হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক । বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর লেখা প্রতিটি সাহিত্যকর্ম আজও বাঙ্গলাভাষী পাঠকদের নিকট খুবই জনপ্রিয় । আজ আমরা হুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ।
হুমায়ূন আহমেদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
একনজরে
জন্ম | ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
| বগুড়া জিলা স্কুল ঢাকা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি (পিএইচডি)
|
পেশা
| লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার, নাট্যকার, অধ্যাপক (রসায়ন)
|
জাতীয়তা | পাকিস্তানি (১৯৪৮-১৯৭১) বাংলাদেশী (১৯৭১-২০১২)
|
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার একুশে পদক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
|
দাম্পত্যসঙ্গী | গুলতেকিন খান (বি. ১৯৭৩; বিচ্ছেদ. ২০০৩) মেহের আফরোজ শাওন (বি. ২০০৫; মৃ. ২০১২)
|
মৃত্যু | ১৯ জুলাই ২০১২ (বয়স ৬৩) নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
|
সমাধিস্থল | নুহাশ পল্লী, গাজীপুর |
জন্ম
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মাতার নাম ছিল আয়েশা ফয়েজ । হুমায়ূন আহমেদের রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় যে ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান এবং ডাকনাম কাজল । তারা ছয় ভাই-বোন ছিলেন ।
শিক্ষাজীবন
তার বাবা পলিশে চাকুরী করতেন বিধায় বদলি হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়েছে । বিধায় হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন । তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে সিলেটের কিশোরী মোহন বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । সেখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন । তিনি ১৯৬৩ সালে বগুড়া জিলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন । ১৯৬৫ সালে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন । তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন ।
কর্মজীবন
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তার বেতন ছিল ৬৫০ টাকা । ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন ।১৯৮২ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর যোসেফ এডওয়ার্ড গ্লাসের তত্ত্বাবধানে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন । পরবর্তীতে লেখক এবং চলাচ্চিত্র পরিচলক হিসাবে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন ।
আরো পড়ুন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহিত্যকর্ম
হুমায়ুন আহমেদের প্রতিটি লেখা’ই পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে । নিকট অতিতে জনপ্রিয়তা ধরে রেখে এত বেশী লেখা অন্য কেও লিখতে পারেননি । নিচে তার সাহিত্যকর্মের তালিকা তুলে ধরা হলো ।
১. আমার আছে জল(১৯৮৫) | ২. ফেরা(১৯৮৬) |
৩. প্রিয়তমেষু(১৯৮৮) | ৪.অনন্ত নক্ষত্র বীথি(১৯৮৮) |
৫. সম্রাট(১৯৮৮) | ৬. আকাশ জোড়া মেঘ(১৯৮৯) |
৭. দ্বৈরথ(১৯৮৯) | ৮. সাজঘর(১৯৮৯) |
৯. এইসব দিনরাত্রি(১৯৯০) | ১০. সমুদ্র বিলাস(১৯৯০) |
১১. আলোময়(১৯৯০) | ১২. বহুব্রীহি(১৯৯০) |
১৩. কুহক(১৯৯১) | ১৪. নীল অপরাজিতা (১৯৯১) |
১৫. দুই দুয়ারী(১৯৯১) | ১৬. আশাবরী(১৯৯১) |
১৭. অনন্ত অম্বরে(১৯৯২) | ১৮. কোথাও কেউ নেই |
১৯. দি একসরসিস্ট(১৯৯২) | ২০. পাখি আমার একলা পাখি (১৯৯২) |
২১. নিশিকাব্য(১৯৯২) | ২২. জলপদ্ম(১৯৯২) |
২৩. আয়নাঘর(১৯৯২) | ২৪. কৃষ্ণপক্ষ(১৯৯২) |
২৫. জনম জনম(১৯৯৩) | ২৬. আমার আপন আঁধার(১৯৯৩) |
