”দূরাগত রাখালের বংশী ধ্বনীর মতো তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি” পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা সম্পর্কে উক্তিটি করেছেন – ড. দীনেশ চন্দ্র সেন । ’কবর’ কবিতাসহ অসংখ্য অসাধারণ কাব্য রচয়িতার জনক, মাটি ও মানুষের কবি, যিনি তার লেখায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে আনতেন এবং ”পল্লী কবি” উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন । আমরা আজকে সেই কবি ”কবি জসীম উদ্দীনের জীবনী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ।
পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের সংক্ষিপ্ত জীবনীি
একনজরে
জন্ম | ১ জানুয়ারি ১৯০৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | বাংলা ভাষা ও সাহিত্য |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | কবি |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | নকশী কাঁথার মাঠ সোজন বাদিয়ার ঘাট |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার |
মৃত্যু | ১৪ মার্চ ১৯৭৬ (বয়স ৭৩) |
জন্ম
১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে কবি জসীম উদ্দীন জন্মগ্রহন করেন । তার বাবার নাম ছিল আনসার উদ্দীন মোল্লা এবং মায়ের নাম ছিল আমিনা খাতুন ।
শিক্ষাজীবন
কবি জসীম উদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল এবং পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখা করেন । তিনি এখান থেকে ১৯২১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে ১৯২৯ সালে বি. এ. এবং ১৯৩১ সালে এম. এ. শেষ করেন ।
কর্মজীবন
১৯৩৩ সনে তিনি ড. দীনেম চন্দ্র সেনের অধীনে “ রামতুন লাহিড়ী” গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন ।
এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন । সেখানে তিনি ৫ বছর কর্মরত ছিলেন ।
১৯৪৪ সালে তিনি পূর্বপাকিস্থান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন । অবসর গ্রহনের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন । তিনি ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহন করেন ।
আরো পড়ুন ফররুখ আহমদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
কবি জসীম উদ্দীনের সাহিত্যকর্ম
অল্প বয়স থেকেই কবি জসীম উদ্দীন লেখালেখি শুরু করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতাটি রচনা করেন । এবং তার ছাত্র থাকা অবস্থাতেই কবিতাটি প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্য বইয়ে স্থান পায় । নিচে কবি জসীম উদ্দীনের সাহিত্যকর্ম তুলে ধরা হলো –
কাব্যগ্রন্থ
১ । রাখালী (১৯২৭) ২। নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯) ৩ । বালুচর (১৯৩০) ৪ । ধানখেত (১৯৩৩) ৫ । সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪) ৬ । হাসু (১৯৩৮) ৭ । রুপবতি (১৯৪৬) ৮ । মাটির কান্না (১৯৫১) ৯ । এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬) ১০ । সখিনা (১৯৫৯) ১১ । সুচয়নী (১৯৬১) ১২ । ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২) ১৩ । মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩) ১৪ । হলুদ বরণী (১৯৬৬) ১৫ । জলে লেখন (১৯৬৯) ১৬ । পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯) ১৭ । কাফনের মিছিল (১৯৭৮) মহরম দুমুখো চাঁদ পাহড়ি (১৯৮৭)
নাটক
১ । পদ্মাপার (১৯৫০) ২ । বেদের মেয়ে (১৯৫১) ৩ । মধুমালা (১৯৫১) ৪ । পল্লীবধূ (১৯৫৬) ৫ । গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯) ৬ । ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮) ৭ । আসমান সিংহ ( ১৯৮৬)
উপন্যাস
বোবা কাহিনী (১৯৬৪) এটি তার একমাত্র উপন্যাস ।
আত্মকথা
১ । যাদের দেখেছি (১৯৫১) ২ ।ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১) ৩ ।জীবন কথা (১৯৬৪) ৪ । স্মৃতিপট (১৯৬৪) ৫ । স্মরণের সরণী বাহি (১৯৭৮)
ভ্রমণ কাহিনী
১ । চলে মুসাফির (১৯৫২) ২ । হলদে পরির দেশে (১৯৬৭) ৩ । যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮) ৪ । জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫)
সঙ্গীত
১ । রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫) ২ । গাঙের পাড় (১৯৬৪) ৩ । জারি গান (১৯৬৮) ৪ । মুর্শিদী গান (১৯৭৭)
অন্যান্য
১ । বাঙালির হাসির গল্প ১ম খন্ড (১৯৬০) ২ । বাঙালির হাসির গল্প ২য় খন্ড (১৯৬৪) ৩। ডালিমকুমার (১৯৮৬)
কবি জসীম উদ্দীনের কয়েকটি জনপ্রিয় গানের শিরোনাম-
- আমার সোনার ময়না পাখি……
- আমায় ভাসাইলি রে, আমায় ডুবাইলি রে……
- আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি……
- প্রাণো সখি রে ঐ শোন কদম্ব তলে……
- আমার হার কালা করলাম রে…….
- নদীর কূল নাই কিনার নাই…….
- আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলা রে……
- নিশিতে যাইও ফুলবনে রে ভোমরা……
- বাঁশরি আমার হারাই গিয়াছে…….
- আমার বন্ধু বিনোদিয়ারে, প্রাণ বিনোদিয়া…… ইত্যাদি ।
পুরস্কার
- প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স (১৯৫৯)
- রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেটারস ডিগ্রি লাভ (১৯৬৯)
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৪) কবি প্রত্যাখান করেন ।
- একুশে পদক (১৯৭৬)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৮, মরণোত্তর)
মৃত্যু
কবি জসীম উদ্দীন ১৯৭৬ সালের ১৪ই মার্চ মাসে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর । কবির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ফরিদপুরের আম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয় ।
আরো পড়ুন কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী