হেমন্ত শেষে শীত আসছে । দিনে অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডা অনুভব হলেও রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ছে । এসময় খুসখুসে কাশি ও গলা ব্যথা সহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যা অনুভব হয় । তাই শিশুদের আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে ঠান্ডা-কাশি , গলাব্যথা, জ্বর , নিউমোনিয়া , শীতকালীন ডায়রিয়া , চর্মরোগ ইত্যাদি দেখা দেয় । এছাড়াও শীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় । এজন্য শিশুদের শীতে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন । তাই এ সময়টা অভিভাবকদের একটু বেশি সচেতন থাকা দরকার ।
শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন যেভাবে নিবেন :
১ । সচেতনতা বৃদ্ধি :
গরমের সময় শিশুদের পাতলা জামাকাপড় পরে মেঝেতে খোলামেলা পরিবেশে রেখেছেন । কিন্তু শীতে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । রাতে সোনামণিদের খালি গায়ে রাখবেন না , জামা পরিয়ে ঘুমাতে দিন । ঠান্ডায় কম্বল বা লেপ ব্যবহার করবেন । এসময় শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে । যেহেতু শীতে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেশি হয় , এজন্য এসময় শিশুদের জনসমাগম থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা দরকার ।
আরো পড়ুন শীতে পা ফাটা রোধের প্রাকৃতিক উপায়
২ । পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা :
শীত বলে পরিচ্ছন্নতায় কখনো অবহেলা করবেন না । শিশুকে নিয়মিত গোসল করান । তবে দুপুর ১২টার আগেই গোসল করানো উত্তম এবং হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন । গোসলের পর মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে কাপড় পরাবেন । ধূলাবালি থেকে দূরে রাখবেন । প্রয়োজন হলে মাস্ক পরাবেন । এছাড়া শিশুরা স্বাভাবিকভাবে হাত-পা বেশি নাড়াচাড়া করে এবং বারবার মুখে হাত দেয় , তাই নখগুলো কেটে ছোট রাখবেন। যেন রোগ-জীবাণু নখের মাধ্যমে মুখে না যায় ।
৩ । ভিটামিনযুক্ত খাবার :
শীতে যেহেতু অসুস্থতার হার বেড়ে যায় এজন্য এসময় শিশুদের ভিটামিনযুক্ত খাবার বিশেষ করে ভিটামিন সি , ফল , শাক-সবজি খাওয়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে । ০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াবেন । ৬ মাসের পর সোনামণিদের বাড়তি খাবার হিসেবে খিচুড়ি , সুজি ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে । এ সেময় খিচুড়ির সাথে গাজর , মিষ্টি কুমড়া , পেঁপে , লাল শাক , বিট , টমেটো ইত্যাদি বিভিন্ন পুষ্টিকর সবজি দিতে পারেন । তবে খাবার অবশ্যই নরম বা তরল করে খাওয়াতে হবে যাতে করে আপনার শিশুর হজমে সমস্যা না হয় ।
৪ । ত্বকের যত্ন :
শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে ফলে মানুষের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে । শিশুদের ত্বক কোমল হওয়ায় , শীতে তাদের শরীরের চামড়া শুষ্ক ও হাত পা অমসৃন হয়ে যায় । ঠোঁট শুকিয়ে রক্তও বের হতে পারে । এরকম হলে হালকা করে অলিভঅয়েল মালিশ করতে পারেন । ঠোঁট ও মুখে ভালো বেবী ক্রিম ও শরীর , পায়ের গোড়ালিতে লোশন লাগাবেন নিয়মিত ।
আরো পড়ুন শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন
৫ । উষ্ণ পোষাক :
শীতে শিশুর পোষাকের দিকে বিশেষ যত্ন রাখতে হবে । গরম কাপড় বা উষ্ণ পোষাক পরাতে হবে । তবে উলের সোয়েটর সরাসরি না পরিয়ে ভেতরে সুতির নরম কাপড় পরিয়ে নিলে ভালো হয় । কারন উলের পশমে শিশুর এলার্জি দেখা দিতে পারে । খেয়াল রাখতে হবে অধিক গরম পোষাক পরানোর কারনে আবার আপনার সোনামণি যেন ঘেমে না যায় ।
৬ । চিকিৎসা :
শীত মৌসুমে শিশুদের শরীরে চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে । সোনামণিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন । চর্ম রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন । এ সময় শিশুদের ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা বৃদ্ধি পায় । ফলে শিশুদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে বা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন ।
মনে রাখবেন , একটু অবহেলা আপনার শিশুর মারাত্মক অসুস্থতার কারন হতে পারে । তাই এই শীতে আপনার সোনামণির যত্ন নিন । অসুস্থ হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঠিকমতো ঔষধ খাওয়ান ।
1 comment
Nice post 😊👍