Image default
জীবনী

স্যার আইজাক নিউটনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

স্যার আইজাক নিউটনের সংক্ষিপ্ত জীবনী

স্যার আইজাক নিউটন একজন গনিতবিদ, পদার্থবিদ এবং বিজ্ঞানী । তিনি ১৬৪৩ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহন করেন । তাকে সর্বকালের অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞানী হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে । তিনি মধ্যাকর্ষণ শক্তিসহ অনেক আবিষ্কারে ভুমিকা রাখেন ।  আজ আমরা এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো ।

স্যার আইজাক নিউটনের জন্ম

স্যার আইজাক নিউটনের জন্মস্থান ইংল্যান্ডের লিংকনশায়ারের উল্‌সথর্প ম্যানরে । নিউটনের যখন জন্ম হয় তখন ইংল্যান্ডে আধুনিকতম প্যাপাল বর্ষপঞ্জির ব্যবহার শুরু হয়নি । তাই তার জন্মের তারিখ নিবন্ধন করা হয়েছিল ১৬৪২ সনের ক্রিস্‌মাস দিবস হিসেবে । স্যার আইজাক নিউটন তার পিতা আইজাকের মৃত্যুর তিন মাস পর জন্ম গ্রহন করেন ।

তার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। স্যার আইজাক নিউটনের তিন বছর বয়সে তার মা আরেকটি বিয়ে করেন এবং নতুন স্বামী রেভারেন্ড বার্নাবাউস স্মিথের সাথে বসবাস করতে থাকেন। এসময় নিউটন তার নানী মার্গারি এইসকফের তত্ত্বাবধানে তার দিন কাটতে থাকে । নিটটন তার সৎ বাবাকে পছন্দ করতে পারেননি। তার মা এই লোককে বিয়ে করেছে বলে মায়ের প্রতি তার কিছুটা ক্ষোভও ছিল ।

স্যার আইজাক নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা ।

স্যার আইজ্যাক নিউটন জন্মগ্রহণ করেছিলেন তুলনামূলকভাবে দরিদ্র কৃষক পরিবারে । যেহেতু তাঁর জন্মের তিন মাস আগে তাঁর বাবা মারা যান, আর পরবর্তীতে তার মা আবার বিয়ে করেছিলেন, সেহেতু নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্র স্কুলে । ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের একটি ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয় । সেখানে তিনি একজন ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন ।

আরো পড়ুন

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
স্যার আইজ্যাক নিউটনের প্রতিভা

উক্ত ব্যাকরণ স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী যা থেকে তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায় । স্কুল জীবনের প্রথম থেকেই নিউটনের বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রতি ঝোঁক ছিল । নিউটন সেই বয়সেই উইন্ডমিল, জল-ঘড়ি, ঘুড়ি এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন । এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ছিল একটি চার চাকার গাড়ী  যা আরোহী নিজেই টেনে চালাতে পারতেন । ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সৎ বাবা মারা গেলে, তার মা উল্‌সথর্পে ফিরে এসে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন । তার মায়ের উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে ক্ষেত-খামারের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত করে দেয়া । কিন্তু দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন যে, খামারের কাজের দিকে নিউটনের কোন ঝোঁক নেই। নিউটনের একজন চাচা ছিলেন বার্টন কগলিসের । এই চাচার উপদেশে তার মা তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেন ।

স্যার আইজ্যাক নিউটনের উচ্চশিক্ষা

স্যার আইজ্যাক নিউটন কেমব্রিজে গণিত, বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন ।  সেই সময়ে প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থা  এরিস্টটলের উপর ভিত্তি করে ছিল । তবে তিনি আইজ্যাক রিনি ডেসকার্টসের মতো আধুনিক গণিতবিদদের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন ।  আইজ্যাক নিউটনের গাণিতিক সমস্যাগুলি নিয়ে চিন্তা করার এবং তারপরে রহস্যের সমাধান না করা পর্যন্ত তার উপর মনোনিবেশ করার এক বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল ।

স্যার আইজাক নিউটনের গাণিতিক প্রাপ্তি

১. সাধারণীকৃত দ্বিপদী উপপাদ্য ।

২. নিউটনের পরিচয় ।

৩. নিউটনের পদ্ধতি ।

৪. শ্রেণিবদ্ধ কিউবিক বিমান বক্ররেখা ।

৫. সীমাবদ্ধ পার্থক্য তত্ত্বের যথেষ্ট অবদান ।

৬. ভগ্নাংশ সূচক ব্যবহার ।

৭. ডায়োফানটাইন সমীকরণগুলির সমাধান পেতে জ্যামিতি ব্যবহার করা হয় ।

৮. আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং পাওয়ার সিরিজটি ফিরিয়ে আনার জন্য পাওয়ার সিরিজ ব্যবহার করা হয়েছে ।

৯. পাই এর জন্য একটি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেছে ।

 স্যার আইজাক নিউটনের বৈজ্ঞানিক অর্জন

১. অপটিক্স- নিউটন অপটিক্সের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত অগ্রগতি সাধন করেছিলেন । বিশেষত, তিনি একটি প্রিজমের মাধ্যমে সাদা আলো বিভক্ত করে বর্ণালীটি বিকাশ করে দেখিয়েছিলেন ।

২. দূরবীন- যা টেলিস্কোপের বিকাশে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করে ।

৩. যান্ত্রিকতা এবং মাধ্যাকর্ষণ । স্যার আইজাক নিউটনের বিখ্যাত বই প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকাতে । ১৬৮৭ সালে নিউটন গতির তিনটি আইন ব্যাখ্যা করেছিলেন । যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কাঠামো রেখেছিল । এর মধ্যে গ্রহের গতিবিধির ব্যাখ্যাও করা হয়েছে ।

আরো পড়ুন

কাজী নজরুল ইসলামের  জীবনী
স্যার আইজাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার

স্যার আইজাক নিউটন সম্পর্কে সর্বাধিক জনপ্রিয় উপাখ্যানটি হল গ্রাভিটেশন তত্ত্বটি তাঁর মাথায় এসেছিল, এটি একটি পতন্ত আপেল মাথায় আঘাত করার পরে । বাস্তবে, নিউটন এবং তার বন্ধুরা সম্ভবত এই গল্পটি অতিরঞ্জিত করেছেন বলেই মনে করা হয় । তা সত্ত্বেও, সম্ভবত গাছগুলি থেকে আপেল পড়ে যাওয়া তার মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে এমনটি ভাবাই যায় ।

উল্‌সথর্প ফিরে এসেও স্যার আইজাক নিউটন থেমে থাকেননি । সেখানে তিনি মূলত রসায়ন এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন ।  একইসাথে চলতে থাকে তার গাণিতিক অনূধ্যানের প্রকল্পসমূহ । নিউটন তার মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার বিষয়ক দিনপঞ্জির সূচনা চিহ্নিত করেছিলেন এই ১৬৬৬ সনকে ।

স্যার আইজাক নিউটনের নিউটন এবং অ্যালকেমি

নিউটনের রসায়নে প্রচুর আগ্রহ ছিল । তিনি বুধ ব্যবহার করে বহু বস্তু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন । তার রক্ত প্রবাহে সম্ভবত খুব উচ্চ স্তরের পারদ তার প্রাথমিক মৃত্যু এবং পরবর্তী জীবনে অনিয়মের বিষয়ে অবদান রেখে থাকতে পারে ।

স্যার আইজাক নিউটনকে ১৭০৩ সালে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য করা হয়েছিল । এবং ১৭১৭ সালে তাকে মিন্ট অফ মিন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । তিনি এই কাজটি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিলেন এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ডকে সিলভার স্ট্যান্ডার্ড থেকে সোনার স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় অঙ্গিকারাবদ্ধ ছিলেন ।

নিউটন ছিলেন এক অসাধারণ পলিম্যাথ । মহাবিশ্ব তাকে কেবল মুগ্ধই করেছিল । নিউটন, জীবনের লুকানো ও বাহ্যিক রহস্য আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন । তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ঘনত্বের ক্ষমতা দিয়ে তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিকাশ সাধনে অবদান রাখতে সক্ষম হন ।