২৭. আমি এবং আমরা(১৯৯৩) | ২৮. তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে (১৯৯৩) |
২৯. পিপলী বেগম(১৯৯৩) | ৩০. জল জোছনা(১৯৯৩) |
৩১.পোকা(১৯৯৩) | ৩২. মন্দ্রসপ্তক(১৯৯৩) |
৩৩. তিথির নীল তোয়ালে(১৯৯৩) | ৩৪. নবনী(১৯৯৩) |
৩৫. এই আমি (১৯৯৩) | ৩৬. একি কাণ্ড!(১৯৯৩) |
৩৭.ছায়াবীথি(১৯৯৪) | ৩৮. জয়জয়ন্তী(১৯৯৪) |
৩৯.যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ (১৯৯৪) | ৪০.শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৪) |
৪১.গৌরীপুর জংশন(১৯৯৫) | ৪২.পারুল ও তিনটি কুকুর(১৯৯৫) |
৪৩.পেন্সিলে আঁকা পরী(১৯৯৫) | ৪৪. সকল কাঁটা ধন্য করে(১৯৯৫) |
৪৫. কবি(১৯৯৬) | ৪৬. আমাদের শাদা বাড়ি(১৯৯৬) |
৪৭. জলকন্যা(১৯৯৬) | ৪৮.মহাপুরুষ (১৯৯৬) |
৪৯.সূর্যের দিন (১৯৯৬) | ৫০.দূরে কোথায়(১৯৯৭) |
৫১. রুমালী(১৯৯৭) | ৫২. অপেক্ষা (১৯৯৭) |
৫৩.অন্ধকারের গান(১৯৯৭) | ৫৪. মেঘ বলেছে যাব যাব(১৯৯৭) |
৫৫. পরীর মেয়ে মেঘবতী (১৯৯৭) | ৫৬. বোকাভু (১৯৯৭) |
৫৭. কালো জাদুকর (১৯৯৮) | ৫৮. চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস (১৯৯৮) |
৫৯. মীরার গ্রামের বাড়ি (১৯৯৮) | ৬০. ইস্টিশন (১৯৯৯) |
৬১. উদ্ভট গল্প (১৯৯৯) | ৬২. এই মেঘ, রৌদ্রছায়া (১৯৯৯) |
৬৩. রূপার পালঙ্ক (১৯৯৯) | ৬৪. কানী ডাইনী(২০০০) |
৬৫. বৃষ্টি বিলাস(২০০০) | ৬৬. যদিও সন্ধ্যা(২০০০) |
৬৭. আজ চিত্রার বিয়ে(২০০১) | ৬৮. তেঁতুল বনে জোছনা(২০০১) |
৬৯. বৃষ্টি ও মেঘমালা (২০০১) | ৭০. মৃন্ময়ী(২০০১) |
৭১. কুটু মিয়া(২০০১) | ৭২. নীল মানুষ(২০০২) |
৭৩. আসমানীরা তিন বোন (২০০২) | ৭৪. বাসর (২০০২) |
৭৫. একজন মায়াবতী (২০০২) | ৭৬. উড়াল পঙ্খি (২০০২) |
৭৭. অচিনপুর (২০০২) | ৭৮. আজ আমি কোথাও যাবনা (২০০২) |
৭৯. রজনী (২০০৩) | ৮০. একা একা (২০০৩) |
৮১. প্রথম প্রহর(২০০৩) | ৮২. দিনের শেষে(২০০৩) |
৮৩. নক্ষত্রের রাত (২০০৩) | ৮৪. আমি এবং কয়েকটি প্রজাপ্রতি (২০০৩) |
৮৫. এপিটাফ (২০০৪) | ৮৬. এই বসন্তে(২০০৫) |
৮৭. পঞ্চকন্যা (২০০৫) | ৮৮. লীলাবতী (২০০৫) |
৮৯. ছেলেটা (২০০৫) | ৯০. অরণ্য (২০০৫) |
৯১. কে কথা কয়? (২০০৬) | ৯২. মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই (২০০৬) |
৯৩. লিলুয়া বাতাস (২০০৬) | ৯৪. কিছুক্ষণ (২০০৭) |
৯৫. দেখা না দেখা (২০০৭) | ৯৬. আনন্দ বেদনার কাব্য (২০০৮) |
৯৭. মীর খাইয়ের অটোগ্রাফ(২০০৮) | ৯৮. অঁহক(২০০৯) |
৯৯. আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ (২০০৯) | ১০০. চক্ষে আমার তৃষ্ণা (২০০৯) |
১০১. দিঘির জলে কার ছায়াগো (২০০৯) | ১০২. প্রিয় পদরেখা (২০০৯) |
১০৩. বৃক্ষকথা (২০০৯) | ১০৪. বাদল দিনের দ্বিতীয় কদমফুল (২০০৯) |
১০৫. বিরহগাথা – ১ (২০০৯) | ১০৬. বিরহগাথা – ২ (২০০৯) |
১০৭. বিরহগাথা – ৩ (২০০৯) | ১০৮. মানবী (২০০৯) |
১০৯. সানাউল্লার মহাবিপদ (২০০৯) | ১১০. অন্যদিন (২০০৯) |
১১১. অমানুষ (অনুবাদ) (২০০৯) | ১১২. চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক(২০০৯) |
১১৩. নলিনীবাবুর ঝপ (২০১০) | ১১৪. মাতাল হাওয়া (২০১০) |
১১৫. রূপা (২০১০) | ১১৬. ম্যাজিক মুন্সী (২০১০) |
১১৭. বাদশাহ নামদার (২০১১) |
মৃত্যু
২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে হুমায়ূন আহমেদের দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে । তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন । ১২ দফা কেমোথেরাপি দেওয়া এবং অস্ত্রোপচারের পর তার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে অজ্ঞাত কারণে তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায় । দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয় ।
আরো পড়ুন ফররুখ আহমদের সংক্ষিপ্ত জীবনী