অনন্ত একহাজার লোক আহত হন ।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৩০ জন নিহত হয়েছেন । প্রথম ধাপে ৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩০ ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ২৪ জন নিহত হন । চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন ।
সহিংসতায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নরসিংদীতে । নরসিংদীতে এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে । ওই জেলায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেই মারা গেছেন নয়জন ।
“অবশ্য জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন এসব মৃত্যুর ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন ।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নাটঘর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদুল হক (৩৫) ও বাদল সরকার (২৫) নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে গুলির চারটি খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল শনিবার ভোরে উপজেলার কুড়িগ্রাম থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ।
ঘটনার পরপর এরশাদুল হকের প্রতিবেশী হুমায়ুন কবির ও জামাল মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় । রাত থেকে হুমায়ুন কবির, জামাল মিয়া ও তাঁদের পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন । তাঁরা এরশাদুলের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ।
এদিকে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবত্তর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে । নিহত সেলিম হোসেনের (৩২) বাড়ি ইউনিয়নের শ্রীকান্তপুর গ্রামে । গতকাল সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষুব্ধ কর্মীরা লাশ নিয়ে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন ।
নোয়াখালী সদর উপজেলায় নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে । এতে উভয় পক্ষের আটজন আহত হয়েছেন । শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নেয়াজপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের ডিশলাইন এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে । বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা পাটোয়ারীর অভিযোগ, রাত আটটার দিকে নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন ২০-৩০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ডিশলাইন এলাকায় আসেন । আমির হোসেনের লোকজন এ সময় তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালান । হামলায় তাঁর সমর্থক মো. শুভ, মো. মারুফ, মো. ইউনুস ও মো. সাগর আহত হন । তবে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমির হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা পথে তাঁর সমর্থকদের মোটরসাইকেল আটকে তাঁদের ওপর হামলা চালান ।
“শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার দায়িত্ব প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর । আকস্মিক সংঘাতগুলো ঠেকানোর উপায় থাকে না । তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।
রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার ”
আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় । শুক্রবার রাতে সারুটিয়া ইউপিতে ওই সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ পক্ষের ৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শৈলকুপা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। সংঘর্ষের সময় নৌকার সমর্থকদের ২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউপিতে। আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় নয়জন আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের বাঘারহাট বাজারে এসব ঘটনা ঘটে। ওই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী জহিরুল ইসলাম ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন।
মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হাতবোমার বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। গতকাল সকালে উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের কালাইসরদারের চর এলাকায় দফায় দফায় এসব সংঘর্ষ হয়।
2 comments
লঞ্চে আগুন নিয়ে কিছু লিখেন,,
জ্বী,,,,, অবশ্যই লিখবো । দুর্ঘটনার কারণ বিষয়ে অনসন্ধান চলছে ।