জলপাই একটি শীতকালীন ফল । সবুজ রঙের এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু ও আকর্ষনীয় । স্বাদের ক্ষেত্রে এটি একটি টক ফল । জলপাই সাধারণত আচার , চাটনী , জেলী ও ডাল রান্নার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয় । এটি শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই ফলটি নিয়মিত খেলে এমন সব উপকারীতা পাওয়া যায় যা প্রত্যেকেরই জানা দরকার । প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি, ৯.৭ শর্করা, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যামান রয়েছে । এছাড়া জলপাই এর তেলের কদর অনেক বেশি , এটি খুবই স্বাস্থকর ।
জলপাই এর পুষ্টিগুণ ও উপকারীতাসমূহ জেনে নেই :
১ । হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী :
জলপাইয়ের তেল হার্ট ব্লক প্রতিরোধ করে । জলপাই এ রয়েছে মোনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া জলপাই এ রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় । যখন মানুষের রক্তে ক্ষতিকর মুক্ত কণিকা (ফ্রি র্যা ডিকেল) ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
২ । জলপাই ত্বক এবং চুল ভালো রাখে :
জলপাই এ রয়েছে ভিটামিন-ই যা ত্বকে মসৃণ ভাব আনে। এ ছাড়া ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে জলপাই ভূমিকা রাখে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের যে ক্ষতি করে তা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে জলপাই এর পুষ্টিগুণ । কালো জলপাইয়ের তেলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়ায় নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এতে চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
৩ । ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :
কালো জলপাই এ রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই । যা আমাদের দেহের ক্ষতিকর ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করে ।যার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে । জলপাই এর ভিটামিন-ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয় । ফলশ্রুতিতে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে ।
৪ । হজমে সহায়তা করে :
জলপাই এ রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ যা মানুষের দেহের পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সহায়তা করে । ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমসহ নানা রকম পেটের পীড়া থেকে ভালো থাকা যায় । এছাড়া নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার এর মতো সমস্যা কম হয়।
৫ । চোখের জন্য উপকারী :
জলপাই এ রয়েছে ভিটামিন-এ । যা চোখের জন্য খুবই উপকারী । অনেকের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল , তাদের জন্য জলপাই অত্যন্ত উপকারী । এ ছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে এটি।
৬ । জলপাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :
জলপাই রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় সর্দি , কাশি , জ্বর ইত্যাদি প্রতিরোধ করে । এছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
৭ । হাড়ের ক্ষয় রোধ করে :
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকেই হাড়ের ক্ষয় রোগটিতে ভুগে থাকেন । জলপাই এর তেল হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । জলপাই এর মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাটে থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি । এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন ই ও পলিফেনাল । যা অ্যাজমা ও বাত-ব্যাথা জনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
৮ । আয়রনের অভাব পূরন করে :
অনেকেই আয়রনের ঘাটতিজনিত সমস্যাতে থাকেন । নিয়মিত জলপাই খেলে মিলবে এসমস্যার সমাধান । কালো জলপাই এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। রক্তের লোহিত কণা শরীরে অক্সিজেন বহন করে। কিন্তু শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। যার ফলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে । আয়রন শরীরের এনজাইম চাঙ্গা রাখে ।
জলপাইয়ের তেলে রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাডপ্রেশার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক । জলপাই এ থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকরী । নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করে । ফলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায় । এজন্য আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকাতে শীতকালীন এই ফলটি রাখুন ।
আরো পড়ুন আনারসের পুষ্টিগুণ : উপকারীতা ও অপকারীতা কমলা লেবুর পুষ্টিগুন ।। নিয়মিত কমলা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়