Image default
স্বাস্থ্য

গনোরিয়া কি ? গনোরিয়া থেকে বাঁচার উপায় ।

গনোরিয়া কি ? গনোরিয়া থেকে বাঁচার উপায় ।

গনোরিয়া একটি যৌনবাহিত রোগ । এটি  “নাইসেরিয়া গনোরিয়া” নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয় । গনোরিয়া শুধুমাত্র অবাধ যৌন মিলনের ফলে ছড়িয়ে থাকে । ফলে, এটি ছোয়াচে কিনা ? বা রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় কিনা ? এটা নিয়ে সন্দেহের ভেতর থাকার প্রয়োজন নেই । এখন আমরা জেনে নিব গনোরিয়া কি কি উপায়ে ছড়ায় । এটা কতটুকু ক্ষতির কারণ হয় । এবং গনোরিয়া থেকে পরিত্রানের উপায় কি । আসুন জেনে নেওয়া যাক ।

গনোরিয়া সংক্রমের উপায় :

অ্যালবার্ট নাইসার নামক একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৮৭৯ সালে নাইসেরিয়া জীবানুটি আবিস্কার করেন । গনোরিয়া যৌন বাহিত রোগ হলেও অল্প বয়সের মেয়ে এবং শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে । সংক্রমিত বিছানার চাদর, তোয়ালে থেকে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে । ঘনবসতি, অপরিছন্ন পরিবেশ ইত্যাদি থেকেও বাচ্চারা আক্রান্ত হতে পারে ।

যৌন মিলনের সময় সংক্রমিত ব্যাক্তির যৌনাঙ্গ থেকে তার পার্টনারের শরীরে জীবানু ছড়িয়ে পড়তে পারে । একই ভাবে পায়ু পথে বা মুখ দিয়ে যৌন কাজ করলে ঐ অঙ্গ গুলোতে গনোরিয়া আক্রমন করতে পারে ।

গনোরিয়ার উপসর্গ

গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদ উপসর্গ প্রকাশ পায় । তাই এখানে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা উপসর্গ দেখানো হলো ।

পুরুষের ক্ষেত্রে :

১. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া ।

২. পুরুষাঙ্গের মাথায় লালচে ভাব হওয়া ।

৩. প্রস্রাবের নালা দিয়ে পুঁজ বের হওয়া ।

৪. বারবার প্রস্রাবের চাপ আসা ।

৫. অন্ডকোষে ব্যথা অনুভব করা ।

৬. অন্ডকোষ ফুলে আপেলের মতো বড় হতে পারে ।

৭. যারা সমকামী তাদের পায়ুপথে সংক্রমন হলে, পায়ুপথে তীব্র ব্যথা ও পুঁজ বের হতে পারে ।

৮. যারা মুখে সেক্স করে তাদের মুখে ঘা এবং গলা ব্যথা হতে পারে ।

আরো পড়ুন

ঔষধী ফল বেলের স্বাস্থউপকারীতা ও পুষ্টিগুণ
মহিলাদের ক্ষেত্রে

১. তলপেটে ব্যথা হওয়া ।

২. জ্বর ও শরীরে ফুঁসকুড়ি পড়া ।

৩. মাসিক অনিয়মিত হওয়া ।

৪. দুই মাসিকের মধ্যবর্তি সময়ে সাদাস্রবসহ রক্তপড়া্ ।

৫. যৌন মিলনে কষ্ট অনুভব হওয়া ।

৬, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা ।

৭. যোনি ফুলে যাওয়া এবং লাল বর্ণের ঘা হওয়া ।

৮. ডিম্বানুতে প্রদাহ হওয়া ।

৯. যোনি পথে অস্বাভাবিক কষানি হওয়া ।

গনোরিয়ার ক্ষতিকর দিক

গনোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে, পুরুষ মহিলা উভয়েই বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারে । গনোরিয়ার জীবানু মহিলাদের প্রজননতন্ত্রে প্রবেশ করে ডিম্বনালিতে ব্লক তৈরী করে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি করে । গর্ভবতী মহিলা আক্রান্ত হলে, মহিলার যোনি থেকে গর্ভের বাচ্চার চোখ আক্রন্ত হতে পারে । ঐ সময় উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে, বাচ্চার চোখ নষ্ট হতে পারে । অন্ডকোষ নষ্ট হতে পারে । ফলে বাচ্চা বন্ধ্যাত্ব নিয়ে জন্মাতে পারে ।