স্যার আইজাক নিউটনের আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা

১৬৬৭ সনে ট্রিনিটি কলেজ নিউটনকে ফেলো নির্বাচিত করে । এবং এর দুই বছর পর অর্থাৎ তার ২৭তম জন্মদিনের আগে তিনি সেখানকার গণিত বিভাগের লুকাসিয়ান অধ্যাপক নিযুক্ত হন । নিউটনের আগে ট্রিনিটি কলেজের এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তারই বন্ধু ও শিক্ষক ডঃ বারো । তখনকার সময়ে কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হতে হলে তাকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত অ্যাংগ্লিকান ধর্মপ্রচারক হতে হতো । আবার লুকাসিয়ান অধ্যাপকদের চার্চের সাথে যোগাযোগ থাকা নিষিদ্ধ ছিল, কারণ তা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষতি করতে পারে ।

স্যার আইজাক নিউটন লুকাসিয়ান অধ্যাপক হওয়ার সময় এই শর্ত থেকে নিজে অব্যাহতি চান । তখনকার রাজা চার্লস ২ তার দাবী মেনে নিয়ে তাকে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করতে সম্মত হন । এর মাধ্যমে অ্যাংগ্লিকানদের সাথে নিউটনের ধর্মীয় চিন্তাধারার বিরোধের অবসান ঘটে । এই সময়ে  ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিউটন একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন ।

১৬৭১ অবস্থান নিয়ে একটি বিতর্কের জন্ম দেয়ার জন্য তিনি নিজের প্রজ্হাকেই দোষারোপ করতেন । আলোক বিজ্ঞান নিয়ে তার গবেষণাপত্রসমূহের অধিকাংশই ১৬৭২ সন থেকে ১৬৮৪ সনের মধ্যে রয়েল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয় । তার এই গবেষণাপত্রগুলোই ১৭০৪ সনে তার অপটিক্‌স নামক গ্রন্থে সংকলন করা  হয়েছিল ।

স্যার আইজাক নিউটনের সুত্র সমুহ

প্রথম সূত্র: স্যার আইজাক নিউটনের প্রথম সুত্র হচ্ছে, বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু আজীবন স্থির এবং গতিশীল বস্তু আজীবন সমবেগে সরলপথে চলতে থাকবে ।

দ্বিতীয় সূত্র: স্যার আইজাক নিউটনের দ্বিতীয় সুত্র , ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক । এই বল যেদিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে ।

তৃতীয় সূত্র: স্যার আইজাক নিউটনের ৩য় সুত্র , প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে ।

আরো পড়ুন

পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
স্যার  আইজাক নিউটনের ধর্মীয় বিশ্বাস

বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি নিউটন ধর্মীয় বিষয়গুলি অনুসন্ধানে বেশ সময় ব্যয় করেছিলেন । তিনি প্রতিদিন বাইবেল পড়তেন এবং বিশ্বাস করতেন যে এটি ইশ্বরের বাক্য । তবুও, তিনি বাইবেলের খ্রিস্টীয় ব্যাখ্যাগুলিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না । উদাহরণস্বরূপ, তিনি ত্রিত্বের দর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । নিউটন প্রথম চার্চ এবং বাইবেল প্রকাশের শেষ অধ্যায়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন । তিনি বাইবেলে অনেক সময় ব্যয় করেতেন ।

স্যার  আইজাক নিউটনের মৃত্যু

১৭২৫ সালের পর নিউটনের স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটে । যে কারণে একজন ডেপুটি মিন্টে তার কাজ মওকুফ করার ব্যবস্থা করে দেন । ১৭২৭ সালে তিনি শেষবারের মত রয়েল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন । ১৭০৩ সাল থেকেই আইজাক নিউটন এই সোসাইটির সভাপতি ছিলেন । ১৭২৭ সালের ২০ মার্চ  ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । স্যার  আইজাক নিউটনকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে – তে সমাধিস্থ করা হয় ।

Related posts

জহির রায়হানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

জীবনানন্দ দাশের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

Leave a Comment