গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বড়গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে শতভাগ। অথচ, এই এলাকায় অনেকে রয়েছেন প্রবাসে এবং ভোটার তালিকার অনেকে মারা গেছেন।
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বড়গাঁও কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৯১৫ জন এবং মোট ভোট পড়েছে ১ হাজার ৯১৫টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৭০টি বৈধ এবং বাতিল হয়েছে ৫৪৫টি ভোট।
চলতি বছরের ভোটার তালিকায় বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গফুরের নাম রয়েছে ১৩ নম্বরে। আব্দুল গফুর গত ১৫ আগস্ট মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাতিজা জামাল মিয়া।
জামাল মিয়া আরও জানান, ভোটার তালিকার ৬ নম্বরে থাকা তার প্রতিবেশী ফারুকুর রহমানও ৩ মাস আগে মারা গেছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাই মো. কবির মিয়া ১ বছর আগে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে তিনি দেশে ফেরেননি। ভোটার তালিকার তার নাম রয়েছে ১০৮ নম্বরে।’
এই ওয়ার্ডের ৩টি গ্রামের ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বড়গাঁও গ্রামের ৮৮ জন প্রবাসী। তারা নির্বাচনের সময় দেশে ছিলেন না। তালিকায় নাম থাকা ৩১ জন মারা গেছেন। একই ভাবে চকিরায় গ্রামে প্রবাসী ৭৮ জন ও মৃত ৩৫ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। আর বাহাদুরগঞ্জ গ্রামে প্রবাসী ৪২ জন ও মৃত ১৭ জনের নাম তালিকায় রয়েছে।
বড়গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ফলাফলের তালিকা অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য পদে ওই কেন্দ্রে ১ হাজার ৯১৫ ভোট পড়েছে। হাতে লেখা ওই তালিকায় পরবর্তীতে আগের সংখ্যা কেটে পুনরায় লেখা হয় মোট ভোট পড়েছে ১ হাজার ৬৫৩টি। তালিকায় চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট সংখ্যা ১ হাজার ৯১৫টি। ফলাফল ঘোষণার সময় উপজেলা কন্ট্রোল রুম থেকেও এই কেন্দ্র শতভাগ ভোট পড়েছে বলে দেখা যায়।
ওই এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার পর্যবেক্ষণে প্রায় ৪৫০ জন ভোটার আসেননি। এই এলাকার অনেক ভোটার বিদেশে থাকেন এবং গত কয়েক বছরে অনেকেই মারা গেছেন। কিন্তু ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, মৃত ও প্রবাসীরা সবাই ভোট দিয়েছেন, শতভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে।’
বড়গাঁও গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, ‘এলাকার অনেকে মারা গেছেন। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ পরিবার প্রবাস নির্ভর। আমার অনেক আত্মীয় বিদেশে থাকেন, অনেকে মারাও গেছেন। তাদের নামও ভোটার তালিকায় ছিল। তাহলে কীভাবে শতভাগ ভোট পড়লো? অবাক করার মতো বিষয়।’
আরেক বাসিন্দা সাদেক মিয়া বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই জাল ভোট দেওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীও বলেন, ‘কোনো কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া সম্ভব নয়। জাল ভোটের কারণে এমনটি হয়েছে।’