পুরুষের মুত্রনালী  প্রতিবন্ধকতার শ্বিকার হয়ে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে । ফলে কিডনীতে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুকি তৈরী হয় ।  দীর্ঘদিনের সংক্রমণের ফলে পুরুষের অস্থিসন্ধি প্রদাহ, মস্তিস্কের প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, সেপটিসেমিয়া এমনকি হৃৎপিন্ডের ক্ষতি হওয়ার ঝুকি থাকে ।

গনোরিয়ার রোগ নির্নয় পদ্ধতি

গনোরিয়া রোগ নির্নয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সমস্যার বিস্তারিত ইতিহাস শুনে তারপর পরিক্ষা নিরিক্ষা দিয়ে থাকেন । রোগির সমস্যার বিস্তার অনুযায়ী, পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তা থেকে বের হওয়া পদার্থ এবং মহিলাদের মুত্রনালি ও জরায়ু থেকে বের হওয়া পদার্থ  ল্যাব পরিক্ষার ব্যবস্থা করবেন । পরিক্ষার ক্ষেত্রে রুটিন এবং কালচার – সেনসিটিভিটি উভয় বা একটি পরিক্ষা করা হয়ে থাকে ।

গনোরিয়া থেকে বেঁচে থাকার উপায়

সচেতনতা থাকলে গনোরিয়ার মতো মারাত্মক যৌনবাহিত রোগ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে মুক্ত রাখা সম্ভাব । এক্ষেত্রে যত্রতত্র অবৈধ যৌনচার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক । স্বামী – স্ত্রী উভয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা । একজনের ভেতর গনোরিয়ার কোন লক্ষন দেখা দিলে সহবাস থেকে বিরত থাকা । সেই সাথে সতর্ক থাকা । রোগ নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত হওয়া । ধর্মীয় জীবন যাপন গনোরিয়া থেকে খুব সহজেই পরিত্রান দিতে পারে ।

আরো পড়ুন

থাইরয়েড ক্যান্সার কত প্রকার । এর লক্ষণ ও চিকিৎসা ।

গনোরিয়ার চিকিৎসা

গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে সাধারণতো পেনিসিলিন ব্যবহারে রোগ সেরে যায় । সাধারণ গনোরিয়ার ক্ষেত্রে একক মাত্রার পর্যাপ্ত অ্যান্ট্রিমাইক্রোবিয়াল ওষধ ভাল কাজ করে । তবে, এটা যেহেতু ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ । তাই জটিল অবস্থায় এন্টিবায়োটিক খেলে নিশ্চিত কাজ করবে । তবে, যে ওষুধই ব্যবহার করেন না কেন, সেটা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে হতে হবে ।

পরিশেষে বলা যায়, গনোরিয়া যেহেতু যৌন বাহিত রোগ, সেহেতু বেপোরোয়া জীবন – যাপন এবং অবাধ যৌনাচার না করলে গনোরিয়া সহজেই প্রতিরোধ করা যায় । কিন্তু, কোন ভাবে যদি আক্রান্ত হয়েই যায় তবে , সময় ক্ষেপন না করে দ্রুত ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে । সঠিক চিকিৎসায় গনোরিয়া সম্পূর্ণ নির্মূল হয় ।

Related posts

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ, ঝুঁকি বেশি যাদের

jibondharaa

লিভারের যত্ন : লিভার রোগের উপসর্গ : লিভার রোগের কারণ

jibondharaa

কোষ্ঠকাঠিন্যর কারন ও প্রতিকার

jibondharaa

Leave a Comment