Image default
জীবনী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  উনবিংশ  শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক । সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন । সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ দখল ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন।  তিনি রচনা করেছেন শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক ও সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। অন্যদিকে বিদ্যাসাগর  ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। বিধবা বিবাহ ও নারীশিক্ষা  প্রচলনে তিনি অক্লান্ত সংগ্রাম করে গেছেন ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

একনজরে
 

জন্ম

২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০

বীরসিংহ গ্রাম, হুগলি জেলা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত

(অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়)

পেশালেখক, দার্শনিক,  পণ্ডিত,    অনুবাদক,  প্রকাশক,  সংস্কারক, মানবহিতৈষী
ভাষাবাংলা ও সংস্কৃত
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসংস্কৃত কলেজ (১৮২৮-১৮৩৯)
সাহিত্য আন্দোলনবাংলার নবজাগরণ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিবর্ণপরিচয় , কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী ব্যাকরণ কৌমুদী, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে), বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে)[১], অতি অল্প হইল(১৮৭৩), আবার অতি অল্প হইল (১৮৭৩), ব্রজবিলাস(১৮৮৪),

 

দাম্পত্যসঙ্গীদীনময়ী দেবী
মৃত্যু২৯ জুলাই ১৮৯১ (বয়স ৭০)

কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত

(অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে)

 

জন্ম
biddasagor-2824c999393ee0242.jpg
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছবি-সংগ্রহীত

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতার  মেদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ নামক গ্রামে ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর  জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভগবতী দেবী । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন ।

শিক্ষাজীবন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গ্রামের স্কুলে প্রথমিক শিক্ষা গ্রহন করেন । প্রথমে গাঁয়ের সনাতন পন্ডিত ও পরে কালিকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নিকট  তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন । ১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। মাত্র নয় বছর বয়সে ভর্তি হন কলকাতার সংস্কৃত কলেজে । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  ব্যাকারণে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং বিশেষ কৃতিত্বের জন্য মাসিক ৫টাকা বৃত্তি লাভ করেন । পরবর্তীতে একই কলেজ থেকে তিনি বিশেষ কৃতিত্বের সাথে  ইংরেজী শ্রেণির পাঠ শেষ করেন । কলেজের বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন । এই সংস্কৃত কলেজ থেকেই  অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় স্বরুপ  তিনি “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন ।

কর্মজীবন

১৮৪১ সালের ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন বিদ্যাসাগর । বেতন ছিল মাসে ৫০ টাকা । ১৮৪৬ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এই পদের দায়িত্বে ছিলেন । ১৮৪৬ সালের ৬ এপ্রিল পঁচিশ বছর বয়সে  সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেন ।

১৮৪৯ সালের ১ মার্চ পাঁচ হাজার টাকা জামিনে মাসিক ৮০ টাকা বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। একই বছর বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে স্থাপন করেন সর্ব্বশুভকরী সভা । ১৮৫০ সালের আগস্ট মাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহযোগিতায় সর্ব্বশুভকরী পত্রিকা প্রকাশ করেন ।

১৮৫০ সালের ৪ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়ামের কাজে ইস্তফা দিয়ে ৫ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন । ১৮৫১ সালের ৫ জানুয়ারি সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ ছাড়াও কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারির কার্যভারও গ্রহণ করেন। ২২ জানুয়ারি ১৫০ টাকা বেতনে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন । সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ সাধন করেন । ৯ জুলাই পূর্বতন রীতি বদলে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থদের সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন ।

১৮৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে বিধবা বিবাহ প্রচলন করার উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তাব-পুস্তক প্রকাশ করেন । একই বছরেরর অক্টোবর মাসে পর্যাপ্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণ সহ বিধবা বিবাহ প্রচলন হওয়া উচিত কিনা এবিষয়ে দ্বিতীয় প্রস্তাব-পুস্তক প্রকাশ করেন । একই সাথে বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহুসাক্ষর সংবলিত এক আবেদনপত্রও পাঠান । ১৮৫৬ সালের ১৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয় ।

এই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হুগলি জেলায় সাতটি ও বর্ধমান জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরের বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে হুগলিতে আরও তেরোটি, বর্ধমানে দশটি, মেদিনীপুরে তিনটি ও নদিয়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন । মোট ১৩০০ ছাত্রীসংবলিত এই বিদ্যালয়গুলি পরিচালনার জন্য তার খরচ হত মাসে ৮৪৫ টাকা ।

