প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটেছে । শীতের বাতাসে এক অন্যরকম আমেজ অনুভব হয় । অনেকেরই শীতকাল পছন্দের সিজন হলেও এ সময় বেশ কিছু সমস্যা ফেস করতে হয় । শীতের সবচেয়ে কমন সমস্যা শুষ্ক বা রুক্ষ ত্বক । এখন প্রশ্ন হলো , শীতে কেন আমাদের ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় । কারন , শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় ফলে বাইরের পরিবেশ আমাদের ত্বক থেকে পানি শুষে নেয় । এজন্য আমাদের ত্বক, ঠোঁট ও হাত বা পায়ের তালু ফেটে যায় বা শুষ্ক হয়ে যায় । এই সময় ত্বকের রুক্ষতার সাথে সাথে নানা রকম চর্মরোগও দেখা দিতে পারে অনেকের । এজন্য পুরোদমে শীত আসার আগেই ত্বকের যত্ন শুরু করতে হবে । যেন শীতেও আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে ।
শীতে ত্বকের যত্নের উপায় গুলো জেনে নেই :
১ । ভালো ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার :
শীতের শুরুতেই ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ একটি ভালো ক্রিম ও লোশন বেছে নিতে হবে । যেন বারবার ত্বক শুকিয়ে না যায় । তবে ময়েশ্চারাইজারটি অবশ্যই ওয়েল বেসড বা তৈলাক্ত হলে ভালো হয় । কারন এটি ত্বক আদ্র রাখতে সহায়তা করে । নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্ক ভাব দুর হবে ।
২ । ঠোঁটের যত্ন :
শীতকালে ঠোঁট ফাটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় । অনেকের ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে যায় । এ সময় বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাই অনেকে । এতে আরো বেশি রুক্ষ হয়ে যায় । আবার অনেকে বিভিন্ন ফ্লেবারের লিপ বাম বা লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন । যা ঠোঁটের শুষ্কতা পুরোপুরিভাবে দুর করতে পারে না । প্রাকৃতিক উপায়ে ঠোঁট সুন্দর রাখতে চাইলে অলিভ ওয়েলের সাথে কিছুটা মধু মিশিয়ে ঠোটে লাগান । এতে ঠোঁট ফেটে যাবে না । এছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় ঠোঁটে মাখন লাগিয়ে ঘুমান । ঠোঁট ভালো থাকবে । ঠোঁট ফাটা রোধ করতে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলী লাগান ।
আরো পড়ুন শীতে পা ফাটা রোধের কিছু প্রাকৃতিক সমাধান
৩ । শীতে পায়ের যত্ন :
কিছু লোক আছেন যাদের সারা বছরই পা ফাটে । তাছাড়া অধিকাংশই শীতে পা ফাটা সমস্যাতে ভুগেন । এ সময় পেট্রলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন নিয়মিত পায়ে ম্যাসাজ করতে পারেন । এছাড়া পায়ের ফাটা স্থানে অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায় । শীতে পায়ে মোজা ব্যবহার করুন । এতে আপনার পায়ের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকবে । যাদের পায়ে বেশি সমস্যা সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের ত্বকের মৃত কোষ তুলে নিন ।
৪ । হাতের যত্ন :
মুখের বা ত্বকের যত্ন নিয়ে সবাই যতটা সচেতন , হাতের যত্নে ততটা দেখা যায় না । শীতে হাতের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে । বিশেষ করে যাঁদের বারবার হাত ধুতে হয় , তাঁরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন । এ সময় হাতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ লোশন ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় । বারবার যাঁদের হাত ধুতে হয় তাঁদের দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার ।
৫ । প্রতিদিন নিয়ম মেনে গোসল :
শীতে পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি খেয়াল রাখা দরকার । অনেকেই ঠান্ডার ভয়ে প্রতিদিন গোসল করতে অনিহা দেখান । তারা নিয়মিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন । শীতে অনেকেই হট বাথ নিতে পছন্দ করেন । সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন অতিরিক্ত গরম না হয় । এটি ত্বক আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে দেয় । এছাড়াও অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের ফলিক যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে সেটি ক্ষতিগ্রস্থ করে । তাই শীতে নিয়ম মেনে গোসল করুন । অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন । এটি ত্বকের জন্য উপকারি ।
৬ । বার বার পানি পান করুন :
শীতকালে ঠান্ডার জন্য আমরা তুলনামূলক কম পানি পান করি । যা আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক । শুষ্ক মৌসুমে সুস্থ থাকার জন্য ও শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি । পানি কম পান করার কারনে শীতে অনেকের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে । যা ত্বকে নানা রোগব্যাধির জন্ম দেয় , ত্বক খসখসে ও রুক্ষ করে দেয় । শীতে পানি হালকা গরম করে তার সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায় ।
৭ । ডার্মাটোলজিস্ট :
যাদের ত্বক খুব শুষ্ক শীতের শুরুতে তাদের অনেক রকম সমস্যা শুরু হয় । শীতকালে অতিরিক্ত শুষ্ক ও রুক্ষতার কারণে অনেকের ত্বক থেকে রক্তপাত হয়ে যায় । এছাড়া অনেকেই এই সময়ে দাদ, খুজলি, পাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগে ভুগে থাকেন । যত্ন নেওয়ার পরও যদি এমন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।
শীতে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে ত্বকের সঠিক যত্ন নিন । সরাসরি রোদ সব সময়ই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । তাই রোদে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন । শীতে ভেজা চুলে বাইরে বের হওয়া উচিত নয় । এতে করে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয় এবং চুল ভেঙে যায় । বাইরে বের হওয়ার সময় চুল এবং মাথার তালুর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হ্যাট পরতে পারেন ।
আরো পড়ুন শীতে শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা