কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙ্গালী উপন্যাসিক ও গল্পকার । তিনি তার মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশত ছোটগল্প রচনা করেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক কালে যে কয়েকজন সাহিত্যিক মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে কাজ করেছেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের অন্যতম । আজ আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী সম্পর্কে জানবো ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী
একনজরে
জন্ম | ২৯ শে মে ১৯০৮ সাল
|
জাতীয়তা | ভারতীয়
|
পেশা | ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার
|
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী | অহিংসা (১৯৪১) , দর্পণ (১৯৪৫) , চিহ্ন (১৯৪৭) , চতুষ্কোণ (১৯৪৮) , সোনার চেয়ে দামী (১৯৫২) , হারানের নাতজামাই ।
|
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস | পদ্মানদীর মাঝি , পুতুলনাচের ইতিকথা , অমৃতস্য পুত্রাঃ , শহরতলী , প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান প্রভৃতি ।
|
দাম্পত্যসঙ্গী | কমলা দেবী
|
মৃত্যু | ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬ (বয়স ৪৮)
|
জন্ম
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায় জন্ম গ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার ছিল নীরদাসুন্দরী দেবী । চৌদ্দ ভাই – বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম । পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার ।
শিক্ষাজীবন
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাঁকুড়া ওয়েসলিয় মিশন কলেজ থেকে আই.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন ।
কলেজ ক্যান্টিনে একদিন আড্ডা দেওয়া অবস্থায় বন্ধুর সাথে বাজি ধরে মানিক লিখে ফেললেন তার প্রথম গল্প “অতসী মামী” এবং সেটি বিচিত্রার সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দেন । সে সময় বিচিত্রা পত্রিকা কলকাতায় অত্যন্ত বিখ্যাত ছিল এবং কেবল নামকরা লেখকেরাই তাতে লিখতেন । লেখা পাঠানোর চার মাস পর বিচিত্রায় সেটি ছাপা হয় । প্রকাশের পর গল্পটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে । এরপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতে থাকেন মানিক । সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তিনি তার একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেননি ফলে তার পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়; শেষাবধি শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে । এরপর সাহিত্য রচনাকেই তিনি তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন ।
সাহিত্যজীবন
তিনি তার ক্ষুদ্র জীবনে অবিরামভাবে লিখে গেছেন । যদিও তার লেখায় ফ্রয়েডীয় ও মার্কসবাদের প্রভাব ছিল তবুও তার লেখার মুল ফোকাস ছিল সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেনীর উপর । তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা এবং শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ।
নিচে তার রচনা সমুহের তালিকা তুরে ধরা হলো ।
আরো পড়তে ক্লিক করুন শহীদুল্লা কায়সারের সংক্ষিপ্ত জীবনী
উপন্যাস
দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫)
| জননী (১৯৩৫)
|
পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬)
| পদ্মানদীর মাঝি(১৯৩৬)
|
জীবনের জটিলতা (১৯৩৬)
| অমৃতস্য পুত্রাঃ (১৯৩৮)
|
শহরতলি (প্রথম খণ্ড) (১৯৪০)
| শহরতলি (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৪১)
|
অহিংসা (১৯৪১)
| ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১)
|
চতুষ্কোণ (১৯৪২)
| প্রতিবিম্ব (১৯৪৩)
|
দর্পণ (১৯৪৫)
| চিন্তামণি (১৯৪৬)
|
শহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬)
| চিহ্ন (১৯৪৭)
|
আদায়ের ইতিহাস (১৯৪৭)
| জীয়ন্ত (১৯৫০)
|
পেশা (১৯৫১)
| স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১)
|
সোনার চেয়ে দামী (প্রথম খণ্ড) (১৯৫১)
| সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৫২)
|
ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২)
| পাশাপাশি (১৯৫২)
|
সার্বজনীন (১৯৫২)
| নাগপাশ (১৯৫৩)
|
ফেরিওয়ালা (১৯৫৩)
| আরোগ্য (১৯৫৩)
|
চালচলন (১৯৫৩)
| তেইশ বছর আগে পরে (১৯৫৩)
|
হরফ (১৯৫৪)
| শুভাশুভ (১৯৫৪)
|
পরাধীন প্রেম (১৯৫৫)
| হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬)
|
মাশুল (১৯৫৬)
|
গল্পগ্রন্থ
অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫)
| প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭)
|
মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮)
| সরীসৃপ (১৯৩৯)
|
বৌ (১৯৪০)
| সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩)
|
ভেজাল (১৯৪৪)
| হলুদপোড়া (১৯৪৫)
|
“টিকটিকি ”
| ” হারানের নাতজামাই”
|
আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬)
| পরিস্থিতি (১৯৪৬)
|
খতিয়ান (১৯৪৭)
| মাটির মাশুল (১৯৪৮)
|
ছোট বড় (১৯৪৮)
| ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯)
|
ফেরিওলা (১৯৫৩)
| লাজুকলতা (১৯৫৪)
|
আত্নহত্যার অধিকার
|
নাটক
- ভিটেমাটি (১৯৪৬)
মৃত্যু
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘকাল মৃগী রোগে ভুগেছেন যা পরবর্তীতে জটিল অবস্থা ধারণ করে । সেই সাথে চরম অর্থকষ্ট ছিল তার আজীবনের সঙ্গী । তীব্র অর্থকষ্ট ও রোগভোগের পর ১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যু ঘটে ।
আরো পড়তে ক্লিক করুন জীবনানন্দ দাশের সংক্ষিপ্ত জীবনী