আরো পড়ুন

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহিত্যকর্ম
শিক্ষামূলক গ্রন্থ:
  • বর্ণপরিচয় (১ম ও ২য় ভাগ ; ১৮৫৫)
  • ঋজুপাঠ (১ম, ২য় ও ৩য় ভাগ ; ১৮৫১-৫২)
  • সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা (১৮৫১)
  • ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩)
অনুবাদ গ্রন্থ
হিন্দি থেকে বাংলা
  • বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭ ; লল্লুলাল কৃত বেতাল পচ্চীসী অবলম্বনে)
সংস্কৃত থেকে বাংলা
  • শকুন্তলা (ডিসেম্বর, ১৮৫৪ ; কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অবলম্বনে)
  • সীতার বনবাস (১৮৬০) – ভবভূতির উত্তররামচরিতম্‌ নাটকের আখ্যানবস্তু।[২০]
  • মহাভারতের উপক্রমণিকা (১৮৬০ ; ব্যাসদেব মূল মহাভারত-এর উপক্রমণিকা অংশ অবলম্বনে)
  • বামনাখ্যানম্ (১৮৭৩ ; মধুসূদন তর্কপঞ্চানন রচিত ১১৭টি শ্লোকের অনুবাদ)
ইংরেজি থেকে বাংলা
  • বাঙ্গালার ইতিহাস (১৮৪৮ ; মার্শম্যান কৃত হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচিত)
  • জীবনচরিত (১৮৪৯ ; চেম্বার্সের বায়োগ্রাফিজ অবলম্বনে রচিত)
  • নীতিবোধ (প্রথম সাতটি প্রস্তাব – ১৮৫১ ; রবার্ট ও উইলিয়াম চেম্বার্সের মরাল ক্লাস বুক অবলম্বনে রচিত)
  • বোধোদয় (১৮৫১ ; চেম্বার্সের রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে রচিত)
  • কথামালা (১৮৫৬ ; ঈশপস ফেবলস অবলম্বনে রচিত)
  • চরিতাবলী (১৮৫৭ ; বিভিন্ন ইংরেজি গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা অবলম্বনে রচিত)
  • ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯ ; শেক্সপিয়রের কমেডি অফ এররস অবলম্বনে রচিত)
ইংরেজি গ্রন্থ
  • পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্
  • সিলেকশনস্ ফ্রম গোল্ডস্মিথ
  • সিলেকশনস্ ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার
মৌলিক গ্রন্থ
  • সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৩)
  • বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫)
  • বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (প্রথম খন্ড ১৮৭১, ২য় খন্ড ১৮৭৩)
  • অতি অল্প হইল এবং ”আবার অতি অল্প হইল দুখানা পুস্তক (১৮৭৩, বিধবা বিবাহ বিরোধী পণ্ডিতদের প্রতিবাদের উত্তরে ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য’ ছদ্মনামে।)
  • ব্রজবিলাস, যৎকিঞ্চিৎ অপূর্ব্ব মহাকাব্য (নভেম্বর, ১৮৮৪) – “কবিকুলতিলকস্য কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য” ছদ্মনামে রচিত। বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধে ব্রজনাথ বিদ্যারত্নের রচনার প্রত্যুত্তরে লিখিত হয়।[২১]
  • রত্নপরীক্ষা (১৮৮৬)
  • প্রভাবতী সম্ভাষণ (সম্ভবত ১৮৬৩)
জীবন-চরিত (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)
  • শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪)
নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস (১৮৮৮)
  • ভূগোল খগোল বর্ণনম্ (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)
সম্পাদিত গ্রন্থ
  • অন্নদামঙ্গল (১৮৪৭)
  • কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ (১৮৫৩)
  • সর্বদর্শনসংগ্রহ (১৮৫৩-৫৮)
  • শিশুপালবধ (১৮৫৩)
  • কুমারসম্ভবম্ (১৮৬২)
  • কাদম্বরী (১৮৬২)
  • বাল্মীকি রামায়ণ (১৮৬২)
  • রঘুবংশম্ (১৮৫৩)
  • মেঘদূতম্ (১৮৬৯)
  • উত্তরচরিতম্ (১৮৭২)
  • অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ (১৮৭১)
  • হর্ষচরিতম্ (১৮৮৩)
  • পদ্যসংগ্রহ প্রথম ভাগ (১৮৮৮ ; কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে সংকলিত)
  • পদ্যসংগ্রহ দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯০ ; রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত অন্নদামঙ্গল থেকে সংকলিত)
চলচ্চিত্রায়ণ
  • তার লেখা অনুবাদিত গল্প অবলম্বনে তৈরী হয় ভ্রান্তিবিলাস চলচ্চিত্র ।
সম্মাননা

১৮৬৪ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির তিনি সভ্য নির্বাচিত হন । ভারত সরকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ১৮৮০ সালে “সি আই ই”  উপাধি পদান করে ।

মুত্যু

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন  । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ১০ মাস ।

আরো পড়ুন

কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী 

Related posts

টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী

jibondharaa

স্বামী বিবেকানন্দ এর জীবনী

jibondharaa

মুনীর চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

jibondharaa

Leave a Comment