বেল খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল। গরমের দিনে পাঁকা বেলের একগ্লাস সরবত শরীর ও মন ঠান্ডা করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ । প্রান জুড়ানোর সাথে সাথে এটি আমাদের সুস্থতার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে । প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে রয়েছে জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, শর্করা ১৮.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, লোহা ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.০২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম ।
বেলের স্বাস্থউপকারীতা গুলো জেনে নেই :
১ । কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে :
কোষ্ঠকাঠিন্য সকলের জন্যই অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও অস্বস্থিকর একটি সমস্যা । নিয়মিত বেলের সরবত খেলে এই সমস্যার পরিত্রাণ মিলবে । বেলের শাঁস পিচ্ছিল হয় এজন্য এটি পাকস্থলীর জন্য উপকারী । এবং খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সহায়তা করে । ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
২ । ডায়রিয়া কমায় :
কাঁচা বেল ডায়েরিয়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী পথ্য । যদি দীর্ঘদিন এই সমস্যায় কেউ ভোগেন তাহলে কাঁচা বেল খেতে পারেন । কাঁচা বেল টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন । তারপর তা গুঁড়া করে ১ চামচ নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম পানিতে মিশিয়ে খান । এক সপ্তাহ দিনে দুইবার এটি খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে ।
৩ । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে :
ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত একটি রোগের নাম । আমাদের আশেপাশে অনেকেই এই রোগটিতে ভুগে থাকেন । নিয়মিত পাঁকা বেল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ভালো ফল পাওয়া যায় । কারন পাঁকা বেলে আছে মেথানল নামের একটি উপাদান যা ব্লাড সুগার কমাতে কাজ করে ।
আরো পড়ুন আমড়ার পুষ্টিগুণ : আমড়া থেকে যে উপকার পাওয়া যায়
৪ । আলসারের ঔষধ হিসেবে কাজ করে :
যারা আলসারের সমস্যাতে ভুগছেন তারা চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত পাঁকা বেলের সরবত খেতে পারেন । কেননা পাঁকা বেলের শাঁসে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা আলসার উপশমে সহায়তা করে । সপ্তাহে তিন দিন বেলের শরবত করে খেলে আলসার কমে যাবে । এছাড়া বেলের পাতা সারা রাত একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি খেলে আলসার কমাতে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
৫ । ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :
বেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল গুণ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী । এছাড়া স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার রোধে এটি বিশেষ ভুমিকা রাখে । বেলে রয়েছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। এটি টিউমার হতে দেয় না সহজে । এজন্য নারীরা নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে পারেন।
৬ । শরীর সতেজ রাখে :
গরমের দিনে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে একগ্লাস বেলের সরবত খেতে পারেন , মুহূর্তেই শরীরে এনার্জি পাওয়া যাবে। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে ১৪০ গ্রাম ক্যালোরি রয়েছে । এছাড়া এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন দেহের এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে । নিয়মিত বেল খেলে পেশি মজবুত থাকে এবং দেহ সচল রাখতে সাহায্য করে । এজন্য গরমের দিনে শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ রাখতে বেলের কদর অনেক বেশি ।
৭ । ঠান্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে :
বেলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ঠান্ডাজনিত যেকোন সমস্যা যেমন- সর্দি ,কাশি ,জ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । এছাড়া সর্দি হলে বা গায়ে ব্যথা এবং জ্বরজ্বর ভাব হলে বেলপাতার রস বের করে কয়েক ফোঁটা মধুসহ তিন-চার দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৮ । রক্ত পরিশুদ্ধ করে :
রক্তের মাধ্যমেই পুষ্টিগুণ শরীরের সকল অংশে পরিবাহিত হয়। এজন্য রক্তের পরিশুদ্ধতা খুবই জরুরি । বেল রক্ত পরিশুদ্ধ করতে খুব ভালো কাজ করে । খানিকটা পাকা বেলের শাঁসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে এটি রক্ত পরিশুদ্ধ করে । ট্যান দূর হয় । এবং কিডনি ও লিভারের কাজও ঠিকভাবে করে ।
৯ । দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে :
চোখের যত্নে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে বেল কার্যকরী ভূমিকা রাখে । বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ , যা চোখের জন্য অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় উপাদান , এটি চোখের পুষ্টি যোগায় । বেল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে । এছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন গ্লুকোমা, জেরসিসের মতো জটিল রোগ হওয়া থেকে চোখকে রক্ষা করতেও এটি ভূমিকা রাখে । বেলপাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি কমে যায় ।
১০ । ব্লাড প্রেসার কমায় :
যারা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন নিয়মিত বেলের সরবত খেতে পারেন । কারন বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায্য করে । পাঁকা বেল খেলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে । তাই প্রচুর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই ফলটি আপনার খাবার তালিকাতে রাখুন ।
১১ । আর্থ্রারাইটিস কমায় :
বয়স বাড়ার শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যাথা বৃদ্ধি পেতেই থাকে ,বর্তমানে অল্প বয়স্ক অনেকেও ব্যাথার সমস্যাতে ভুগে থাকেন । বেলে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান এই ব্যথার থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। নিয়মিত বেল খেলে আর্থ্রারাইটিসের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় ।
১২ । ত্বক সুন্দর রাখে :
বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী । নিয়মিত বেল খেলে ত্বক মসৃণ থাকে । এছাড়া এটি ব্রণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করে ।
১৩ । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
বেলে থাকা ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক । বেল দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেহকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে ভুমিকা রাখে । এছাড়া গরমের সময় অনেক ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় । এসব ছোঁয়াচে রোগ থেকে বেলের উপকারী পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে ।
বেল পাতার রস, মধু ও গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি মেলে । এছাড়া আমাশয়ের মতো কষ্টদায়ক সমস্যা থেকেও পরিত্রান পাওয়া যায় কচি বেল খেলে । লিভার ভালো রাখতেও নিয়মিত বেল খেতে পারেন । ম্যালেরিয়া দূর করতে কাঁচা বেল খেলে উপকার পাওয়া যায় । পাঁকা বেলে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যক্ষ্মা কমাতে সাহায্য করে । তাই প্রচুর ঔষধীগুণ সম্পন্ন এই উপকারী ফলটি নিয়মিত আপনার খাবার তালিকায় রাখতে পারেন ।
আরো পড়ুন ড্রাগন ফলের উপকারীতা : ড্রাগন ফল কেন খাবেন